ভাড়ায় সাজা ভোগ!

23760_x5_24606সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আরিফ নামের এক যুবক ভাড়ায় সাজা ভোগ করছে। এরই মধ্যে সাজা ভোগের ৮ মাস পেরিয়ে গেছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সে সিংগাইরে একটি নারী নির্যাতন মামলায় ৩১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আয়নালের স্থলে এ সাজা ভোগ করছে। শুক্রবার এ তথ্য প্রকাশ পেলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চকপালপাড়া গ্রামের আমির উদ্দিনের পুত্র বিয়ের প্রলোভনে প্রতিবেশী এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ২০০৩ সালের ৯ই ডিসেম্বরে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গর্ভে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। একাধিকবার সালিশ-বৈঠকের পর বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় ভিকটিম বাদী হয়ে আয়নালসহ ৫ জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
ওই মামলায় তদন্ত শেষে আয়নালকে অভিযুক্ত করে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এদিকে মামলার আসামি আয়নাল মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়। আসামির অনুপস্থিতিতে মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আয়নালকে ৩১ বছরের সাজা দেয়।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪শে সেপ্টেম্বর একই গ্রামের আরজ খানের পুত্র আরিফ (২৫) আয়নাল সেজে আদালতে আত্মসমপণ করে। সেই থেকে শুরু হয় আয়নাল নামে তার সাজা ভোগ। বিনিময়ে পায় মোটা অংকের টাকা। স্থানীয় অনেকেই মানিকগঞ্জ জেলহাজতে গিয়ে আয়নালের পরিবর্তে আরিফকে দেখতে পায়। এ নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাদীর পরিবার ঘটনাটি জানতে পেরে জেলহাজতে গিয়ে এর সত্যতা নিশ্চিত করে।
বর্তমানে এলাকায় এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। বাদীর পরিবারকে এ ঘটনায় বাড়াবাড়ি না করতে আসামি আয়নালের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। গতকাল সরজমিনে চকপালপাড়া গ্রামে আয়নালের বাড়িতে গেলে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
প্রতিবেশী মোবারক হোসেন ও রবিউল আলম বলেন, মামলার পর থেকেই আয়নালকে এলাকায় দেখা যায়নি। যতটুকু জানি সে বিদেশে আছে। মামলার বাদী ও ভিকটিমের ভাই খবির উদ্দিন বলেন, আয়নাল বিদেশে থাকায় আমরা মামলার খোঁজ-খবর নেইনি। লোকমুখে আয়নালের পরিবর্তে আরিফের কারাভোগের খবর জানতে পেরে গত মঙ্গলবার জেলগেটে গিয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত হই।
খবির উদ্দিন আরও বলেন, আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী এ ব্যাপারে আদালতকে লিখিতভাবে অবগত করবো। এদিকে সাজাভোগকারী আরিফের পিতা আরজ খান বলেন, ৮ মাস ধরে আমার পুত্র নিরুদ্দেশ। আমি অসুস্থ থাকায় তার কোন সন্ধান করতে পারছি না। তবে জেলহাজতে আছে বলে লোকমুখে শুনেছি।
অপর একটি সূত্র জানায়, আয়নালের পরিবারের লোকজন আরিফের পরিবারের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে আয়নাল সাজিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আর এ সুযোগে আসামির পরিবার মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিল করে তাকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্র জানায়।