ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী হুমকী
ভারত আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ও সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করেছে, একথা যেমন সত্য, এজন্য আমরা ভারতের প্রতি সব সময় বন্ধুত্বসূলভ আচরন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনও কার্পন্য করিনি একথাও সত্য, বাংগালীরা অকৃতজ্ঞ জাতি নয়। “নকল সোনা বা ১৬ আনার পরিবর্তে ৪ আনা সোনা দিয়ে হলেও ক্রেষ্ট বানিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে যারা সাহায্য সমর্থন দিয়েছিল ৪২ বছর পর শেখ হাসিনার সরকার তাদেরকে সম্মানিত করেছে”। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পর যে দখলদার পাকিস্তানী সৈন্যরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাস যাবৎ নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংগালীদের উপর যে অমানবিক, অমানষিক ও পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিল সেই পাকিস্তানী ৯০ হাজার সৈন্যকে আত্মসমর্পনের পর বাংলার মাটিতে জীবিত আটক করার পরেও ভারতের কারণে ( যুদ্ধবন্দি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জেনেভা কনভেনশানের দোহাই দিয়ে ) বাংগালীরা তাদের বিচার করতে পারেনি। ভারত তাদেরকে বন্দি করে ভারতে নিয়ে যায় এবং “ভারত-পাকিস্তানের ভবিষ্যত ও বৃহত্তর সম্পর্কের” খাতিরে ভারতের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শিমলা বৈঠকের পর বাংলাদেশসহ কথিত তৃপক্ষীয় ( আসলে পাক-ভারত ) চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে পাকিস্তানের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ঐ সময় যদি ৯০ হাজার সৈন্যকে ফেরত দেওয়া না হত তবে অন্তত সরাসরি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের মধ্যে চিহ্নিত ১৯৫ জনের বিচার করা যেত এবং বাকীদের আটকে রেখে পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের পাওনা পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য সম্পদ ফেরত পেতে , মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরন আদায় করতে এবং আটকে-পড়া অবাংগালী(পাকিস্তানী)দের ফেরত নিতে দড় কষাকষি করা যেত। কিন্তু ভারত আমাদেরেকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল বলে ঐ সময় ভারতের ঐ একতরফা সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগকে বাধা না দিয়ে অর্থাৎ এত বড় ত্যাগ স্বীকার করেও আমাদেরকে তা হজম করে নিতে হয়েছিল। এটাও কি ভারতের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা নয় ? ভারত-প্রেমী ( ভারতের স্বার্থের কাছে নি:শর্ত আত্মসমর্পনকারী ) দালাল গোষ্টি বা মহল আজ ৪২ বছর পর ভারতের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলে ঐ সময় ৯০ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যকে আটকে রেখে বিচার করলে পাকিস্তান শেখ মুজিবকে জীবিত ফেরত দিতনা বা পাকিস্তানে বসবাসকারী বাংগালীদের মেরে ফেলত। অথচ ঐ সময় এধরনের কোন শর্ত বা দড় কষাকষির পর্বই শুরু হয়নি বা এধরনের প্রশ্ন উঠার আগেইতো ভারত শিমলা বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছিল এবং শিমলা চুক্তির আগেইতো শেখ মুজিব বাংলাদেশে জীবিত ফেরত এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, তখন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য শিমলায় অবস্থানরত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন যখন শেখ মুজিবকে জানালেন পাকিস্তানের সৈন্যরা বাংলাদেশে জঘন্য অপরাধ করেছে তাদেরকে ছাড়া যাবেনা বা ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবেনা, জবাবে তখন শেখ মুজিব তাকে বল্লেন, “ছেড়ে দাও, বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দাও বাংগালীরা মহান জাতি, তারা ক্ষমা করতেও জানে।” তার অর্থ হলো এই – বাংলাদেশে বাংগালীদের উপর যারা সরাসরি ও প্রত্যক্ষভাবে অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছিল “ভারত-পাকিস্তানের সুসম্পর্কের খাতিরে” তাদেরকে ক্ষমা করার মাধ্যমে “মহান” হয়ে বা “মহত্ব” দেখিয়ে প্রকৃত অর্থে ভারতকে সন্তুষ্ট করা । অপরদিকে সংগত কারণেই প্রশ্ন করা যায়, ঐ সময় যারা ( বাংগালী যুদ্ধাপরাধীরা ) পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে বাংগালীদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালাতে সহায়তা করেছিল বা করতে বাধ্য হয়েছিল দেশ গড়ে তোলার স্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে শেখ মুজিবের “মহত্বের” অনুপ্রেরনায় তাদেরকেও ক্ষমা করে দিয়ে বাংগালীরা বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদেরকে “মহান” হিসেবে আবারও পরিচয় করানোর সুযোগ এখন ( ৪২ বছর পর ) হাতছাড়া করছে কেন ? আসলে আমরা নিজেদের স্বার্থে যখন যা ইচ্ছা তাই করি ও বলি। শুধু তাই নয়, ঐ সময় যে ১৯৫ জন সৈন্যকে চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদেরকেও ভারতের বা বংলার মাটিতে বিচার না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল পাকিস্তান তাদেরকে পাকিস্তানে নিয়ে বিচার করবে ( বাংগালীদের সাথে কি হাস্যকর তামাশা ! ), যে পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কঠোর ও নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে চেয়েছে, সে প্রচেষ্টায় তাদের যে সেন্যরা অংশগ্রহন করেছিল পাকিস্তানই তাদের বিচার করবে – এটা কি কখনও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে ? অর্থাৎ যে বাবা তার ছেলেকে অন্যের বাড়িতে চুরি করতে পাঠিয়েছে, চুরি করার সময় ধরা পড়ার পর সে বাড়ির লোকেরা যদি তার বিচার করতে উদ্যত হয় তখন যদি তার বাবা বলে আমার ছেলেকে আমার কাছে ফেরত দাও, আমিই তার বিচার করব, এটা কি কেউ বিশ্বাস করবে, পাকিস্তানের সৈন্যদের বেলায় তাই হয়েছিল। ভারতের কাছে পাকিস্তানের এই অবাস্তব ও অপ্রত্যাশিত আবদারও বাংগালীদের তখন হজম করে নিতে হয়েছিল। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সহায়তা করেছিল বলে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ভারতের ইচ্ছা ও মনোভাবের প্রতি আমাদের অনুগত ও কৃতজ্ঞ থাকার যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং ভারত ( ও তার এদেশীয় দালাল গোষ্টি ) চায় বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বা দেশের যে কোন ক্ষতি হলেও তা ( ভারতের প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা ) যেন আজীবন অব্যাহত থাকে। এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশকে কার্যত আষ্টে-পিষ্ঠে বেঁধে রাখার উদ্দেশ্যেই ভারত বাংলাদেশকে ২৫ বছর মেয়াদী কথিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী বা শান্তি চুক্তি করতে উৎসাহিত তথা বাধ্য করেছিল। ২৫ বছর পার হওয়ার পর এ চুক্তি নবায়নের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে চাপ থাকা সত্তেও বাংলাদেশে এর তীব্র সমালোচনা থাকায় বাংলাদেশের শাসকরা আর তা করতে উৎসাহিত হয়নি।
