কানাইঘাট ডিগ্রী কলেজে ছাত্রলীগের অস্ত্র মহড়া : অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা

ফেইসবুকে স্ট্যাটাস নিয়ে কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ
অধ্যক্ষের কার্যালয় ও একাডেমিক ভবনে ব্যাপক ভাঙ্গচুর

Pic 01কানাইঘাট প্রতিনিধি: কানাইঘাট প্রতিনিধি ঃ ফেইসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার ক্লাস চলাকালীন সময় কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙ্গচুর করা হয়েছে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষসহ একাডেমিক ভবনে। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ছাত্রলীগকর্মী কাহির আহমদ, যুবলীগ কর্মী এনাম উদ্দিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রশিবিরের কয়েকজন কর্মী আহত হলেও তাদের নাম কোনভাবেই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও নবীন শিক্ষার্থীদের দলে ভিড়ানো নিয়ে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি রশিদ আহমদ ও কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি মাশুক আহমদ জুবায়েরকে গ্রেফতার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী মাহফুজ সিদ্দিকীকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে থানার দালাল আখ্যায়িত করে প্রথমে ফেইসবুকে কটাক্ষ স্ট্যাটাস দেয় শিবিরের কর্মীরা। এরপর ছাত্রলীগের কর্মীরা শিবিরের বিরুদ্ধে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়ার পাল্টা স্ট্যাটাস ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশে শক্ত অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একাদশ শ্রেণির ১ম বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাসের মধ্যেই উপজেলা ছাত্রলীগের তালতলা গ্র“প সমর্থিত ও ছাত্রশিবিরের কয়েকজন কর্মীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরেই কলেজ ক্যাম্পাসে উভয় সংগঠনের বহিরাগতরা রাম দা, ছুরি ও লাঠি সোটা নিয়ে প্রবেশ করলে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি কক্ষের কাচের দরজা জানালা এবং অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিভিন্ন শ্রেণি কক্ষ ও বাথরুমের মধ্যে আশ্রয় নেন। এসময় কলেজের কয়েকজন শিক্ষক সংঘর্ষ থামাতে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে তাদেরকেও লাঞ্চিত করা হয়। খবর পেয়ে থানার বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শিবিরের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে মনসুরিয়া ত্রিমোহনী পয়েন্টে লাঠি সোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। এরপরও থেমে থেমে উভয় সংগঠনের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করে কানাইঘাট বাজারের দিকে আসার পথে মনসুরিয়া পয়েন্টে পুনরায় শিবিরের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ শিবিরের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তালতলাগ্র“প সমর্থিত নাজমুল ইসলাম হারুন বলেন, ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। তারা ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ সিদ্দিকীকে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগসহ নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে শিবির। গতকাল এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ ১ম বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিবিরের কর্মীরা নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে এর দাঁত ভাঙা জবাব দেয়। কলেজ শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্করের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে শিবিরের কলেজ শাখার কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, এ হামলা ছাত্রলীগের পুর্ব পরিকল্পিত। তারা কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশের উপস্থিতিতেই তান্ডব চালিয়েছে। শিবিরের নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে থমথমে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলম মামুন কলেজে না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক লোকমান হোসেন জানান, আজকের এই অনাকাংখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নির্দেশে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে গভর্ণিংবডির সভায় সার্বিক বিষয়ে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে। কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরী জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা দায়েরের খবর পাওয়া যায়নি।