‘দ্রুত নির্বাচন দিন, নয়তো আপনারাই দায়ী থাকবেন’
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসন দেশের মানুষ আর বেশি দিন সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, দ্রুত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দিন যত গড়াবে ক্ষতির পরিমাণ ততো বৃদ্ধি পাবে। নয়তো করুণ পরিণতির জন্য আপনারাই দায়ী থাকবেন। তখন কারো কিছুই করার থাকবে না। জনগণের ধৈযের্র বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের ৬ষ্ঠ সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারকে গণতন্ত্র হরণকারী-অবৈধ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। ১৫৪ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে তারা। ৫৭টি কেন্দ্রে কোন ভোটই পড়েনি। সিল মারারও লোক পায়নি। প্রার্থীরা নিজেরাও বোধ হয় ভোট দেয়নি। তাহলে কি তাদের নির্বাচিত বলা যায়? প্রশ্ন রেখে ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, সংসদের স্পিকার যে আছে তিনিও জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তাহলে এটা কিসের সংসদ! জনগণের টাকা খরচ করে এখানে শুধু গালাগালি হয়।
রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে বলে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র আজ মৃত। ভোটের যে চিত্র টিভিতে দেখানো হয়েছে তাতে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এটা পরিষ্কার হয়েছে, ৫ই জানুয়ারি কোন নির্বাচন হয়নি। এই অবৈধ সরকার জানে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিলে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাদের থেকে মানুষ দূরে সরে গেছে। তাই তারা নির্বাচন দেয়নি। দেশের মানুষ জানে আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আগামীতেও হবে না। দলটি এত খারাপ অবস্থায় চলে গেছে যে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি একসঙ্গে সহযোগী হয়ে কাজ করেছে।
এর আগেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই অবস্থা করেছিল বলেই ২১ বছর মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি এমন মন্তব্য করে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয় পাবেন না। সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। আওয়ামী লীগ আজ একা। ১৪ দলে কোন দল নেই, ছিল শুধু জাতীয় পার্টি। কিন্তু এরশাদের বেঈমানির কারণে জাতীয় পার্টিও আজ টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সবাই তার দল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তার কিছু করার ক্ষমতা নেই।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, কাদের স্বার্থে এই দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে? কুইক রেন্টালের নামে দুর্নীতি করে সব টাকা তাদের দলীয় ও পরিবারের লোকজনের পকেট ভারি করা হয়েছে। আর এই ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে সাধারণ জনগণের কাঁধে। অথচ লোড শেডিং এর কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের জাতীয় আয়ের বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। কিন্তু সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক দেশ আমাদের জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের ৫ বছর ৩ মাসে দেশে কোনো নতুন শিল্প কারখানা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাত্রলীগ অস্ত্রাগার বানিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সেখানে আর লেখাপড়া হয় না। সরকারি দলের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দখল করে ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে।
এদেশের প্রতি তাদের কোন মায়া মমতা নেই। দেশকে নষ্ট করার জন্য তারা ক্ষমতায় বসেছে। দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গাজীপুরে ২৪ ঘণ্টায় ১০ খুন হয়েছে। প্রতিদিনই খালে-বিলে, নদীতে যেখানে-সেখানে পাওয়া যাচ্ছে লাশ। কোন বৈধ দেশপ্রেমিক সরকার নিজের দেশের মানুষকে এভাবে হত্যা করতে পারে না।
সোনার ছেলেরা এখন ক্ষমতায় বসেছে তাই সোনা চোরাচালানে ভরে গেছে দেশ। এই সোনাগুলো যাচ্ছে কোথায়? প্রশ্ন রাখেন খালেদা জিয়া। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর সভাপতি মো. রেহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী প্রমুখ।