ভারত আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল – এটা অনস্বীকার্য, কিন্তু কেন করেছিল বা করতে বাধ্য হয়েছিল এ প্রশ্ন কি কখনও খতিয়ে বা তলিয়ে দেখা হয়েছে ? যদি হত তবে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের আজীবন কৃতজ্ঞ ও অনুগত না থাকার কারণগুলোর যৌক্তিকতা বা যথার্থতা খুজে পাওয়া যেত। ১৯৪৭ সালে দখলদার বৃটিশ শাসকদের কাছ থেকে যখন মহাভারত বা মোঘল সাম্রাজ্য ভারতবর্ষ মুক্ত হয়েছিল তখন হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান নামে দুটো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। ভারত বা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনগন যদি প্রকৃত অর্থে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও নীতিতে বিশ্বাসী হত তবে ঐ সময় ধর্ম ভিত্তিক দ্বিজাতি তত্তের ( হিন্দু ও মুসলমান ) ভিত্তিতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান নামে দুটো দেশের পরিবর্তে ভারত বা ভারতবর্ষ নামে একটা দেশই স্বাধীন হত। তবে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি হিসেবে পাকিস্তানের জন্ম বা স্বাধীনতাকে ভারতীয় নেতারা তখন মেনে নিলেও পূর্ব বাংলার ( নবাব সিরাজদৌল্লার বাংলার ) মুসলমান বিশেষ করে বাংগালী মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি হিসেবে ভারতের পূর্বাঞ্চলকে ( পশ্চিম বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়সহ ) ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের আর এক অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানকে মেনে নিতে চায়নি, ভারতীয় নেতাদের তীব্র বিরোধীতা ও বৃটিশ শাসকদের সাথে তাদের সফল কূট কৌশলের কারণে তখন বৃটিশরা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ম্যাপ বা আয়তন থেকে ভারতের উল্লেখিত রাজ্যগুলোকে বাদ দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের যে আয়তন তা পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে মেনে নিতে পশ্চিম পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্ন্াহর নেতৃত্বাধীন তখনকার মুসলিম নেতাদের ( যাদের মধ্যে পূর্ব বাংলার শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হক , হোসেন শহীদ সোহরোয়ার্দী ও স্যার সলিমুল্লাও ছিলেন ) উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শেষ পর্যন্ত তা মেনে নিতে বাধ্য করে। তারপরেও ভারতীয়রা বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ব পাকিস্তান করার তীব্র বিরোধিতা করেছিল, বঙ্গ-ভঙ্গ রোধ আন্দোলনের নামে তখন ভারতীয়রা বাংলাকে ভারতের অংশ হিসেবে ধরে রাখতে বৃটিশ ও ভারতীয় নেতাদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির ৬৬ বছর ( পূর্ব পাকিস্তানের ২৩ বছর ও বাংলাদেশের ৪৩ বছর ) পর এখনও পশ্চিম বাংলার বাংগালীদের একটা অংশ বঙ্গ সেনা নামে স্বাধীন বঙ্গভূমি প্রতিষ্ঠা করে কার্যত বাংলাদেশের কয়েকটা জেলাকে পশ্চিম বাংলার সাথে একীভূত করার অপচেষ্টায় ব্যর্থ প্রয়াস বা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মকে মেনে নিলেও ভৌগলিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১২০০ মাইল দূরে ( এক অর্থে বিচ্ছিন্ন ) আয়তনের তিন চতুর্থাংশ দিক দিয়ে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত পূর্ব পাকিস্তান এক সময় পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের সাথে একীভূত হয়ে যাবে বলেই ভারতীয় নেতারা বিশ্বাস ও প্রত্যাশা করত। যে কারণে ১৯৭১ সালে বাংগালীরা যখন পাকিস্তান থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল তখন ভারতের কোন কোন জাতীয় নেতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তাদের সে স্বপ্ন পূরনের শুভ সূচনা হিসেবে মনে করে পুলকিত হয়েছিল। ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপি’র প্রবীন নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীতো ১৯৭১ সালে দিল্লিতে প্রকাশ্যেই আস্ফালন করে বলেছিল, “ অখন্ড ভারত কায়েম করার এটাই উপযুক্ত সময় ”। কোন কোন স্বার্থান্বেষী ভারতীয় মহল তখনকার ইন্দিরা সরকারকে এও বুঝাতে চেয়েছিল পাকিস্তানকে দুই টুকরো করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে আসলে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে দুটো পাকিস্তানের জন্ম হবে, তখন ভারতকে দুটো পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতে হবে, তার চেয়ে ভাল হবে এই সুযোগে ( পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংগালীদের সশস্ত্র যুদ্ধের সুবাদে ) পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের সাথে মিশিয়ে ফেলা।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামী মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীকার তথা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতি ভারতের কোন নৈতিক সমর্থন ছিলনা এবং কোন নৈতিক অবস্থান থেকেই ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সাহায্য সমর্থন দিয়েছিল তা বিশ্বাস করারও কোন কারণ নাই। যদি তাই হত তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ-শাসন ও নিপীরনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী জনগনের যে নিরব ও সরব আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভারত তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন দিত ও সহযোগিতা করত। অপরদিকে বাংগালীরাও ভারতকে তাদের আন্দোলনের সহায়ক শক্তি বা দেশ হিসেবে যদি পেত বা মনে করত তবে পাকিস্তান সৃষ্টির ১০ বছরের মধ্যেই হয়ত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারত ( যেভাবে পৃথিবীর বহু দেশ তাদের প্রতিবেশী দেশ বা আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা পেয়ে স্বাধীন দেশে পরিনত হয়েছে )। তাহলে হয়ত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতার পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পন করা এবং বাংগালী জনগনকে পাকিস্তানী সৈন্যদের পৈশাচিক ও বর্বর আক্রমনের শিকার হওয়ার মত ঘটনার সম্মুখীন হতে হতনা। শোনা যায় বা গুজব রয়েছে যে পূর্ব পাকিস্তান আমলে আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে যে মামলা হয়েছিল তা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছিলনা, ভারতের আগরতলায় বসে ভারতের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বাংগালীদের ( নেতাদের ) কথিত ষড়যন্ত্রের ঘটনা ছিল। অর্খাৎ ভারত একটা স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হতে নয় – পূর্ব পাকিস্তানকে তার পেটে ঢুকানোর ষড়যন্ত্র করেছিল বলেই তখন সন্দেহ বা ধারনা করা হয়েছিল।
