মূল আসামিদের বাঁচানোর তৎপরতা এখনও অব্যাহত

noor hossainসুরমা টাইমস ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণ এবং হত্যার মূল আসামি আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন দেশের বাইরে পালিয়েছে বলে মনে করছে র‌্যাব।
তবে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের বিশ্বাস নূর হোসেন পালাতে পারেনি, দেশের ভেতরেই আছে। তদন্তকারীরা বলছেন, নূর হোসেনকে আটক করা গেলে সব কিছু পরিষ্কার হবে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, প্রভাবশালীদের বাঁচাতেই কি নূর হোসেনকে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে?
এদিকে নারায়ণগঞ্জ এলাকার র‌্যাব-১১’র খোল নলচে পাল্টে ফেলা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রধানকে আগেই সরিয়ে দেয়া হয়। এখন উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে পুলিশের প্রায় সবাইকে বদলির প্রক্রিয়া চলছে। সাতজনকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। কিন্তু আসল কাজের কিছুই হচ্ছে না। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি বা গ্রেপ্তার করা যায়নি।
কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি: এই মামলার প্রধান এজাহারভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেন কোথায় তা নিয়ে র‌্যাব আর পুলিশের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন মত। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন মনে করেন নূর হোসেন এখনও দেশের মধ্যেই আছেন। তবে তার অবস্থান এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।
এদিকে তদন্তকারী সংস্থার ধারণা নূর হোসেন এখন আর দেশে নেই। একই ধারণা র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের। তিনি ধারণা করছেন নূর হোসেন সীমান্ত পথে দেশের বাইরে চলে গেছে।
গত ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত জনকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠে। এরপর নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাব-১১’র অধিনায়কসহ ৩ র‌্যাব কর্মকর্তা সাত জনকে অপহরণ ও হত্যা করেছে। আর এই টাকা দিয়েছে নজরুলের প্রতিপক্ষ নূর হোসেনসহ কয়েকজন। এরপর র‌্যাব-১১র অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে র‌্যাব থেকে প্রত্যাহার করে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতারের কোনো আইনি প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। পুলিশ এপর্যন্ত এজাহারভুক্ত বা অভিযুক্ত কাউকেই গ্রেফতার করেনি বা করতে পারেনি। আসামিদের সঙ্গে সম্পর্কিত দু’একজন এবং তাদের স্ত্রীদের আটক করার মধ্যেই সাফল্য সীমাবদ্ধ।
টাকা নিয়ে হত্যা করেছে র‌্যাব: জানা গেছে ২৭ এপ্রিল অপহরণের দিন এবং ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জেই ছিলেন নূর হোসেন। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। তার বাড়িতে অভিযানের পর তার আত্মীয় স্বজনও গা ঢাকা দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ৩০ এপ্রিল সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর আসামিরা যাতে দেশের বাইরে পালাতে না পারে সেজন্য অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে আসামিদের নাম ঠিকানা এবং ছবি পাঠানো হয়।
আর এই দেরির কারণে আসামিদের কেউ কেউ এর আগেই দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারে। জানা গেছে প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগী ইয়াসিন, রাজু ও হাসুও দেশের বাইরে পালিয়েছে।
নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম জানান, অপহরণের দিন ২৭ এপ্রিলই তিনি মামলা করেছেন। তখনই যদি পুলিশ তৎপর হতো তাহলে ৭ জনকে হত্যা করতে পারত না অপরাধীরা। আর তারপরও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ পালাবার সুযোগ করে দিয়েছে।
পুলিশ নূর হোসেনকে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল হাতের কাছে পেয়েও আটক করেনি। আর ৩ মে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তিনি প্রশ্ন করেন, আসামিদের কেন পলানোর সুযোগ করে দেয়া হল? শহিদুল ইসলাম বলেন, র‌্যাবের ৩ কর্মকর্তাকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। তারাইতো টাকা নিয়ে অপহরণ ও হত্যা করেছে। র‌্যাবের অন্যান্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তা জানা যাবে। কিন্তু সেসব কিছুই করা হচ্ছে না। তিনি মনে করেন বাইরে যতই ঢাকঢোল পেটানো হোক না কেন র‌্যাব ৩ কর্মকর্তাসহ মূল আসামিদের বাঁচানোর তৎপরতা এখনও অব্যাহত আছে।