লন্ডনী কন্যার অসম প্রেম: হত্যা মামলায় মায়ের যাবজ্জীবন
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেটে লন্ডনী কন্যার প্রেমঘটিত হত্যাকান্ড মামলায় যাবজ্জীবন মাথায় নিয়ে পালিয়ে রয়েছেন কন্যার মা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছায়েরা। জেলে রয়েছের ছায়েরার দ্বিতীয় স্বামী মিছবাহ। রোববার এক জনাকীর্ন আদালতে এ রায় ঘোষনা করেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মো. মঈন উদ্দীন।
আদালতসূত্রে জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথের কোনারাই গ্রামের লন্ডনী কন্যা ছায়েরা বেগম প্রথমে বাখর চৌধুরী নামের একজনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ইংল্যন্ডে পাড়ি দিলে তাদের ঘরে জন্ম নেয় লন্ডনী কন্যা ছালেহা চৌধুরী ওরফে বানেছার।
এক পর্যায়ে ছায়েরা বেগম তার স্বামীকে ত্যাগ করে মেয়ে ছালেহা চৌধুরী বানেছাকে নিয়ে চলে আসেন জকিগঞ্জের কসকনকপুর গ্রামের মিছবাহ উদ্দিনের ঘরে। পরে তারা তিনজন বিশ্বনাথের কোনারাই গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন।
বাড়িতে নির্মানাধীন বাসার টাইলসের কাজ করতেন চাঁদপুর জেলার ফরিদপুর হাওয়াকান্দি গ্রামের বদরুজ্জামান বেপারীর পুত্র আব্বাস ও রস্তুম। সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার একটি বাসায় থাকতেন তারা দু’ভাই। দীর্ঘদিনের কাজ ও পরিচয়ের সুবাদে টাইলস মিস্ত্রি রস্তুমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে লন্ডনী কন্যা ছালেহা চৌধুরী বানেছার।
প্রেমের টানে ২০১০ সালের প্রথমভাগে রস্তুমের হাত ধরে পালিয়ে যায় লন্ডনী কন্যা ছালেহা। কোর্ট এফিডেভিটের মাধ্যমে সে বিয়ে করে রস্তুমকে। পলায়ন ও বিয়ের ঘটনাটি মেনে নিতে পারেননি ছালেহার মা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছায়েরা ও সৎপিতা মিছবাহ।
অনেক চেষ্টা করে ছালেহাকে ফিরিয়ে নিতে না পেরে সমঝোতার ভান করেন তারা। প্রেমিক যুগলকে দাওয়াত করেন তাদের বাড়িতে। সরল বিশ্বাসে ছালেহা চৌধুরীকে নিয়ে রস্তুম ছালেহার মা ছায়েরা বেগমের বাড়িতে যায়। মেয়ে-জামাই হিসেবে প্রথমে তাদের সমাদরও করা হয়। রাত ১২টায় হঠাৎ করে বদলে যান ছায়েরা ও তার দ্বিতীয় স্বামী মিছবাহ। তারা ভাড়াকরা লোকজন নির্মমভাবে পিঠান ছালেহার স্বামী রস্তুমকে।
একপর্যায়ে মৃত ভেবে তাকে ফেলে দেয়া হয় বাড়ির বাইরে। মূমূর্ষ অবস্থায় রস্তুমকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে প্রেমিক রস্তুমের। এ ঘটনায় রস্তুমের ভাই আব্বাস আলী বাদী হয়ে ২০১০সালের ৩ মার্চ সিলেটে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা করেন।
মামলায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছায়েরা বেগম, তার স্বামী মিছবাহ ও লন্ডনী কন্যা ছালেহা চৌধুরীসহ কয়েকজনকে আসামী করা হয়। তখন ছায়েরা বেগম ও তার মেয়ে ছালেহা লন্ডনে পালিয়ে যান। তদন্ত শেষে পুলিশ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছায়েরা বেগম, ছায়েরার স্বামী মিছবাহ, লন্ডনী কন্যা ছালেহা চৌধুরী বানেছা ও রশু দফাদারকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়।
বিচারের জন্য মামলাটি সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে প্রেরিত হলে বিচারে শেষে আদালত যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছায়েরা বেগম ও তার স্বামী মিছবাহ উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ৬মাস কওে সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। আদালত লন্ডনী কন্যা ছালেহা চৌধুরী ও রশু দফাদারকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রায় ঘোষনার পর জামিনে থাকা মিছবাহ উদ্দিনকে জেলে পাঠানোর হয় এবং পলাতক ছায়েরা বেগমের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়। প্রেমিক হত্যার দায় থেকে লন্ডনী কন্যা ছালেহা চৌধুরী বানেছা মুক্ত হলেও তার মা ছায়েরা বেগম যাবজ্জীবন মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আত্মসমর্পন না করলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে। রাস্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি জুনেল আহমদ অ্যাডভোকেট।