ভারতের দীর্ঘ ৬৭ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিশাল ভারতের অনেক রাজ্যই ভাষাগত, জাতিগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও কথিত শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার তথা স্বাধীন হওয়ার আন্দোলনরত ছিল ও এখনও আছে। কিন্তু তাদের কোনটার প্রতি কি ভারত সরকারের নৈতিক সমর্থন ছিল বা আছে ? বরং তাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত এসব স্বাধীনতাকামী আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করছে, যেমন শিখদের স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলন, কাশী¥রীদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে যেভাবে দমন করা হয়েছে ও হচ্ছে। যদি ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান নামক ভূখন্ডটা স্বাধীন না হয়ে ভারতের অন্তর্ভূক্ত থাকত তবে স্বাধীন বাংলাদেশের আন্দোলনকেও ভারত এমনিভাবেই দমন করত। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ( বর্তমান বাংলাদেশ ) সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের যে কয়টা রাজ্য রয়েছে বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা, আসাম ও ত্রিপুরায় যেসব স্বাধীনতাকামী বা ভারতের দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রয়েছে ( ত্রিপুরার এ,টি,টি,এফ, আসামের উলফা, ইত্যাদি ) সেসব সংগঠনকে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষন দেওয়া ও অস্ত্র-সস্ত্র সরবরাহ করা হত বলে ভারত তৎকালীন পাকিস্তানকে সব সময়েই অভিযুক্ত করত। এমতাবস্থায় ভারত সরকার যদি ভারত সীমান্ত সংলগ্ন একটা ভূখন্ডকে বা তার জনগনকে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে দেয় তাহলে ভারতের অন্যান্য বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তি রাজ্যগুলোর স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো কি আরো উৎসাহিত ও ক্ষিপ্র হয়ে উঠবেনা ? অথবা তারা কি পরবর্তি সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখন্ডকে তাদের আন্দোলনের স্বার্থে ব্যবহার করবেনা ( যে অভিযোগ এখন করা হচ্ছে এবং তার কিছু কিছু প্রমানও পাওয়া যাচ্ছে ) ? এ সন্দেহ বা প্রশ্ন ১৯৭১ সালে ভারতের সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের মনে অবশ্যই সক্রিয় ছিল। যদি তাই হয় তাহলে কেন বা কি কারণে ভারত তখন বাংলাদেশকে ( বলতে গেলে তার পেটের মধ্যে ) একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হতে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে সাহায্য, সহায়তা ও সমর্থন দিয়েছিল ?
শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বা বাংগালীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের নৈতিক সমর্থন ছিল এমন কোন কারণে নয়, স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে ভারত মূলত যে কারণে সাহায্য, সহায়তা ও সমর্থন দিয়েছিল তা হলো – প্রথমত : পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল করার লক্ষ্যে দুই টুকরো করতে পারলে ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, ভারতও মনে করত পূর্ব পাকিস্তানের আয় ( বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের পাট, চা, চামড়া, নিউজপ্রিন্ট ও আরো অন্যান্য পন্য রপ্তানী বাবত বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন ) দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা অর্থনীতির চাকা সচল রাখা হত। তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সামরিক দিক দিয়েও লাভবান হবে ভারত, ভারতকে আর তার পূর্রাঞ্চলে ( ইস্টার্ন সেক্টরে ) সামরিক শক্তি মোতায়েন রাখতে হবেনা, পুরো সামরিক শক্তিই তখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে ( ওয়েস্টার্ন সেক্টরে ) পাকিস্তানের বিপরীতে প্রস্তুত রাখা যাবে।
দ্বিতীয় ও প্রধান কারণ হলো- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে বাংলাদেশের ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে এক কোটির মত সংখ্যালঘু ( হিন্দু ) শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল ভারত তার নিজ দেশের জনগনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা ও জাতীয় নিরাপত্তার অযুহাতে তাদেরকে কখনও স্থায়ীভাবে ভারতে থাকতে দিতনা ( যার প্রমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর ভারতীয় নেতারা এখনও বলছে ভারতে বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা ও আসামে অবৈধ বাংগালী বা বাংলাদেশী রয়েছে এবং ভারতের বর্তমান সরকার প্রধানতো নির্বাচনের আগে থেকেই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতায় গিয়ে সে এসব কথিত অবৈধ বাংলাদেশীকে ( এর মধ্যে যারা ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেছিল যদি এমন কেউ থাকে তাদেরকেও ) ভারত থেকে বিতারিত অর্থাৎ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের বিশেষ করে বাংলাদেশের কোন কোন গোষ্টির লোক প্রায়ই বলে থাকে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২ ভাগ। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে কথিত নির্যাতনের শিকার হয়ে হিন্দুদের সংখ্যা এখন ৮ – ১০ ভাগে নেমে এসেছে। সংখ্যাটা সঠিক হলেও কারণটা মোটেও সঠিক নয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ভারত থেকে লাখ লাখ মুসলমান যেমন পাকিস্তানে ( পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে ) চলে এসেছিল তেমনি পাকিস্তান থেকেও লাখ লাখ হিন্দু ভারতে চলে গিয়েছিল, এ অভিবাসন বা এওয়াজ বদল ছিল স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছায়, এখানে কোন জোরজবরদস্তি ছিলনা, এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের ২৩ বছর সময়েও এ দেশে হিন্দু মুসলমানে কোন দাঙ্গা হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বরং হাজার হাজার হিন্দু পরিবার পাকিস্তান আমলে ফেলে যাওয়া বা এওয়াজ বদল করে যাওয়া তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি ফেরত নিতে এসেছিল ( যেহেতু তারা মনে করত ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে, সুতরাং বাংলাদেশে এখন হিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে)। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিগত ৪৩ বছরে বাংলাদেশে কখনও হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হয়নি, বরং বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতির এক অনন্য উদাহরন হিসেবে বলা হয়ে থাকে। