৭ খুন মামলা : ভেঙে পড়েছে লে. কর্নেল তারেকের মনোবল

Tareq-Sayedসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় গ্রেফতার র‌্যাবের চাকরিচ্যুত সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। খুনে জড়িত সন্দেহে চাকরিচ্যুত অন্য দুই কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দি দেয়ায় বেকায়দায় তারেক। এদিকে কাউন্সিলর নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মোর্তুজা জামান চার্চিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৭ মে ভোরবেলায় গ্রেফতারের পর তারেক সাঈদ দৃঢ় মনোভাব বজায় রাখলেও এখন অনেকটাই নরম সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালের পর থেকে তিনি আরও বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করছেন না। তদন্ত দল বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারেক সাঈদকেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ানোর চেষ্টা করছেন তদন্ত তদারকরা। এদিকে র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত দুই কর্মকর্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কিলিং মিশনে থাকা ২৩ সদস্যের মধ্যে বাকি ২০ জন কারা তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। যাদের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ২০ জন ও পুলিশ থেকে আসা তিনজন। কিলিং মিশনের তিনজন এরই মধ্যে সাত খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। তবে বাকি ২০ জন এখনও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া কিলিং মিশনের নির্দেশদাতা র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গডফাদাররাও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে কোনো সময় বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হতে পারে। তবে এজন্য আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশ করলে খুনিরা পালিয়ে যেতে পারে এ কারণে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নাম প্রকাশ করেননি। নাম প্রকাশ না করলেও নির্দেশদাতা ও গডফাদার কারা সে বিষয়টি এরই মধ্যে অনেকে অনুধাবন করতে পেরেছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে সাত খুনে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, সাত খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে প্রতিটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে যে কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
নূরের চাঁদার উৎসস্থল গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ : নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার ভাতিজা কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল নিয়ন্ত্রিত চাঁদার উৎসস্থল গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলার পুলিশ প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে চার দিন একটানা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ও খাবার হোটেল উচ্ছেদ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-১) মঈনুর রহমান জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে দুই পাশের ফুটপাতে অবৈধভাবে নির্মিত শতাধিক পরিবহন কাউন্টার, সিটি করপোরেশনের একটি যাত্রী ছাউনি, ২০ থেকে ২২টি খাবার হোটেল, দুই শতাধিক ভাসমান দোকানপাট ও শতাধিক ফলের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত নূর হোসেন ও তার বাহিনী। পুলিশ সুপারের নির্দেশে চার দিনের অভিযানে ওইসব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা ট্রাফিক পুলিশের এএসপি বশির আহমেদ। উল্লেখ্য, শিমরাইল মোড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুই বছর আগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে রিকশা লেন নির্মাণ করলেও ক্ষমতার দাপটে নূর হোসেন ও তার ভাতিজা শাহজালাল বাদল তা দখল করে দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা উত্তোলন করত। শতাধিক বাস কাউন্টার থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হতো। ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সভাপতি পরিচয়দানকারী সেলিম রেজা ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলত।
সাখাওয়াতকে হুমকি : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের জন্য হাইকোর্টে রিট দায়েরকারী ও আইনজীবীদের চলমান আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা রাখা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আবারও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। সাখাওয়াত সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে তাকে অজ্ঞাত পরিচয় তিন থেকে চারজন ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়। হুমকিদাতারা তাকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে বেশি কথা না বলার এবং বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্যও শাসায়। হুমকিস্বরূপ তাকে বলা হয়েছে, আপনি র‌্যাবের বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। এরকম করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে, গুম হয়ে যাবেন। তাই এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। পরে সাখাওয়াত বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, এ ধরনের একটি বিষয় অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তাকে জানিয়েছেন। তিনি তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন।