রহস্যময় নারীর ফোনকলে লুকিয়ে আছে নিখোঁজ বিমানের রহস্য!

Malaysian Airlines Captains Familyসুরমা টাইমস ডেস্কঃ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানটি হারানোর পেছনে রহস্যের সবচেয়ে ঘন কুণ্ডলী পাকাচ্ছে মোবাইল ফোনের একটি কল। তাও এসেছে এক রহস্যময় নারীর ভুয়া মোবাইল নম্বর থেকে। ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ মাটি ছাড়ার মাত্র দুই মিনিট আগে ভুয়া পরিচয়ের একটি মোবাইল নম্বর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর কল পেয়েছেন ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ।
ভুয়া পরিচয়ের মোবাইল নম্বর থেকে কলটি করেছিলের এক নারী। আজ থেকে ১৬ দিন আগে কুয়ালা লামপুর ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন যে কয়েকটি মোবাইল কল পেয়েছিলেন তার মধ্যে এটিই সর্বশেষ কল। ভুয়া পরিচয়ের ওই নম্বরটি অনুসন্ধানকারীদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। কারণ মালয়েশিয়ায় মোবাইল সিম কিনতে ক্রেতাদের তার সত্যিকার পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট দাখিল করতে হয় এবং তা যাচাই করে দেখা হয়।
৯/১১ এর টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় প্রতিটি ফোন কলের পেছনের মানুষটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল। কিন্তু এই কলটির পেছনের মানুষটিকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যে দোকান থেকে সিমটি কেনা হয় তার ঠিকানা বের করতে পেরেছে পুলিশ। দেখা গেছে, একেবারে সম্প্রতি সিমটি কেনা হয়েছে এবং এক নারীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে যার পরিচয়টি ভুয়া। আর এই ভুয়া পরিচয়ের বিষয়টি আশঙ্কা আরো পাকাপোক্ত করছে যে, ক্যাপ্টেন জাহারি এবং কোনো সন্ত্রাসী দলের মধ্যকার যোগাযোগের বিষয়টি সত্য। এই কলটি ছাড়া আর যারা ক্যাপ্টেনের মোবাইলে কল করেছিলেন তাদের সবার সাক্ষাৎকার ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অনেক সময় ভুয়া পরিচয়ে সিম কার্ড কেনার ব্যবস্থা করেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের ফোন কল গোপনে শুনতে পারেন, সেই ভয়েই তারা এ কাজটি করেন।
আজ রবিবার অনুসন্ধানকারীরা একটি তথ্য পেয়েছেন যে, ক্যাপ্টেন জাহিরি মালয়েশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত এবং তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ও বটে। বিমানটি মাটি ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির একটি আদালত এক বিতর্কিত শুনানির মধ্য দিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিমের পাঁচ বছরের জেল দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে ওই ফোন কলটির সময়টি অনুসন্ধানকারীদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বুঝতে চাইছেন, ফোন কলের পরই এমন ঘটনা ঘটেছে, নাকি এটা স্রেফ বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড?
একটি উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া বিমানের চোখে ভারত সাগরের দক্ষিণে ধরা পড়েছে বিমানের ধ্বংসাবশেষ সদৃশ বন্তু। ফলে আবারো অভিযান শুরু হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া বিমানের খোঁজে এটিও সর্বসাম্প্রতিক তথ্য। এখন উদ্ধারকারীরা জানতে চান, গত ৮ মার্চ ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে বোয়িং ৭৭৭ হারিয়ে যাওয়ার পেছনের আসল কারণটি কী ছিলো?
তদন্তের অন্য এক শাখার চোখ রয়েছে ক্যাপ্টেনের সাবেক স্ত্রী ফাইজা খানের দিকে। এক ঝুড়ি প্রশ্ন নিয়ে তদন্তকারী দল অপেক্ষা করছেন ফাইজার জন্য। এদিকে, এফবিআই এর চাপে খুব শিগগিরই তাকে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে হবে। কারণ স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও তিন সন্তানকে নিয়ে তারা একই ছাদের নীচে বাস করতেন। ইতিমধ্যে ফাইজার সঙ্গে কর্মকর্তারা প্রাথমিক আলাপ সেরেছেন এবং সে সময় তিনি যথেষ্ট স্বাভাবিক ছিলেন বলেই জানান মালয়েশিয়ান কর্মকর্তারা। তবে ক্যাপ্টেনের স্বভাব-চরিত্র বা তার জীবনযাপন নিয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করা হয়নি তাকে।
ফাইজার সঙ্গে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক ‘নরম সুর’র আলাপে মোটেও তুষ্ট নন এফবিআই কর্মকর্তারা। এই নারীর কাছে ক্যাপ্টেন সম্পর্কে জরুরি তথ্য লুকিয়ে রয়েছে বলেই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাপ্টেনকে সন্দেহের তালিকা থেকে দূরে রাখতে হলে তার স্ত্রীকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে, এফবিআই এর তদন্তকারীরা জাহিরির বাসা থেকে উদ্ধার করা ফ্লাইট সিম্যুলেটরের হার্ড ড্রাইভ পরীক্ষা করে দেখেছেন, ফ্লাইট৩৭০ এর প্রোগ্রাম মুছে ফেলা হয়েছে। বাড়িতে জাহিরি ফ্লাইট সিম্যুলেটর ব্যবহার করে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ল্যান্ডিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতেন। এই হার্ড ড্রাইভ এখন ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোর এফবিআইয়ের গবেষণাগারে রয়েছে।মালয়েশিয়ান অনুসন্ধান দল এই হার্ড ড্রাইভ থেকে তথ্য উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ার পরই গত সপ্তাহে তা এফবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে।
এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত পরিবহনমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইন গতকাল বলেন, ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে হার্ড ড্রাইভ থেকে দ্রুত তথ্য উদ্ধারের জন্য তা এফবিআইয়ের কাছে দেওয়া হয়েছে।
কাজেই এখন সব মিলিয়ে বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার কারণ যেনো লুকিয়ে রয়েছে ওই ভুয়া পরিচয়ের মোবাইল নম্বর থেকে আসা রহস্যময় নারীর ফোন কলে। অনুসন্ধানকারী দল এখন ওই ফোন কলটিকে লক্ষ্য করেই তাদের তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র : ডেইলি মেইল