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পরেও ৯০ % মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুদের বিভিন্ন স্থানে ২/১টা মিষ্টির দোকান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বা অন্য কোন কারণে ছোট-খাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বলতে গেলে ভারতের সংখ্যালঘুদের চেয়ে অনেক বেশী নিরাপদেই আছে। তবে সবচেয়ে বড় সত্য হলো হিন্দুরা ১৯৪৭ এর পর থেকেই এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ভারতকেই ( বিশেষ করে পশ্চিম বাংলাকে ) তাদের জন্মভূমি মনে করে এবং বাংলাদেশকে তাদের দ্বিতীয় বাসভূমি হিসেবে গন্য করে, পরিবারের অর্দ্ধেক সদস্য বাংলাদেশে থাকলে বাকীরা ভারতে থাকে, বাংলাদেশে ব্যবসা করে কিন্তু ভারতে টাকা জমা রাখে বা ভারতে জায়গা জমি ক্রয় করে। নিজেদের প্রয়োজনে এবং নিজেদের স্বার্থেই স্বেচ্ছায় অধিকাংশ সংখ্যালঘু ( হিন্দু ) পরিবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছে বা যায়। বাংলাদেশ থেকে তাদেরকে জোর করে বা প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে ভারতে যেতে কখনও বাধ্য করা হয়না। একমাত্র ১৯৭১ সালেই পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বতার শিকার হয়ে ১ কোটি হিন্দু ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। কাজেই ১ কোটি হিন্দু শরনার্থীকে তাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরত দিতে হলে পূর্ব পাকিস্তানের ভূখন্ডটাকে পাকিস্তানের আওতা থেকে পৃথক বা মুক্ত করতেই হবে। ভারতের সামনে এর কোন বিকল্প ছিলনা বলেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ( সুবিধাজনক সময়ে যখন বাংগালী মুক্তি সেনারা ৮ মাসে পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রায় পরাজয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল ) ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হয়ে ( নৈতিক অবস্থান থেকে নয় তাদের নিজস্ব স্বার্থে ) পূর্ব পাকিস্তানকে পৃথক তথা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজটা নিশ্চিত ও সমাপ্ত করে দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ্য, ২৫ মার্চের রাত থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট ও পুলিশ লাইনে বাংগালী সৈনিক ও সিপাইদের উপর সশস্ত্র আক্রমন শুরু করেছিল তখন জীবিত ও আহতরা পালিয়ে ভারত সীমান্তের নিকটবর্তি বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল, বাংগালীরা তাদেরেকে চিকিৎসা, সেবা-সুশ্র“সা ও খাবার-দাবার যোগাড় করে দিত, ভারত তখন তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তার সীমান্ত খুলে দেয়নি, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্তও ভারত তার সীমান্ত বাংগালীদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়নি। ভারত যখন জানতে পারল হাজার হাজার হিন্দু শরনার্থী কোন রকমে পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছ থেকে প্রানে বেঁচে সীমান্তে এসে জড়ো হয়েছে তখন ভারত তার সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, ঐ সুযোগে সাধারন বাংগালী মুসলমান এবং পলাতক ও বিদ্রোহী বাংগালী সেনারাও ভারতে ঢুকতে সক্ষম হয়েছিল। তবে তখন তারা ভারতের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভিক্ষুকের মত খাদ্য সংগ্রহ করে এনে জীবন বাঁচিয়েছে এবং গাছের নীচে তথা বনে-জঙ্গলে রাত কাটিয়ে প্রাথমিক সময় পার করেছিল, ভারত সরকার তখনও সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেনি। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণার পর এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জেনারেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক করে যখন বাংগালী সেনা, বিমান, নৌবাহিনীর অফিসারদের বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃত্বে দিয়ে, বি,ডি,আর, পুলিশ ও আনসারদের সমন্বয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর কথা ঘোষণা করা হলো ঠিক তখনই ভারত তার অভ্যন্তরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা শুরু করেছিল।
তৃতীয়ত : বাংলাদেশ যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেও ভারতের পাশে অবস্থান করে তাহলেও ভারতের বিশাল অর্থনৈতিক তথা বাণিজ্যিক সুবিধা হবে, ভারত প্রায় ৮ কোটি ( এখন ১৬ কোটি ) জনসংখ্যার একটা দেশের বাজার পাবে, যার প্রমান এখন ডিম থেকে গাড়ি পর্যন্ত ভারতীয় পন্যে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব। পাকিস্তানের অংশ হয়ে থাকলে ভারত কখনও এ সুযোগ পেতনা। তাছাড়া প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য, হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষার জন্য ভারত যাচ্ছে, আর ভারতের সিনেমা ও টেলিভিশনের সংস্কৃতিতো বাংলাদেশকে ইতমধ্যে আষ্টে-পিষ্ঠে জড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের তরুন সমাজকে ভারতের অশ্লীল ও অপসংস্কৃতির ছোবলে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে সক্ষম হয়েছে, আজকের বাংগালী তরুন সমাজ ভাল বা শুদ্ধভাবে বাংলা উচ্চারন করতে বা বলতে না পারলেও ভারতের হিন্দি ভাষা সাবলীলভাবে বলতে ও বুঝতে পারে। এটাও বাংলাদেশের উপর ভারতের সফল সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেরই অংশ।
চতুর্থত : ঐতিহ্যগতভাবে সফল বনিক সম্প্রদায়ের দেশ ভারত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে এমনভাবে ভারত নির্ভরশীল করে তুলবে এবং বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনীতি ও অর্থনীতির মূল শক্তিগুলোকে এমনভাবে ধ্বংশ করে দিবে যাতে বাংলাদেশ নামে বা পরিচয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকলেও কার্যত বাংলাদেশ ভারতের অন্যান্য অংগরাজ্যের মত ভারতের অনুকূলে বা অনুগত হয়েই থাকবে। বাংলাদেশের পাট ও চা শিল্প আরো অনেক আগেই ধ্বংশ হয়ে এখন এই বাজার একচেটিয়া ভারতের দখলে চলে গেছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানী খাতও ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতা ও ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিনত হয়েছে। আর উজানে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের নদ-নদীকে মরুভূমি বানিয়ে বাংলাদেশের কৃষি, জলবায়ূ ও প্রকৃতিকে ইতমধ্যেই ধ্বংশের শেষ সীমায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ভারতের জন্য কোন হুমকী হবেনা, বরং ভারতের লাভই হবে এবং কার্যত ভারতই বাংলাদেশের জন্য হুমকী হয়ে থাকতে পারবে। এসব হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে করেই ভারত ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে পৃথক তথা স্বাধীন বাংলাদেশ হতে সাহায্য করেছিল।
