গোায়াইনঘাটে পাহাড়ী ঢলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত

gowainghat-11সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ অবিরাম বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বেড়েছে নদীর পানি। সীমান্ত নদীসহ জেলার সবকয়টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বেশ কিছু স্থানের নিমাঞ্চল পাবিত হয়েছে। এদিকে, গোয়াইনঘাটে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সর্বত্র তলিয়ে গেছে, অধিকাংশ মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি। জন-জীবন বির্পযস্থ, উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দু‘টি পাথর কোয়ারীসহ সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় লাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পিয়াইন ও সারী নদী‘র ঢলে উপজেলার সর্বত্র প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া সারী-গোয়াইনঘাট সড়কের লাফনাউট থেকে বার্কীপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ও জাফলং থেকে গোয়াইনঘাট সড়কের চা বাগান এলাকার রাস্তা পানির নীচে রয়েছে।
সুনামগঞ্জ থেকে কুলেন্দু শেখর জানান, গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে তাহিরপুর উপজেলার ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩৫সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ঘন্টায় ১৯২মি.লি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার সোহালা, লামাপাড়া, ইয়বপুর, আমরিয়া, ছত্রিশ, ইসলামপুরসহ ২০টি গ্রাম পাবিত হয়েছে। ওই গ্রামগুলির গ্রামীন সড়কের ব্যাপক তি হয়েছে। গ্রামগুলির অধিকাংশ পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে মাছ। তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশ্বম্ভরপুর প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি পাত ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে উপজেলার সুলকাবাদ,বাদাঘাট (দঃ) ও ফতেপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কাচা ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, বীজ তলার ক্ষতি হচ্ছে এবং রাস্তা ঘাট ডুবে জনযোগাযোগে বিন্নিত হচ্ছে। এ ভাবে বৃষ্টি পাত ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশংকা রয়েছে। ধোপাজান চলতি নদী ও যাদুকাটা নদী দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ী ঢলের পানি উপচে পরে এবং অতিরিক্ত বৃষ্টি পাতে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ী ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যায় মাঠ, রাস্তা প্রাঙ্গন, ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন ও রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান, ধর্মীয় প্রতিষ্টান, কমিনিউটি কিনিক সহ বিভিন্ন রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ায় জনযোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুলকাবাদ ইউ/পি চেয়ারম্যান তানজিমা মেহজেবিন জানান ঢলুরা, আদাং চালবন্দ, ভাদেরটেক সহ বিভিন্ন গ্রামে ২০/২৫ টি কাচা ঘরবারি, গাছ পালা ও গ্রামীন রাস্তা ঘাটের ক্ষতি হয়েছে,এ ছাড়া গরিব বারকী শ্রমিকদের কিছু নৌকা ক্ষতি হয় । বাদাঘাট (দঃ) ইউ/পি চেয়ারম্যান অ্যাডঃ মোঃ ছবাব মিয়া জানান, যাদু কাটা পাহাড়ী নদীর ঢলে ইউনিয়নের বসন্তপুর, ঘন্ডমারা, সিরাজপুর -বাগগাও, পেটনা গ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানিতে কাচা ঘরবারি, গাছ পালা ও বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে । ঢলের পানি বাড়ছে, এ ভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামছুজ্জামান শাহ জানান, আমার ইউনিয়নটি সপচে নি¤œাঞ্চল বন্যার ফলে। ঘাগটিয়া, ফুলবরি, শাহাপুর, ক্ষিদ্দরপুর, বাড়কুড়ি, রায়পুর,বাহাদুরপুর, বিশ্বম্ভরপুর নতুনহাটি কৌয়া সহ বিভিন্ন গ্রামে কাচা ঘর বাড়ি, রাস্তা ঘাট ক্ষতি হয়েছে । এছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ও রোজী রোজগার না থাকাই জন জীবন দুর্ভোগ পোহাছে ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মোহাম্মদ আব্দল্লাহ আল মাহমুদ সুলকাবাদ ইনিয়ানের ধোপাজান চলতি নদীর পাহাড়ী ঢলে ক্ষতি গ্রস্ত এলাকা পরিদর্ষন করেন । তিনি বলেন, অতি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢলে কিছু ঘর বাড়ি– ভেঙ্গেছে এবং গাছ পালার ক্ষতি হয়েছে, এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি রয়েছে।
গোয়াইনঘাট থেকে জাকির হোসেন জানান, পাহাড়ী ঢলের তোড়ে উপজেলার নয়াগাঙ্গের পাড় ও বাউরবাগ হাওড় গ্রামের নদীর তীরবর্তী বসত বাড়ি ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার নদীর তীর সংরণ ও ফসলী জমি রায় বেড়ীবাধ গুলোও রয়েছে হুমকির মূখে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বোনা আমন ও বীজতলা এবং রোপা আউশ ও ইরি েেতর ব্যাপক তির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারী দু‘টি বন্ধ রয়েছে। এতে লাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অন্যদিকে পাথর ব্যবসায়ী ও পাথর বহনকারী যানবাহনের মালিকদেরও ব্যাপক তির আশংকা রয়েছে। পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে আসা ঢলে উপজেলার পুর্ব জাফলং ইউনিয়ন, আলীরগাঁও ইউনিয়ন, রুস্তমপুর ইউনিয়ন, ডৌবাড়ী ইউনিয়ন, লেঙ্গড়া ইউনিয়ন, তোয়াকুল ইউনিয়ন, নন্দীরগাও ইউনিয়ন সর্বত্র পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এতে হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শণকালে দেখা যায় বেশির ভাগ গ্রামের বাড়ী ঘর ও রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তাই বিশেষ প্রয়োজন থাকলেও বাড়ী থেকে লোকজন বাহির হতে পারেনি। এরির্পোট লেখা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া উপজেলা সদরের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আরও পানি বৃদ্ধি হলে বড় ধরনের তি হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে সাথে সাথে ত্রান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি জরুরি সভা করেছি এবং পি.আই.ও অফিসকে কন্ট্রোল রুম হিসেবে রেখেছি। এছাড়া প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানদের পর্যাপ্ত পরিমান শুকনো খাবার সংরণ রাখার জন্য বলা হয়েছে।