ব্লু-বার্ড স্কুলে শিক্ষক-অভিভাবক লঙ্কাকাণ্ড : অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা

Blue Bird Schoolসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ঘটে গেল লংকা কান্ড। এমতাবস্তায় তাৎক্ষণিক অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন অধ্যক্ষ হুসনে আরা। গতকাল বুধবার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অকষ্মাৎ বিদ্যালয় পরিদর্শন নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, একে অপরকে বিদ্যালয় থেকে বের করার হুমকি, শিক্ষকদের মারধরের চেষ্টা ও বিদ্যালয়ের ফটক তালাবদ্ধ করার ঘটনাকে গুন্ডামী বলে মন্তব্য করেছেন উপস্থিত অনেক অভিভাবক। আজ বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তবে বিদ্যালয় খোলা রাখতে অনুরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। এদিকে ঘটনার পর অধ্যক্ষসহ শিক্ষক লাঞ্চিত করার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারিরা।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে অধ্যক্ষের সাথে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, ভর্তি ও তদবির বানিজ্য, প্রভাব খাটানো অন্যতম। গতকাল অপ্রীতিকর ঘটনার নেপথ্যে নবম শ্রেনীতে অকৃতকার্য কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দশম শ্রেনীতে ভর্তির সুযোগ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, বিগত বার্ষিক পরীায় নবম শ্রেণীতে ১৬ জন শিার্থী অকৃতকার্য হয়। পরবর্তীতে কয়েকজন অভিভাবকের তদবিরে ৮ জনকে কৃতকার্য দেখান অধ্যক্ষ হুসনে আরা। অন্য শিক্ষার্থীদেরও কৃতকার্য দেখানো নিয়ে কলেজ অধ্য হোসনে আরার সাথে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যদের বিরোধের সূত্রপাত হয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার তাদের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয়। এ অবস্থায় গতকাল সকাল সাড়ে ৮ টায় হঠাৎ স্কুল পরিদর্শনে যান দাতা সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য সালেহ আহমদ খসরু, বদরুল ইসলাম লস্কর ও হুসনে আরা কলি। তারা অধ্যকে না পেয়ে সহকারী প্রধান শিক ব্রজেন্দ্র্র কুমার রায়কে নিয়ে কাসে কাসে গিয়ে পরিদর্শন করেন। বের হয়ে আসার পথে দেখা হয় অধ্য হুসনে আরার সাথে। ওই সময় অ্যাডভোকেট মালেক তাকে বিলম্বে আসা ও স্কুলের শিক্ষকরা অনুপস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞেস করেন। তখন হুসনে আরা তাকে না জানিয়ে কেন স্কুল পরিদর্শনে আসলেন তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ওই সময় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের মারধর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাৎক্ষণিক দু’জন শিক্ষককের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের গেইট বন্ধ করে দেন। ফলে অবরোদ্ধ হয়ে পড়েন অভিভাবক সদস্যরা। খবর পেয়ে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি দেখে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকও স্কুল পরিদর্শন করেন।
কলেজ অধ্য হোসনে আরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিলের কথা জানিয়ে বলেন, কাস ভিজিটে এসে অভিভাবক প্রতিনিধিরা শিকদের সাথে চরম অশোভন আচরণ করেন। তারা ‘লাথি’ মেরে শিকদের কাস থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য সালেহ আহমদ খসরু জানান, বিদ্যালয়ে নিয়মিত কাস হচ্ছেনা এমন অভিযোগে তারা হঠাৎ পরিদর্শনে যান। ওই সময় ষষ্ট ও একাদশ শ্রেনীতে শিক্ষককে পাননি। বের হয়ে আসার সময় অধ্যক্ষের সাথে দেখা হলে তিনি খারাপ আচরণ করেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। যারা শিক্ষকদের মারতে চায় তারা কোন ধরণের অভিভাবক।