সিলেটে কালবৈশাখী তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজার ৩৭০ জন লোক
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেটে ভয়াবহ কাল বৈশাখী তান্ডবে সিলেট জেলায় ১ জনের প্রানহানীসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘন্টায় ৮২ কিলোমিটার বেগে ৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় এ ঝড়। ঝড়ে ৭২ টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার ৩শ’ ৭০ জন লোক বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর মধ্যে কানাইঘাট উপজেলায় ১জন বৃদ্ধা মারা গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪শ’ ৮৮টি ঘরবাড়ী। যার মধ্যে সম্পূর্ণ বিধক্ষস্ত হয় ৬শ’ ১৮টি বাড়ী ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪ হাজার ৮শ’ ৭০টি ঘরবাড়ী। এদের মধ্যে ৮ হাজার ২শ’ ৮০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ১২টি উপজেলার মধ্যে ৩শ’ ৫৮ হেক্টর জমির ফসল।
সিলেট জেলা ত্রান ও পুনবার্সন অফিস অফিস সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট জেলা ত্রান ও পুনবার্সন অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট সদর উপজেলা। এ উপজেলায় ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২ হাজার ৪শ’ ২৫টি পরিবার কাল বৈশাখীর কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে লোক সংখ্যা রয়েছেন ১০ হাজার ৯শ’ ৪০ জন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া ৩শ’ ৫৮টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধক্ষস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮শ’ ৩০টি বাড়ি। ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সদর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতির দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে কানাইঘাট উপজেলা। ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৯টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩শ’ ৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের মধ্যে লোক সংখ্যা রয়েছেন ৭ হাজার ৬শ’ ৫৫ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৬ হেক্টর ফসলাদি জমি। সম্পূর্ণ বিধক্ষস্ত হয় ২শ’ ৬০টি বাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৭০টি ঘর-বাড়ি। এর মধ্যে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী স্ত্রী আলফাতুন নেছা ঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া সিলেটের দক্ষিন সুরমা উপজেলার ৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১০টি ইউনিয়নের ১৫শ’টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে ৮ হাজার ৫শ’ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ৩শ’টি ঘর-বাড়ি ও ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১৬ হেক্টর ফসলাদি জমি ক্ষতিগ্রহস্ত হয়।
বালাগঞ্জ উপজেলার ৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের ৭শ’ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের মধ্যে লোক সংখ্যা রয়েছেন ৪ হাজার ৫শ’ জন। ২শ’ ৩০টি ঘর-বাড়ি ও ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠনসহ ১শ’ ৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিয়ানীবাজার উপজেলার ৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪শ’ ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২শ’ ২৫টি ঘর-বাড়ির সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বনাথ উপজেলার ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৪টি ইউনিয়নের ৩শ’ ৫০টি পরিবার ও ২ হাজার ৭শ’ ৫০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১শ’ ৫০টি ঘর-বাড়ির সাথে ৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৪টি ইউনিয়নের ২শ’ ৭৫টি পরিবারের মধ্যে ২ হাজার ১শ’ ৫০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১শ’ ২৫টি ঘর-বাড়ির সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৩টি ইউনিয়নের ২শ’ টি পরিবার ও ১ হাজার ৪শ’ ৫০জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২টি শিক্ষ প্রতিষ্ঠান, ১শ’ ৪৫টি ঘর-বাড়ির সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫০ হেক্টর জমির ফসল। গোয়াইনঘাট উপজেলার ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৫টি ইউনিয়নের ২শ’ ৫০টি পরিবার ও ১ হাজার ৭শ’ ৫০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১শ’ ১৫টি ঘর-বাড়ির সাথে ৭৬ হেক্টর জমির ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৬টি ইউনিয়নের ৩শ’টি পরিবার ও ৩ হাজার ৫০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১শ’ ২৫টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জৈন্তাপুর উপজেলার ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৪টি ইউনিয়নের ২শ’টি পরিবার ও ১ হাজার ৪শ’২৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া ১শ’ ৫টি ঘর-বাড়ি ও ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জকিগঞ্জ উপজেলার ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩শ’টি পরিবার ও ২ হাজার ৫শ’ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ৪শ’ ৫০টি ঘর-বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিলেট জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন অফিসার নিকেশ চন্দ্র রায় বলেন কাল বৈশাথী ঝড়ে সিলেটে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে জরিপ করা হয়েছে। পুরো জরিপ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের জন্য চেষ্টা হবে।