রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও জয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব

ড. মোমেন ও ড. সিদ্দিকের যুদ্ধ এখন ঢাকায়

Joy-and-Abdul-Hamidনিউইয়র্ক থেকে এনা: রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপদেষ্টা সজিব ওয়জেদ জয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সেই দ্বন্দ্বের মূল কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সজিব ওয়াজেদ জয়ের অনুরোধ রাখেননি। রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ মিশনে আমেরিকায় এসেছিলেন গত ১৬ জুন। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ মিশনের পাশাপাশি জাতিসংঘেরও তাগিদ ছিলো। সেই মিশনটি ছিলো মধ্যবর্তী নির্বাচন ঠেকানো বা জাতিসংঘ যেন মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ না দেয়। শেখ হাসিনার সরকার যেন ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারে। যদিও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. একে মোমেন মিডিয়াকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করেছেন। তিনি মিডিয়াকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগত সফরে নিউইয়র্কে আসছেন। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূত আসল ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠককে ব্যক্তিগত বলে চালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ১৯ জুন বিকেলে জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে রাষ্ট্রপতির বৈঠকে প্রমাণিত হয়েছে এটা আনুষ্ঠানিক বৈঠক। সূত্র আরো জানায়, এটা ব্যক্তিগত সফর হবে কিভাবে? রাষ্ট্রপতি যখন ভলিবিয়ায় আসেন তখন তার সফর সঙ্গী ছিলো ৩৪ জন। কিন্তু আমেরিকায় আসার পূর্বে সেই ৩৪ জন ছাড়াও ঢাকা থেকে আরো ৮ জন আসেন। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি যদি ব্যক্তিগত সফরেই আসবেন তাহলে এত বড় বহর কেন? আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলে জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের পতাকাই বা থাকবে কেন? সূত্র জানায়, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সাথে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের পূর্বে ফটো শেসন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের বের করে দেয়া হয়। সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার পর বান কি মুন রুদ্ধধার বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতির সাথে। এই বৈঠকের মেয়াদকাল ছিলো প্রায় ৩০ মিনিটের মত।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সাথে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তার সংবাদ পরিবেশন করা হয় রাষ্ট্রদূত এ কে মোমেন এবং রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব এহসানুল হক হেলালের বরাত দিয়ে। বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের যে তথ্য দিয়েছেন সেই তথ্যের ভিত্তিতেই সাংবাদিকরা সংবাদ পরিবেশন করেন। সেই সংবাদেও রাষ্ট্রদূত বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। যে কারণে জাতিসংঘের ঢাকা অফিস আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করে। সেই বিবৃতিতে বলা হয় জাতিসংঘের মহাসচিব রাষ্ট্রপতিকে বিরোধী দলগুলোর সাথে সংলাপ করে একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছিলেন। যদিও রাষ্ট্রপতি নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের হ্যান্ড হায়াতের অবস্থানকালে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে বৈঠকের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করেছেন। এই রকমই এক বৈঠকে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আমাকে সংলাপের ব্যাপারে বলেছিলেন। আমি বান কি মুনকে জানিয়েছি, বিরোধী দলের সাথে সংলাপ যে কোন সময় হতে পারে। তবে শর্ত দিয়ে নয়। তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষে বিরোধী দলের হরতাল এবং সংহিস রাজনীতি পছন্দ করেনি। তিনি বলেন, আমি মনে করি বিএনপির নির্বাচন বর্জন করা সঠিক হয়নি। বিএনপির নির্বাচন করা উচিত ছিলো। কারণ বাংলাদেশে এখন কারচুপি করা কঠিন ব্যাপার।
