৭১ টিভির যে ভিডিও ফাঁসে তোলপাড় ! (ভিডিও)

শামীম ওসমান- আইভীর টকশোর বিরতির সময়

shamim_aiviসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ টেলিভিশনের টকশোতে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভির মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ তর্ক-বিতর্ক সারাদেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বিশেষ করে বিরতিতে অফ-এয়ারে তাদের মাঝে উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্ত, অশ্লীল বাক্য বিনিয়মগুলো চায়ের টেবিলে আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও জনপ্রতিনিধি হয়ে তারা একে অপরের প্রতি যেসকল কুরুচিপূর্ণ বাক্য বিনিময় করেছেন সাধারণ মানুষ তাতে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একই সাথে অফ-এয়ারের এরকম একটি মুহুর্তের ভিডিও গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিতে পারে কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া টেলিভিশন টকশোতে কারা আমন্ত্রিত হচ্ছেন তা ঐ টকশোর প্রতিটি সদস্যকে আগেই জানানোর কথা থাকলেও সেদিন ৭১ টিভি কর্তৃপক্ষ শামীম ওসমানকে সেলিনা হায়াত আইভির উপস্থিতির বিষয়টি জানায়নি বলে টকশোতেই অভিযোগ করেন শামীম ওসমান। বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা।

http://www.youtube.com/watch?v=gpWMimYpvYY

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানের বিরতির সময়ে স্টুডিওর ভেতরের আলোচনার অংশ কোনভাবেই পাবলিকের কাছে আসতে পারে না। যেভাবেই হোক ঐ টেলিভিশনের কেউ না কেউ তা পাবলিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কে কাজটি করেছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের। তবে এর দায় দায়িত্ব অবশ্যই ঐ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, অফ এয়ারে দুই আলোচকের কথা-বার্তা এতটাই কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ছিল যা কোন মানুষই ভালোভাবে নেয়নি। অথচ গণমাধ্যম সেই কুরুচিপূর্ণ শব্দগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে, এটি গণমাধ্যম নীতি নৈতিকতার পরিপন্থী।
ড. গোলাম রহমান বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের দিক নির্দেশক। অথচ তারা রীতিমতো অশালীন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথা বলেছেন। এসকল জনপ্রতিনিধিদের থেকে জনগণ কোন কিছু শিক্ষা নিতে পারে না। রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক করার জায়গা গণমাধ্যম নয়। কিন্তু তারা তা করেছেন এটিও একটি অপরাধ। প্রত্যেক গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতি আছে। কিন্তু ৭১ টিভি যে কাজটি করেছে তা কোন নীতিতেই পড়ে না।
তিনি আরো বলেন, সরাসরি সম্প্রাচারিত অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আলোচনা যদি প্রাসঙ্গিকতা হারায় তাহলে তা উপস্থাপককেই ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া অনাকাঙ্খিত শব্দ উচ্চারিত হলে তা থেকেও সংশোধনের চেষ্টা থাকতে হবে। কিন্তু ঐ টকশোতে উপস্থাপক সেরকম বিচক্ষণতা দেখাতে পারেন নি।
সাংবাদিক নেতা ও বিএফইউজে একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অফ-এয়ারের ভিডিও প্রচার করা উচিত হয়নি। যেহেতু ঐ ভিডিওতে তাদের নিজস্ব লোগো ছিল তাই অপরাধটি আরো গুরুতর। অফ-এয়ারের ভিডিও বাইরে আসতে পারে না, এই কাজটি ৭১ টিভি কর্তৃপক্ষ ঠিক করেনি। আর জনপ্রতিনিধি হয়ে তারা অন এয়ারে যে ভাষায় কথা বলেছে তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী বলেন, অনুষ্ঠানে কারা আলোচনা করবেন তা প্রত্যেক আলোচকদের আগেই না জানিয়ে ৭১ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ প্রথমেই ভুল করেছেন। অনুষ্ঠানে কোন আলোচক তার বিপরীতে থাকা আলোচকের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে অনিচ্ছুক থাকতেই পারেন। যদি এ বিষয়ে তাদের আগে না জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর আগে তাদের মুখোমুখি করানো হয় তাহলে বিষয়টির স্বচ্ছতা থাকে না। ঐ অনুষ্ঠানের আলোচক শামীম ওসমান তার নানা কর্মকান্ডের জন্য আগে থেকেই বিতর্কিত। তার ভাষা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে। তিনি একাধিকবার সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তার এলাকায় হুমকি, জবরদখলের অসংখ্য খবর প্রতিনিয়তই প্রচারিত হয়। তার ভাষা শালীন ও মার্জিত হবে তা আশা করাও ঠিক না। কিন্তু যেহেতু গণমাধ্যম তাও আবার সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান তাই সাংসদকে শালীনতার পরিচয় দেয়া উচিত ছিল।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, টেলিভিশনের অফ এয়ারের ভিডিও ফুটেজ বাইরে আসতে পারে না। এটি সাংবাদিকতা নীতির পরিপন্থী। ৭১ টেলিভিশন যে কাজটি করেছে তা ঠিক করেনি। এর দায় ৭১ টিভি কর্তপক্ষকেই নিতে হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভিকে টিভি চ্যানেলের টকশোতে যেভাবে শামীম ওসমান অশালীন ও অসৌজন্যমূলক ভাষায় আক্রমণ করেছেন তা ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ওই তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভি যখন ত্বকী ও সাত খুনের বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান তখন মেয়রের ব্যক্তিগত চরিত্র ও পরিবার নিয়ে অশালীন ও কাল্পনিক মন্তব্য করে হত্যার বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিবৃতিদাতারা এ ঘৃণ্য আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শামীম ওসমানের এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বর্বর আচরণের জবাব জনগণ একদিন অবশ্যই দেবে। ইতিহাসের দায় থেকে তিনি কখনোই মুক্তি পাবেন না।
টকশোতে এই দুই আওয়ামী লীগ নেতার তর্ক-বিতর্কে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।