প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নারী নির্যাতনের নাটক সাজিয়ে হেনস্থার অভিযোগ
জুবের সরদার দিগন্ত, দিরাই-শাল্লা প্রতিনিধিঃ দিরাইয়ে একটি সাজানো ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে, এ নিয়ে গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে চলছে তুখর দ্বন্দ্ব। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ভাঙ্গাডহর গ্রামে এটি একটি তুচ্ছ ঘটনা ঘটে। ঘটনা যাচাই করতে গিয়ে পাওয়া গেছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, যার সত্যতা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় দিরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিরাই পৌরসভার চণ্ডিপুর গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে মোঃ আব্দুল হক ভাঙ্গাডহর গ্রামে তার ক্ষেতের ধান আনতে গেলে একই গ্রামের মৃত শারদা দাসের ছেলে শিমুল আব্দুল হককে গালি গালাজ করেছে শুনে সে তাকে গালি দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় শিমুল। পরবর্তীতে উভয়ের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আশপাশের লোকজন তা এখানেই শেষ করে দেন। পরবর্তীতে এটিকে চণ্ডিপুর গ্রামের কতিপয় লোকজন বিগত দিনের একটি স্বার্থহানীর কারণে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তৎপর হয়। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে ভাঙ্গাডহর গ্রামের পাশে একটি মেলা হলে এটি বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদানে অগ্রবর্তী হিসেবে আব্দুল হক থাকায় তাকে মেলা আয়োজন কারীরা হেনস্থা করতে ঘটনাটি সাজিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
নির্যাতনের শিকার মণিরাণী দাসের বোন শিউলী দাস (১৭) জানায়, আমাদের বাড়ির জায়গাটি মূলত ভূমিহীন হিসেবে পাওয়ায় এ জায়গার ওপর পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন দীর্ঘদিন ধরে তা দখল করতে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছিলেন। ঘটনার দিনও আব্দুল হককে দিয়ে তারা এটি করতে চেয়েছিল। আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমিসহ আমার মা, বোন ও ভাইদেরকে মারপিট করেছে, রাতে আমাদের বাড়ির মালপত্র লুটপাট করে নিয়েছে তারা। পাশের বাড়ির ক্ষিতিশ দাস (৬৯) জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে এ জায়গা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না, আমাদের নামে কাগজ করার কথা বলে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা করে সারদা দাস নিয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোন প্রকার কাগজ পাইনি।
নির্যাতনের শিকার মণিরাণী দাস (২১) জানায়, আমি একটি এনজিওর কাজ শেষে বাড়িতে এসে ঘরে ঢুকার পরই আব্দুল হক ও মজনু আমার ভাইয়ের ওপর আক্রমণ চালালে আমি তাদের ফেরাতে গেলে তারা আমাকেও মারধোর করে, আমাদের জায়গা দখল করতে তারা বিভিন্ন সময় উৎপাত করে বলেও মণিরাণী জানায়।
এ ব্যাপারে মোঃ আব্দুল হক এ প্রতিবেদকের কাছে জানান, কিছুদিন আগে আমিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় ভাঙ্গাডহর গ্রামে অনুষ্ঠিত একটি মেলা বন্ধ করতে আন্দোলন করলে আমাদের গ্রামের মেলা আয়োজনকারীরা আমাকে হেনস্থা করতেই এই ঘটনা সাজিয়েছেন। তাদের স্বার্থের বিরোধী কাজ করায় একটি অসহায় পরিবারকে দিয়ে নাটক সাজিয়েছেন তারা। গত শুক্রবার আমি ভাঙ্গাডহর গ্রামের পাশে আমার জমির ধান আনতে গেলে মৃত সারদা দাসের পুত্র আমাকে দেখেই গালিগালাজ শুরু করে। আমার সাথে থাকা শ্রমিকরা তাকে বারণ করতে গেলে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তবে কোন ধরণের মারধোর বা আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।
এ ঘটনায় দিরাই থানায় মৃত সারদা দাসের স্ত্রী যশোদা রাণী দাস বাদী হয়ে একটি লিখিত এজহার দাখিল করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোবারক হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।