সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই ওসমানীনগর-বালাগঞ্জে

সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

উজ্জ্বল দাশ, ওসমানীনগরঃ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর এমএজি ওসমানীর পিতৃভূমি বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোনো সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান নেই । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর অতিক্রম হলেও বাংলাদেশ সরকারের নজর পড়েনি এ জনপদের শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে। ফলে এলাকার হাজার-হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় এলাকার বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্টানে কিংবা জেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্টানে ভর্তি হতে হয় । শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোর আর্থিক দীনতায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের একটি মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টানকে সরকারী করন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অঞ্চলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারী করনের দাবী নিয়ে একাধিক বার সংবাদ প্রকাশিত হলেও সরকার কিংবা স্থানীয় সংসদ সদস্যরা বরাবর তা এড়িয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্যরা সংসদ অধিবেশনে এ ব্যাপাওে জোরালো কোন প্রস্তাব কিংবা আলোচনা করেন নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে হতাশা ও চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকার শত বছরের পুরোনো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টানকে সরকারী করণের দাবি দীর্ঘ দিনের হলেও অদ্যাবধি পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। সিলেটের কৃতি সন্তান নুরুল ইসলাম নাহিদ দ্বীতিয় বারের মতো শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও আবুল মাল আব্দুল মুহিত অর্থ মন্ত্রনায়ের মন্ত্রী হওয়ার পর বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের জনসাধারন এ উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রাচীন বিদ্যাপীঠ গুলোকে সরকারী করনের দাবী তুলেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি এ অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোকে সরকারী করন করে শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এ এলাকাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
এক অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই থানা নিয়ে গঠিত বালাগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। বেসরকারি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তা প্রয়োাজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। গড়ে ১৮ টি গ্রামের জন্য একটি মাধ্যমিক ও ১১৭টি গ্রামের জন্য ১টি করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ রয়েছে একাধিক। বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রবাসীরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। সরকার প্রবাসীদের সহায়তা করলে এ দুই থানার শিক্ষার মান আরো উন্নত হতো এমন মন্তব্য এলাকার অভিজ্ঞ মহলের। ওসমানীনগর থানার প্রাচীন উচ্চ বিদ্যাপীঠ হলো তাজপুর ডিগ্রি কলেজ। ১৯৭২ সালে এলাকার শিক্ষা দরদি মানুষের উদ্যোগ ও দানে প্রতিষ্টিত হলেছিল এ শিক্ষা প্রতিষ্টান। এ বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্টার ৪২ বছর হয়ে গেলেও অদ্যাবদী তা সরকারী করন করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বালাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ একটি প্রচীন বিদ্যাপীঠ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের একমাত্র মহিলা কলেজ গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ। ১৯৯৫ সালে এলাকাবাসীর উদ্যেগে প্রতিষ্টিত এই মহিলা কলেজটি আজও উপেক্ষিত। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্টিত ব্রাক্ষণ গ্রাম হযরত শাহ্জালাল(রঃ) সিনিয়র মাদ্রাসা অদ্যাবদী সরকারী করনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মহাকবি শরচ্চচন্দ্র চৌধুরী ১৮৮৬ সালে বেগমপুরে শরৎসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় নামে বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৮৭ সালে তাজপুর মঙ্গলচন্ডী নিশিকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। শতবর্ষী এই দুই মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারী করনের তাগিদ অনুভব করেনি কেউ। এছাড়াও ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নবগ্রাম হাজী মো: ছাইম উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯২৯ প্রতিষ্টিত সালে সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়,১৯৬৮ সালে প্রতিষ্টিত খাদিমপুর নছিব উল্লা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্টিত বুরুঙ্গা ইকবাল আহমদ হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্টিত খুজগীপুর মান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, বালাগনঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্টিত কুরুয়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্টিত রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্টিত তয়রুন নেছা বালিকা উচচ বিদ্যালয়, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্টিত খন্দকার বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্টিত চান্দাইরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্টিত গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্টিত পূর্ব গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্টিত সাদীপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মোঃ নূর মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরো অনেক প্রচীন ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ অঞ্চলে। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাগুলো সরকারীকরনের দাবী থাকলেও এ দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোন উদ্যেগ গ্রহন করা হয়নি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশী। এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্টানের ফলাফল অনেক ভালো। এলাকার সুনামধারী এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারী করণ করার দাবী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের।
জানা যায়, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে ১৪৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৭ টি বেসরকারী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪ টি উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৪ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যাপিঠে ভবন ও শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। এ উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে মাত্র একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এতে দুরত্ত্ব ও যাতায়াত ব্যায় সংকুলান করতে না পেরে প্রতিবছর এ অঞ্চলে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে অনিচ্ছা সত্তেও লেখাপড়ার ইতি টানতে হয়। বিশেষ করে নারী ও গরীব পরিবারের শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে প্রতিবছর। ২০১১ সালে এলাকার সচেতন মহল একটি অনুষ্টানে শিক্ষা মন্ত্রীর বরাবরে বিদ্যাপীঠ গুলোর সমস্যা সমাধানের সুপারিশ জানালেও তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনো।
এলাকার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীরা বলেন, প্রাচীন ও গুরুত্ব পূর্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলো সরকারীকরনসহ নতুন শিক্ষা প্রতিষ্টান তৈরী করা হলে এ জনপদে শিক্ষার হার দ্বীগুন হবে। আমাদের প্রত্যাশা বর্তমান সরকার বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের প্রাচীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলো সরকারী করন করে এলাকার শিক্ষারহার বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,শিক্ষা মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যর সুদৃষ্টি কামনা করছি।