আজ শোকাবহ ১৫ আগষ্ট
ছামির মাহমুদঃ আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির বেদনার দিন। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই সুত্রে গাঁথা। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কলঙ্কিত দিন। বাঙালির ইতিহাসে কালিমালিপ্ত ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও স্বাধীনতা-সংগ্রামের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকজন চক্রান্তকারী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি আজ তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করবে। দিনটি উপল্পক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ইতিহাসের নৃশংসতম ও গভীর মর্মস্পর্শী সেই রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের আজ ৩৯তম বার্ষিকী। রাজনীতির সঙ্গে সামান্য সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী এবং শিশুদেরও সেদিন হত্যা করেছে ঘাতকেরা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও ঘাতকের বুলেটে নিহত হন তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব; ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল; পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল; ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল।
দেশের বাইরে থাকায় ঘাতক চক্রের হাত থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত সেই সব খুনি দীর্ঘদিন ছিল বিচারের আওতাবহির্ভূত। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে প্রথম দফায় মতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সচল হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালতের রায় কার্যকর হয়। খুনিদের কয়েকজনের ফাঁসি হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে আমাদের অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
১৫ আগস্টকে সামনে রেখে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এবারো সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে দিবসটির বিভিন্ন কর্মসূচি।
সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এ ছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এ উপলে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং সংবাপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এদিন সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডির ৩২নং রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হবে মোনাজাত ও কোরআন তেলওয়াত। এ ছাড়াও ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী জাতির জনকের পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য শহীদের বনানী কবর স্থানে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুস্পস্তবক অর্পন শেষে ফাতেহা পাঠ ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
‘বঙ্গবন্ধু’কে নিয়ে অ্যাপ : বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি অ্যাপিকেশনের স্ক্রিন শটবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অ্যাপ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেড তৈরি করেছে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপিকেশন। অ্যাপিকেশন তৈরির উদ্যোগটি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যাপিকেশনটি উদ্বোধন করবেন বলে অ্যাপ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
অ্যাপিকেশনটির মেন্যুতে থাকছে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, ভাষণ, সাাত্কার, চিঠি, ছবির গ্যালারি এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির পিডিএফ সংস্করণ, গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষণ, ভিডিও, বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা অনেকগুলো চিঠি, ছয়টি দুর্লভ সাক্ষাৎকার , বঙ্গবন্ধুর কর্মময় এবং ব্যক্তিজীবনের ১১৩টি দুর্লভ ছবি পাওয়া যাবে এই অ্যাপ্লিকেশনে।