স্টেডিয়ামের দেয়াল ধ্বসে কর্তৃপক্ষের উপর দায়
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীর ধসে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের নিম্নমানের কাজই দায়ী বলে দাবী করেছেন চা শ্রমিক পল্লীর বাসিন্দারা।স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীর ধসে তিন ভাই-বোনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে স্তব্ধ লাক্কাতুরা চা বাগান শ্রমিক পল্লী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে কাঁদিয়েছে এই তিন ভাই-বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু।
সোমবার রাত সোয়া ২টার দিকে প্রবল বৃষ্টিতে স্টেডিয়ামের পূর্বদিকের লাক্কাতুরা চা বাগানের চাপাতল শ্রমিক কলোনি এলাকার সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে।
এতে লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক আজান আলী ওরফে কলা মিয়ার ছেলে জাহেদ আহমদ (১৪), মেয়ে নাসিমা বেগম (১৮) এবং তাদের চাচাতো ভাই মৃত কুতুব আলীর ছেলে রুহুল আমিন (১২) মারা যান।
দুর্ঘটনার পর ভোর রাতেই এলাকাবাসী ও দমকল বাহিনীর কর্মীরা ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে বলে জানান বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান।
মঙ্গলবার সকালে চা শ্রমিক পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের ২ নম্বর গেইটের পূর্বদিকের দেয়ালের ঠিক নীচে আজান মিয়া ও তার ভাই মৃত কুতুব উদ্দিনের পরিবারের বসবাস। সীমানা প্রাচীর লাগোয়া এরকম আরো ২০টির মতো পরিবার বসবাস করছে।
সোমবার রাতে প্রবল বর্ষণে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবে কেউ কল্পনা করতে পারেননি। তবে তারা এ জন্য দায়ী করেছেন স্টেডিয়ামের নিন্মমানের কাজকেই। পল্লীর শোকে স্তব্ধ শ্রমিকরা তাদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই।
লাক্কাতুরা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও টুকের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য গুণধর গোয়ালা বলেন, স্টেডিয়ামে নিম্নমানের কাজ চলাকালে ঠিকদারের সঙ্গে এ নিয়ে দেন-দরবার করেছি। আমাদের দাবি ছিলো সীমানা প্রাচীর করতে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হোক। কিন্তু তারা আমাদের দাবি উপেক্ষা করেছে।
“আমাদেরকে মানুষ বলে মূল্যায়ন করেনি। এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে দাবি জানালে, স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ প্রতিউত্তরে বলে, দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যাবে”, ক্ষোভে বলেন এ জনপ্রতিনিধি।
চা বাগানের গাড়িচালক বেলাল হোসেন জানান, আমরা জায়গাও দেব, মারাও যাব, তা হয় না। কর্তৃপক্ষ আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করে ঠেলে দিয়েছেন সীমানা প্রাচীরের নিচে।
“এসব ভূমির কোনো বিনিময় মূল্য পাইনি, বিনিময়ে পেয়েছি মৃত্যু। এখানে মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি আমরা।”
চা শ্রমিক পল্লীর বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুশ শহীদ বলেন, স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্থ আত্মসাত করতে নিম্নমানের কাজ করেছে। এ কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভূক্তভোগী আজান আলি জানান, রাতে চা শ্রমিক কলোনির নিজেদের কাঁচাঘরের কক্ষের পশ্চিম প্রান্তে ঘুমিয়ে ছিলেন নাসিমা, তার ছোট ভাই জাহেদ ও চাচাতো ভাই রুহুল। অন্য প্রান্তে ছিলেন তিনি।
রাত সোয়া দুইটার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে কিছু বুঝার আগেই দেয়ালের নীচে চাপা পড়ে আজান আলীর ছেলেমেয়েরা। তিনি তখন প্রতিবেশী জুবেদ আলিকে চিৎকার দিয়ে ডাক দেন।
আজান আলীর ডাক-চিৎকারে জুবেদ আলীর সঙ্গে পল্লীর অন্য বাসিন্দারাও বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে আসেন। উদ্ধার করেন রুহুল ও জাবেদের মৃতদেহ। পরে দমকল বাহিনী এসে সীমানা প্রাচীরের পিলারের নিচ থেকে নাসিমার মৃতদেহ উদ্ধার করে।