বাংগালী তথা বাংলাদেশের জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীন দেশ ও জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকারকে যদি নৈতিকভাবে ভারত সমর্থন করত বা স্বীকার করে নিত তবে বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের জনগনের প্রতি ভারত পারস্পরিক সৌহার্দমূলক, মর্যাদাসূলভ ও বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বজায় রাখত। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশের প্রতি বৈরী, আধিপত্যসূলভ, মোড়লী তথা দাদাগিড়ির মত আচরন শুর করে। আসল কথা হলো ভারত যেহেতু তার সীমান্তের মধ্যে বা বলতে গেলে তার পেটের মধ্যে আর একটা স্বাধীন দেশের অস্তি¡ত্বকে মেনে নিতে স্বস্তিবোধ করছেনা ( আবার গিলে ফেলতেও পারছেনা ) তাই বাংলাদেশকে সবদিক দিয়ে সারাক্ষন অশান্তি ও হুমকীর মধ্যে রাখতেই স্বাচ্ছ্যন্দ মনে করছে। সবচেয়ে বড় সত্য হলো বাংগালীরা যে পাকিস্তানের একটা শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মত যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে ( যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ) বাংগালীদের এই গর্ব ও অহংকারকে ভারত কখনও হজম করতে বা মেনে নিতে পারছেনা, তাই বাংলাদেশ ও বাংগালীকে তারা হিংসা বা ঈর্ষার পাত্র হিসেবে মনে করে বা গন্য করে। যে কারণে ৪৩ বছর পরেও ভারতের তরুন সিনেমা নির্মাতারা ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে জেনেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের ফলাফল বলে উল্লেখ বা পরিচয় করানোর মত ধৃষ্ঠতা দেখাতে পারে।
পাকিস্তান আমলেও পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের এপারে-ওপারে চোরাচালান ব্যবসা হত, বলতে গেলে এখনকার চেয়ে আরো বেশী পরিমানে হত। কিন্তু তখন পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষী ই,পি,আর ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বি,এস,এফ এভাকে কাউকে গুলি করে মারতনা, কখনো মারলেও তা সংখ্যায় এতই নগন্য ছিল যা প্রকাশ হওয়ার বা করার মতও ছিলনা। এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতার কথা বলতেই হয়। আমার বাড়ি ছিল কুমিল্লা শহরে, শহরের ১০ কিলোমিটার দূরেই ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত। আমার বড় বোনের স্বামীর বাড়ি ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ( কুমিল্লা সীমান্ত সংলগ্ন ) সোনামুড়া জেলায়, সেখানেই তারা ২ ভাই ভারতের সরকারী চাকুরী করত ( যদিও তাদের স্থায়ী নিবাস ছিল কুমিল্লাতেই )। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ – ৬৫ সময়ের মধ্যে যখনই আমার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হত তখনই ১ মাস বা ১৫/২০ দিনের জন্য ত্রিপুরায় আমার বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে চলে যেতাম। কুমিল্লার গোমতি নদী পার হয়ে ধান ক্ষেতের আইল বা লাইল দিয়ে পায়ে হেটে ( পাকিস্তান ও ভারতীয় অংশের ) চলে যেতাম আমার বোনের বাড়ি, কোন পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই, পথে বহুবার বি,এস,এফ এর সম্মুখীন হতাম, তারা তখন কোন দূর্ব্যবহার না করে শুধু জিজ্ঞাসা করত কোথায় যাব, বোনের বাড়ি বল্লে ছেড়ে দিত, অর্থাৎ তখন বি,এস,এফ বাংগালীদের তথা পূর্ব পাকিস্তানীদের কাছে কোন ভয়ের কারণই ছিলনা। যতদিন ভারতে থাকতাম ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতের অন্যান্য শহর ও রাজ্যেও ভ্রমন করেছি, ভারতীয় নাগরিকদের সাথে প্রতিদিন খেলাধূলা করেছি, তাদের বাড়িতে পুজার দিন বেড়াতে যেতাম, খাওয়া-দাওয়া করতাম, কখনও পাকিস্তানী নাগরিক বলে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করাতো দূরের কথা কিছু মনেই করতনা। ভারতীয় হিন্দু বন্ধুরাও একইভাবে কুমিল্লা শহরে ঈদের সময় আমাদের বাড়িতে চলে আসত, পাকিস্তানের ই,পি,আরও তখন তাদের জন্য কোন হুমকী ছিলনা। কিন্তু যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার পরেই যেন বাংগালীরা ভারতের সরকার বিশেষ করে বি,এস,এফ এর কাছে কথিত সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী বাংগালীরা প্রধান শত্র“ হয়ে গেছে, দেখা মাত্রই গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে, মানুষ হিসেবেও কোন মায়া-দয়া নাই, ধরে নিয়ে গেলে হাত-পা বেঁধে পশুর মত পিটিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়। ভারত কি এমন কাজ পাকিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে কখনও করে বা করার সাহস পায় ? কারণ পাকিস্তানের একজনকে মারলে পাকিস্তান প্রতিশোধ হিসেবে তার পরের দিন ৩ জন ভারতীয়কে ( যদি সে সৈন্যও হয় ) এভাবে মারবে। যুক্তির খাতিরে বলা যায় যদি আজও পূর্ব পাকিস্তানের অস্তি¡ত্ব থাকত তবে ভারত একজন বাংগালীকে এভাবে সীমান্তে হত্যা করতে সাহস পেতনা। অর্থাৎ হিসাব ঐ একটাই – বাংগালীরা কেন বীরের মত যুদ্ধ করে ভারত সীমান্তে একটা স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হল এবং উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে ইতমধ্যে ভারতকে টপকে গেছে বলে। এই হিংসার আগুনেই ভারত জ্বলছে। তা না হলে ভারতকে বাংগালীদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার মত কোন কাজ বা আচরন স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বাংগালীরা বা বাংগালী রাজনীতিবিদরা করছেনা। বরং ভারতকে বিভিন্নভাবে খুশী ও লাভবান করার কাজই তারা প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতামূলকভাবে করে যাচ্ছে।
ভারত যদি সত্যিই নৈতিক অবস্থান থেকে এবং আন্তরিকভাবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে থাকত তবে বাংলাদেশকে নির্বিঘেœ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে আন্তরিকভাবেই সাহায্য-সহযোগিতা করে যেত এবং পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক মনে না করে বাংলাদেশের নাগরিক মনে করেই বাংগালীদের প্রতি আন্তরিক, সৌহার্দ ও বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে তুলত। