সুরমা টাইমস ডেস্কঃ জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সিকে রাজধানীর ল্যাবএইড বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া এই শিল্পীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রবিবার সকালে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
ন্যান্সির ভাই জনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে তাকে ডা. ফরহাদের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন ন্যান্সি। তবে তার অবস্থার উন্নতি না হলে শনিবার রাতে তাকে নিয়ে ঢাকায় উদ্দেশে রওনা দেয়া হয়।
ন্যান্সি চিকিত্সকদের জানিয়েছেন, শনিবার বেলা একটা থেকে দেড়টার মধ্যে দুই দফায় মোট ৬০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছেন তিনি। প্রথম দফায় ৪০টি ও দ্বিতীয় দফায় ২০টি ট্যাবলেট খান তিনি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সা কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ট্যাবলেট খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় বিষক্রিয়া রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। কাজেই পাকস্থলী ‘ওয়াশ’ করা সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী।
ধৈর্যশীল স্বভাবের মেয়ে ন্যান্সির আত্মহত্যার চেষ্টার খবরে তোলপাড় চলছে শ্বশুরালয় ব্রক্ষপুত্র পাড়ের ময়মনসিংহ আর পিত্রালয় সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের নেত্রকোণায়। কেনো তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন? কী এমন কারণ? এসব প্রশ্ন এখন সর্বত্র।
এ নিয়ে পুলিশ, পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠসূত্রগুলো এখন পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে কিছু বলছে না। বরং পরস্পরের বিপরীত কথাবার্তা ও ধারণায় এ নিয়ে রহস্যজট ঘনীভূত হচ্ছে। পুলিশের দাবি, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ আর পরিবারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতায় ভক্তদের মাঝে সন্দেহ-সংশয় তীব্র হচ্ছে। জনমনেও চলছে জল্পনা।
বিভিন্ন সূত্র মনে করছে, কয়েকটি কারণে আত্মহত্যার করতে চেয়েছিলেন ন্যান্সি। এর মধ্যে স্বামী ময়মনসিংহ পৌরসভার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজিমুজ্জামান জায়েদের সঙ্গে মান-অভিমান অন্যতম। অভিমানের সূত্র ধরেই আত্মঘাতী এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন তিনি। এ প্রসঙ্গে নেত্রকোণা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুল আলম জানান, স্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন ন্যান্সি।
এ বিষয়ে স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শুরু থেকেই তিনি বিষয়টি ‘গোপন’ করার চেষ্টা করেন। ঢাকায় নেওয়ার সময়ও বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এখন কিছু বলবো না। সময় হোক, তখন বলবো।’
কিছুদিন আগে ন্যান্সির মা জোৎস্না হক মারা যাওয়ার পর ন্যান্সির বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে দূরত্ব তৈরি হয় বাবা-মেয়ের। এ ছাড়া স্বামী জায়েদ ও শ্বশুরবাড়ি আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল ন্যান্সির ওপর। এসব পারিপার্শ্বিক কারণ তার জীবনে জটিলতার সৃষ্টি করেছে বলে অভিমত সূত্রের।
সূত্র জানায়, স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদ ও দুই মেয়ে রোদেলা আর নায়লাকে নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ-ঢাকা যাতায়াতের মধ্যে থাকতেন ন্যান্সি। সম্প্রতি ঢাকার মগবাজারে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন ন্যান্সি। নেত্রকোণা ছোটগারা এলাকায় তার একটি দু’তলা বাসা রয়েছে। এ বাসায় মাঝে মধ্যে তিনি আসতেন। আবার চলে যেতেন।
১৫ আগস্ট বিকেলে ন্যান্সি নেত্রকোণার ওই বাসায় আসেন। এ সময় তার সঙ্গে স্বামী জায়েদ ছিলেন না। ১৬ আগস্ট দুপুরে ব্রোমাজিপাম গ্রুপের ৪০টি জিওনিল ট্যাবলেট ও ঘণ্টাখানেক পর আরো ২০টি ল্যাক্সিল ট্যাবলেট খান। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পরে রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) বিভাগীয় প্রধান ডা. আ.ন.ম. ফজলুল হক পাঠান জানান, ন্যান্সির অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এ কারণেই তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রথম স্বামী সৌরভের সঙ্গে প্রায় ৬ বছরের সংসার জীবনের করুণ বিচ্ছেদের পর ফের বিয়ের ছাদনাতলায় যান ন্যান্সি। গত বছরের ৪ মার্চ বিয়ে করেন ময়মনসিংহ পৌরসভার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজিমুজ্জামান জায়েদকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে নতুন অতিথি নায়লা। আর রোদেলার বাবা সৌরভ।
ন্যান্সির গাওয়া ‘ছিল না যাবার কথা’ গানের ভিডিও লিংক :
হাবিব ও ন্যান্সির গাওয়া ‘এতদিন কোথায় ছিলে’ গানের ভিডিও লিংক: http://www.youtube.com/watch?v=cB82CgtKiOo
তপু ও ন্যান্সির গাওয়া ‘নিমন্ত্রণ’ গানের ভিডিও লিংক : http://www.youtube.com/watch?v=OTNB5hIdxgU