এ দিকে রাষ্ট্রপতি ১৬ জুন নিউইয়র্কে আসার পর ১৭ জুন ছিলো সর্বজনীন সংবর্ধনা সভা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের নেতৃত্বে এই সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। রাষ্ট্রপতি প্রথমে সম্মতিও দিয়েছিলেন এই সভায় উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা সভায় রাষ্ট্রপতি যাননি। আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশ রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা সভায় চিহ্নিত রাজাকারকে রাখার সমলোচনা করে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। দীর্ঘ দিন থেকেই আওয়ামী লীগের একটি অংশ ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সংগঠন ও গঠনতন্ত্র বিরোধী অভিযোগ আনেন। সেই সাথে অভিযোগ করেন ড. সিদ্দিকুর রহমান দেশে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত। সাধারণ সম্পাদকও সভাপতির মত অধিকাংশ সময় বাংলাদেশে থাকেন। একটি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি ড. এ কে মোমেন আওয়ামী লীগকে সংবর্ধনা সভার অনুমতি দিলেও তিনিই আবার সিদ্দিক- সাজ্জাদ বিরোধীদের সুযোগ করে দেন রাষ্ট্রপতির সাথে মিলিত হবার। ড. এ কে মোমেনের বাসায় রাষ্ট্রপতির সৈজন্যে যে ভোজ দেয়া হয় সেখানে সিদ্দিক- সাজ্জাদ বিরোধীদের নিমন্ত্রণ করা হয়। সেই সুযোগটি তারা গ্রহণ করে। তারা রাষ্ট্রপতিকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সংবর্ধনা কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাদ দিয়ে চিহ্নিত রাজাকার এবং বিএনপির নেতাদের রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিও বুঝতে পারেন যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি হবে বিতর্কিত। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির সিকিউরিটি সূত্রে জানা যায়, যে অডিটোরিয়ামে রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা দেয়া হবে সেই অডিটোরিয়ামে সামনে কে কারা বিক্ষোভ করার অনুমতি নিয়েছেন। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতির সেখানে যাওয়া উচিত হবে না। সিকিউরিটির রিপোর্ট এবং বিতর্কের কারণে রাষ্ট্রপতি সেই সংবর্ধনায় যাননি।
এ দিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিন সংবর্ধনায় যাচ্ছেন না। ঐ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন ওয়াশিংটনে (১৭ জুন) অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের। সিদ্দিকুর রহমানের অনুরোধে ১৭ জুন বিকেলে সজিব ওয়াজেদ জয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে ফোনে অনুরোধ করেছিলেন ঐ সংবর্ধনা সভায় যাবার জন্য। সজিব ওয়াজেদ জয়ের ফোনে অনুরোধ রাখেন নি রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি রাগান্বিতও হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জয়কে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি বিতর্কিত অনুষ্ঠানে যাবেন না। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি সজিব ওয়াজেদ জয়কে বলেছিলেন, আমি রাষ্ট্রপতি আমার সিদ্ধান্ত আমি নেব। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি বেশ বিচলিত ছিলেন ঐ দিন। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। সজিব ওয়াজেদ জয় নিজে ব্যর্থ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকেও রাষ্ট্রপতিকে ফোন করিয়েছিলেন ঐ অনুষ্ঠানে যাবার জন্য। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঐ কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, আমি কোন বিতর্কিত অনুষ্ঠানে যেতে চাই না। প্রশ্ন উঠেছে কোন ক্ষমতাবলে সজিব ওয়াজিদ জয় রাষ্ট্রপতিকে অনুষ্ঠানে যাবার জন্য ফোন করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে জয়ের কী এমন সম্পর্ক যে একটি অনুষ্ঠানে যাবার জন্য সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষ হয়ে জয় রাষ্ট্রপতিকে ফোন করেন। আর সিদ্দিকুর রহমানই বা মামার ভয় দেখাতে যান কেন? এটি এখন নিউইয়র্কে আলোচার বিষয়বস্তুতে পারিণত হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপির শাসনামলে তারেক রহমান যেভাবে একটি প্যারালাল সরকার গঠন করেছিলেন। সজিব ওয়াজেদ জয়ও একইভাবে আরেকটি প্যারালাল সরকার গঠন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি স্পর্শকাতর অফিসেই তার লোক বসানো রয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি সব কিছু কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা সভায় নিতে ব্যর্থ হবার পর সজিব ওয়াজেদ জয় এবং সিদ্দিকুর রহমান ইতিমধ্যেই ঢাকায় চলে গেছেন। রাষ্ট্রদূত ড, এ কে মোমেনের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেনকেও ঢাকায় তলব করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় পেঁছেছেন। এই দুই জনের যুদ্ধ এখন ঢাকাতেই চলছে। একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর অনুষ্ঠান শেষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের দেখা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। ঐ সময় শেখ হাসিনা সিদ্দিকুর রহমানকে বলে দিয়েছেন অবসরে যাওয়ার জন্য।