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশের প্রতি বৈরী আচরন শুরু করে দেয়। পাকিস্তান আমলে ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মান করলেও পাকিস্তানের প্রবল আপত্তি ও বিরোধিতার কারণে ভারত তা চালু করতে পারেনি, কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার পর পরই পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার কথা বলে ভারত এর ফলে বাংলাদেশের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনা না করেই ফারাক্কা বাঁধ স্থায়ীভাবে চালু করে দেয়। বাংলাদেশের মানুষ আজ হারে হারে টের পাচ্ছে ফারাক্কার মরন ছোবলে বাংলাদেশের কি করুন দশা হয়েছে ও হচ্ছে, ভারতের সাথে বহু দেন-দরবার করে কয়েকবার ফারাক্কার পানি প্রবাহ নিয়ে চুক্তি করা হলেও ভারত ঐসব চুক্তির কোন তোয়াক্কা না করে তার প্রয়োজনে একতরফাভাবেই ফারাক্কা দিয়ে পানি টেনে নিয়ে যায় এবং বাংলাদেশকে ন্যায্য পানি থেকে বঞ্চিত করছে। এখন তিস্তার পানির সরবরাহও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কোন চুক্তি করতেও টাল-বাহানা করছে। এছাড়াও ভারত আসামের টিপাইমূখে আর এক নদীতে বাঁধ দেওয়ার তোর-জোর করছে। আন্তর্জাতিক নদী আইণ অনুযায়ী উজান অঞ্চলের কোন দেশই অববাহিকা অঞ্চলের দেশকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সাধারন নদী বা পানির উপর এতকরফা কোন পরিকল্পনা তথা আধিপত্য আরোপ করতে পারেনা। উল্লেখ্য পাকিস্তানের ঝিলাম নদীর পানি সরবরাহ নিয়েও ভারতের সাথে পাকিস্তানের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল, পাকিস্তান তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় এবং বিষয়টা জাতিসংঘ পর্যন্ত গড়ায়, শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ঝিলাম নদীতে পানির নাব্যতা ও প্রয়োজনীয়তা স্বাভাবিক রখার জন্য পাকিস্তানে মংলা বাঁধ বা ড্যাম নির্মানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং বিস্ময়কর হলেও সত্য যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মংলা ড্যাম তৈরী করতে ঐ সময়েই ( প্রায় ৫০ বছর আগে ) ভারত পাকিস্তাকে ৩০০ কোটি টাকা ( রূপী ) দিতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ পাকিস্তান পানির উপর তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে বদ্ধপরিকর এবং ভারতের একতরফা কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কখনও প্রস্তুত নয়। কিন্তু ভারত এখন মনে করছে ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করার মত সাহস বাংলাদেশের থাকলেও তা আদায় করার মত শক্তি ও ক্ষমতা বাংলাদেশের নাই, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশকে ছোট ও দূর্বল দেশ মনে করে বলেই ভারত বাংলাদেশের উপর তার একতরফা বা একগুয়েমী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেনা। এমনকি ভারতের একটা অংগরাজ্য পশ্চিম বাংলার মূখ্যমšী¿ মমতা ব্যানার্জী কেন্দ্রীয় সরকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেশ কঠোর ও ধৃষ্ঠতাপূর্ন মনোভাব প্রকাশ করে বার বারই বলে যাচ্ছে পশ্চিম বাংলার চাহিদা মেটানোর পর অবশিষ্ট থাকলে বাংলাদেশ তিস্তার পানি পাবে, তা নাহলে বাংলাদেশের সাথে তিস্তা নিয়ে কোন চুক্তি হবেনা। ভারত ভালভাবেই হিসাব করে নিয়েছে যে বাংলাদেশেকে কাবু বা দূর্বল করে রাখতে হলে পানিই হলো একমাত্র হাতিয়ার, কারণ ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় ৫৪ টা অভিন্ন নদীর উৎপত্তি বা উৎসস্থলই হলো ভারত। বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরনই হলো বাংলাদেশের নদ-নদী, যদি এগুলোকে শেষ করে বা নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় তবে বাংলাদেশকে ভারতের সাথে একীভূত করা না হলেও ভারতের করুণা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে মাথা উচু করে সামনে এগিয়ে যাওয়া বা নড়া-চড়া করার কোন সুযোগ থাকবেনা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি স্বাক্ষরের পর কালবিলম্ব না করেই ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে তার দাবীকৃত বেরুবাড়ি সীমান্ত অঞ্চলের মালিকানা বুঝে নিয়ে যায় ( বাংলাদেশ তখন সংসদে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে ভারতকে বেরুবাড়ি ফেরত দেওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছিল ), কিন্তু বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশের কাছে তিন-বিঘা করিডোরের মালিকানা হস্তান্তর করার কথা থাকলেও বরং ভারতীয় হাইকোর্টে একটা মামলার জালে ফেলে দিয়ে আজ পর্যন্ত তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমূদ্র সীমানায় আর একটা বাংলাদেশের সমান চর বা বিশাল দ্বীপ জেগে উঠেছিল, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনী এর দখল নিশ্চিত করেছিল এবং তখন এটার নাম দেওয়া হয়েছিল দক্ষিন তালপট্টি। কিন্তু জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর ভারত দক্ষিন তালপট্টি তাদের দখলে নিয়ে যায় এবং ভারত এর নাম দেয় পূর্বশা দ্বীপ। বাংলাদেশের পরবর্তি আর কোন সরকারই এ ব্যাপারে ভারতের সাথে আর দক্ষিন তালপট্টির দখল নিয়ে কাড়াকাড়ি বা ভারতের কাছ থেকে তা ফেরত পাওয়ার জন্য জোরালো অবস্থান নেয়নি ( হয়ত ভারতের মত শক্তি নাই বলে )। ভারত এখন বঙ্গোপসাগরের ঐ অঞ্চলে পলি জমা হওয়ার পথ বন্ধ বা পরিবর্তন করে দিয়ে উক্ত চরটার জেগে উঠার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে সমূদ্র সীমানা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে বাংলাদেশের পক্ষে রায় পেয়েছে, ভারতের সাথেও সমূদ্র সীমানা নির্দ্ধারনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ মামলা করেছে, এজন্য ভারত বাংলাদেশের উপর খুবই অসন্তুষ্ট এবং বিষয়টা দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিমাংশা করা হবে বলে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ভারত বিভিন্নভাবে ও সময়ে বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে, হয়ত এ কারণেই মামলার রায় ঘোষণা করার তারিখ বার বার পেছানো হচ্ছে।
ভারত অর্থনৈতিকভাবে ভাল অবস্থানে থাকলেও বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক কম, যে কারণে ভারত থেকে প্রতিবছর মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানী করা হয়। অতএব যে দেশের লোক কর্মের জন্য এথনও অন্য দেশে পাড়ি জমায় সে দেশে বাংলাদেশীরা কেন বা কি কাজ করতে অবৈধভাবে যাবে ? বরং ভারতের প্রায় ৫ লাখ লোক বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত আছে যাদের আয় ভারতের অন্যান্য খাতে বৈদেশিক আয়ের হিসাবে পঞ্চম স্থানে আছে।
ভারতের প্রায় সব টিভি চ্যানেলই বাংলাদেশে অবাধে চলছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্যাবল আপারেটরা শত চেষ্টা ও তদবির করেও বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল ভারতে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে বা দেখাতে সুযোগ পাচ্ছেনা। ঐতিহ্যগতভাবে বনিয়া জাতের দেশ ভারত মনে করে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল ভারতে চলতে দিলে এসব চ্যানেলের বিজ্ঞাপন দেখে ভারতীয়রা বাংলাদেশের পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, এটাই মূল কারণ। এমনিভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিক দিয়েও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পন্যের অবাধ প্রবেশের সুযোগ নাই, যার কারণে ভারত-বাংলাদেশের বানিজ্য ঘাটতি বিশাল।
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত তার পূর্বঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে পন্য সরবরাহ বিশেষ করে ঐ সব রাজ্যে বিদ্রোহ দমনে সামরিক যানবাহন ও সরঞ্জাম সরবরাহ বা আনা-নেয়ার জন্য বাংলাদেশের উপর দিয়ে করিডোর সুবিধা পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ তথা দাবী করে আসছিল, অথচ পূর্ব পাকিস্তান থাকাকালীন পাকিস্তানের কাছে এমন দাবী বা প্রস্তাব কখনও জানায়নি ( কারণ ভারত জানত পাকিস্তান ভারতের এ আবদার কখনও মানবেনা )। ভারত যেহেতু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে ( ভারতের মনোভাব অনুযায়ী ) সেহেতু ভারত বাংলাদেশের কাছে এ প্রস্তাব বা দাবী করতেই পারে এবং ( ভারত মনে করে ) বাংলাদেশ তা মানতে বাধ্য। ভারতের এমন দাবী বা চাপের কারণে বাংলাদেশ বলতে গেলে স্বাধীনতার পর থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে বা অপ্রকাশিতভাবে ভারতকে করিডোর সুবিধা দেওয়া শুরু করে। আওয়ামী লীগের ২০০৯ – ২০১৪ শাসনামলে তা আনুষ্ঠানিক ও প্রকাশ্যেই দেওয়া শুরু হয়, এমনকি বাংলাদেশের নদীর উপর বাধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করেও ভারতকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য একটা স্বাধীন দেশের উপর / মধ্য দিয়ে আর একটা দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াত বা মালামাল ( সামরিক উপকরনসহ ) আনা-নেওয়ার জন্য কথিত করিডোর সুবিধা দেওয়ার নজীর পৃথিবীর অন্য কোথায় আছে বলে আমাদের জানা নেই, কারণ যে দেশ করিডোর দিবে এর সাথে সে দেশের সার্বভৌমত্ব , রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয়টা মারাত্মকভাবে জড়িত। যে দেশকে করিডোর সুবিধা দেওয়া হবে সে দেশ যদি বৃহৎ শক্তি হয় তবে কখনও কোন অনিবার্য কারণেও তার করিডোর সুবিধা সাময়িকভাবেও বন্ধ করা যাবেনা, তখন সে দেশ প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতেও কুন্ঠিত হবেনা, বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের কাছে ঠিক এমনই। ভারত এখন ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মান করার জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম বাংলাদেশের উপর দিয়ে নিয়ে যাবে, এতে তার পরিবহন খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে, তাছাড়া অন্য রাজ্যে নেওয়ার জন্য এই বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনও ( খুটি ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসানো হবে। এটা কি একটা স্বাধীন দেশের স্বার্বভৌমত্বের প্রতি সম্ভাব্য হুমকী নয় ? বিনিময়ে বাংলাদেশকে তথা আওয়ামী লীগ সরকারকে সন্তুষ্ট রাখতে ভারত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিবে ( তাও বিনামূল্যে নয় চড়া দামের বিনিময়ে )। এ ছাড়াও ভারতের সাথে যৌথভাবে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতে স্থাপন করতে গিয়ে পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বলে ভারতবাসীর বিরোধিতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে বলে বাংলাদেশের জনগনের প্রবল আপত্তি ও বিরোধিতা সত্তেও ভারতের ইচ্ছা পূরন করার জন্য সুন্দরবনের কাছে রামপালে স্থাপন করতে যাচ্ছে, এর প্রায় শতভাগ ( ভারতের মাত্র ১৫ শতাংশ ) ব্যয়ভার ও পরিবেশের শতভাগ ঝুকি বাংলাদেশের হলেও ভারত সেখান থেকে বিদ্যুৎ নিবে অর্দ্ধেক অর্থাৎ ৫০ ভাগ। এক দেশ আর এক দেশকে করিডোর বা ট্রানজিট দেওয়ার রেওয়াজ পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে, যদি এটা হয় একটা দেশ তৃতীয় আর একটা দেশের সাথে যোগাযোগের জন্য মাঝখানের দ্বিতীয় আর একটা দেশের উপর দিয়ে যেতে হয়, এমন করিডোর বা ট্রানজিট অস্বাভাবিক বা অগ্রহনযোগ্য নয় এবং এজন্য দ্বিতীয় দেশ করিডোর বা ট্রানাজট প্রদান বাবত ভাল অংকের শুল্ক বা কর পেয়ে থাকে। কিন্তু একই দেশ তার দেশের একস্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগের জন্য আর একটা স্বাধীন দেশের উপর দিয়ে চলাচল করবে এমন করিডোর বা ট্রানজিটের উদাহরন পৃথিবীর কোথাও কি আছে ? কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় তা আছে, কারণ এখানে ভারত বলে কথা, যেহেতু ভারত আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে, এজন্য ভারতের বেলায় ( আওয়ামী লীগের বিবেচনায় ) ৭ খুন মাপের মত। যেমন শত শত ফ্ল্যাগ মিটিং ও উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরেও ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করা অব্যাহতই রেখেছে। বাংলাদেশের ও ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রে আর একটা খবর প্রকাশিত হয়েছে যে ভারত নারায়নগঞ্জের কাছে একটা নদীবন্দর তৈরী করার উদ্যোগ নিয়েছে যার শতভাগ নিয়ন্ত্রন থাকবে ভারতের কাছে। ভারতের উপর বাংলাদেশকে পানি, বিদ্যুৎ , করিডোর ও অন্যান্য ব্যাপারে যদি নির্ভরশীল তথা শক্তভাবে বেঁধে নেওয়া যায় তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিকেও ভারত সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। এক দেশের সাথে আর এক দেশের করিডোর বা ট্রানজিটের বিষয়টা অবশ্যই লাভ ও সুবিধাজনক বিষয় হিসেবেই গন্য হওয়া উচিত, তবে তা কেবলই সম্ভব যদি সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ শক্তির দিক দিয়ে কেহ কারো চেয়ে কম না হয়, অর্থাৎ এক দেশ ইচ্ছা করলেই আর দেশের কাছ থেকে একতরফভাবে ট্রানজিট বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আদায় করতে পারবেনা। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় ভারতের ভূমিকা বা দুই দেশের শক্তির ভারসাম্য কি সে রকম পর্যায়ে আছে ? অবশ্যই নাই এবং এজন্য অবশ্যই ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হুমকী। ২০১০ সালের জানুয়ারীতে শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতের সরকারী ও বেসরকারী খাত থেকে মোট ৫০০ ( ২৫০ + ২৫০ ) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানীর চুক্তি হয়েছিল, সে মোতাবেক ভারত বিদ্যুৎ দিতে শুরু করলেও তা ৫০০ এর বদলে এখন ৩৫০ মেঘাওয়াটে নেমে এসেছে। ভারত যদি নদীর পানির মত বাংলাদেশকে একসময় উল্লেখিত বিদ্যুৎ সরবরাহ যে কোন কারণে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় তবে উক্ত বিদ্যুতের উপর নির্ভলশীল উৎপাদন খাত বা ব্যবহারকারীরা কি মহা সমস্যায় পড়বেনা ? ভারতকে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বা পুনরায় চালু করে দিতে বাধ্য করার মত সেই শক্তি কি বাংলাদেশের আছে ? অপরদিকে ভারত যখন বাংলাদেশের কাছ থেকে করিডোর বা ট্রানজিটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া বা নেওয়া শুরু করে তবে বাংলাদেশ যদি কখনও অনিবার্য কারণেও তা বন্ধ করে দেয় ( যদিও এমন সাহস বাংলাদেশ কখনও দেখাতে পারবেনা ) তখন ভারত তা অব্যাহত বা চালু রাখতে বাংলাদেশের উপর শক্তি প্রয়োগও করতে পারে। এটা কি বাংলাদেশের জন্য হুমকী নয় ?
বাংলাদেশের ভৌগলিক বস্তবতা হলো বাংলাদেশ প্রায় চতুর্দিক দিয়েই ভারত পরিবেষ্টিত, অর্থাৎ ভারতের চোয়ালের মধ্যে। আশে-পাশেও সাহায্য-সহযোগিতা করার মত অন্য কোন দেশ নাই। তাই হয়ত ভারত মনে করে যে কোন সময় বাংলাদেশকে গিলে ভারতের পেটে ভরে নিতে ভারতের কোন সমস্যা বা অসুবিধাই নাই ( পরবর্তিতে পরিনতি যাই হউক )। সিকিমকে এভাবে ভারতের গিলে খাওয়ার ঘটনাতো আছেই। একসময় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতের ত্রিপুরার সাথে মিশিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের শন্তিবাহিনীকে বহু বছর যাবত তার ভূখন্ডে প্রশিক্ষন ও অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। তবে বর্তমান বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাংলাদেশ যে অবস্থান ও মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে ইচ্ছা করলেও ভারত এখন বাংলাদেশকে গ্রাস করতে পারবেনা। ১৯৭১ সালে সে সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পরেও ভারত তা করার ইচ্ছা পোষন করেনি, কারণ তখন ভারত সরকার সারা দুনিয়াকে জানান দিয়েছিল যে পাকিস্তানের শোষণ, শাসন ও পাকস্তিানী সৈন্যদের গনহত্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভারত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংগালী জনগনের পাশে দাড়িয়েছে। এই ধারনা দিয়ে ভারত তখন রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থন পেতে সক্ষম হয়েছিল এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া ১ কোটি শরনার্থীর জন্য সারা বিশ্ব থেকে ত্রান সামগ্রীসহ বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা আদায় করতে পেরেছিল।
আমেরিকা, জাপান চীনসহ পৃথিবীর বড় বড় অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশসমূহ এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সহযোগী, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দ্রুত উন্নয়নের সম্ভাবনাশীল বাংলাদেশের প্রতি এখন সারা বিশ্বের আগ্রহ ও মনোযোগ অনেক বেশী। যে কারণে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বা সরকারও আগের তুলনায় এখন বাংলাদেশ বিষয়ে বেশী মনোযোগী ও তৎপর। এমনকি কোন্ দলের সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে ভারতের স্বার্থ ভালভাবে সংরক্ষিত থাকবে বা আদায় করা যাবে সেজন্য প্রয়োজনে ভারত তার গনতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে হলেও বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করতেও দ্বিধা করেনা। তাই এখন বাংলাদেশকে পেটে ভরে নেওয়া সম্ভব নয় বলে ভারত বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের সম্ভাবনাগুলোকে দূর্বল বা ভারত-নির্ভর করে রাখার কৌশল নিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ( যখনই ক্ষমতায় থাকে ) বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বা আঘাত পেলে চুপ করে হজম করার কৌশল অবলম্বন করে হলেও ভারতের সাথে সম্পর্ক একতরফাভাবে স্বাভাবিক রাখার জন্য ব্যাকুল থাকে। এটাও মূলত ভারত বাংলাদেশের জন্য যে একটা হুমকী এই উপলব্ধি থেকেই করা হয় বা প্রকাশ পায়।
ভারতের এহেন ভুমিকার মোকাবেলায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রকৃত মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ রাখতে হলে বাংলাদেশ যদি তার বাজেটের পুরোটাও সামরিক খাতে ব্যয় করে তবুও কোনদিন শক্তি প্রয়োগ করে বা শক্তির ভয় দেখিয়ে ভারতকে ভীত বা নিবৃত্ত করতে পারবেনা। তাই ভৌগলিকভাবে দক্ষিন এশিয়ার একটা ( সামরিক দিক দিয়ে ) সুবিধাজনকত অবস্থানে থাকার ও সমূদ্র পথে বহি:বিশ্বের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেকে অবশ্যই এবং এখনই যুগোপযোগি ও কার্যকর ব্যবস্থা অনুসরন করতে হবে যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্বার্থক করতে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে কারো দয়া বা রক্তচক্ষুর প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত রেখে দেশ ও দেশের জনগনের নির্বিঘœ উন্নয়নের দিকে একনিষ্টভাবে মনোযোগ দেওয়া যায়। তা নাহলে ভারত এক সময় এবং অতি দ্রুত বাংলাদেশের সে সম্ভাবনাকেও ধ্বংশ করে দিবে। ৪৩ বছরেও যে ভারত বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু না হয়ে বাংলাদেশকে অনুগত ও নতজানু করে রাখার জন্য প্রভু বা অভিভাবক হয়ে থাকতে চাচ্ছে আগামী ১০০ বছরেও ভারতের এই চরিত্রের পরিবর্তন হবে বলে একমাত্র আওয়ামী লীগ চক্র ছাড়া বাংলাদেশের একজন মানুষও তা বিশ্বাস করেনা।
লেখক : জাহিদ হাসান, রিয়াদ, সউদী আরব।