এবার কুশিয়ারার তীরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ

Katatarer beraসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ চলতি বছরের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের সীমান্তের সবটাতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শেষ করবে। যেসব এলাকায় অবস্থানগত কারণে বেড়া দেয়া সম্ভব হবে না সেখানে প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হবে। সে সাথে বৃদ্ধি করা হবে পর্যবেক্ষণ, যাতে কেউ সীমান্ত পেরুতে গেলেই চিহ্নিত করা যায়।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে।
সূত্র মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে ভৌগোলিক সমস্যা-সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে ভারত সরকার। তবে বরাক নদীর ওপারে কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখের কাছে আসামের করিমগঞ্জে ভারত সরকার বেড়া দেয়ার জন্য জরিপকাজ শুরু করেছে। এতে স্থানীয়রা ুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, এ প্রতিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে সেখানকার সরকার জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ মিটার ছেড়ে বেড়া নির্মাণের যে উদ্যোগ নেয়ার কথা সেখান থেকে সরে আসতে পারে।
ভারতের গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, আসাম সরকার ও করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসক তাদের জানিয়েছেন, বেড়ার বাইরে যাতে কমসংখ্যক লোক পড়েন বা মোটেও না পড়েন সেটি তারা নিশ্চিত করবেন।
সূত্র মতে, এটি নিশ্চিত করতে হলে হয় ১৫০ মিটারের বিধান অমান্য করতে হবে নয়তো বেড়া নির্মাণ থেকে সরে আসতে হবে।
তবে করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বড়ুয়া বিবিসিকে বলেছেন, তারা বেড়া নির্মাণের আগে জরিপকাজটি চালিয়ে যেতে চাইছেন।
কুশিয়ারা নদীর তীরে করিমগঞ্জ শহরে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার জন্য জরিপের কাজ শুরুর পর সীমান্ত থেকে ১৫০ মিটার দূরে বেড়া দেয়া হলে শহরের অনেক আবাসিক বাড়ি ও দোকান বেড়ার বাইরে চলে যাবে।
তাই পুনর্বাসনের দাবি করছেন স্থানীয় মানুষ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকাতেই কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শেষ হয়ে গেলেও অবস্থানগত সমস্যা বা স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের কারণে কিছু জায়গায় এখনো বেড়ার কাজই শুরু করা যায়নি। এ রকমই একটা অংশ রয়েছে আসামের বরাক উপত্যকার শহর করিমগঞ্জে।
কুশিয়ারা নদীর তীরের এই শহরে কয়েক দিন আগে বেড়া দেয়ার জন্য জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। আর তাতেই প্তি হয়ে উঠেছেন মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ মিটার ছেড়ে বেড়া দিতে হলে করিমগঞ্জ শহরের অনেক বসতবাড়ি আর দোকান বেড়ার বাইরে চলে যাবে।
তাপস পুরকায়স্থ নামে প্রতিবাদকারীদের একজন বিবিসিকে বলেন, কাঁটাতারের বেড়া তো দিতেই হবে দেশের কথা চিন্তা করে; কিন্তু শহরের চারটি ওয়ার্ড বেড়ার বাইরে চলে যাবে। সেখানকার মানুষদের কী হবে। বিশেষ করে সাধারণ গরিব মানুষ যারা।
তাপসের ভাষ্য মতে, ১৫০ মিটারের ভেতরেই ভারতের অনেক নাগরিক বাস করছেন। যাদের প্রটেকশন চাইছেন তারা। যেটি সীমান্ত আইন অনুযায়ী বাস করা যায় না। যেখানে প্রায় প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশীদের খুন করছে বিএসএফ; সেখানে বছরের পর সীমান্তেই বাস করছেন ভারতীয়রা।
সীমান্তের দেড় শ’ মিটার দূরে বেড়া দিলে তা যেমন করিমগঞ্জ শহরের একটা অংশের মধ্যে দিয়ে চলে যাবে, তেমনই যদি কুশিয়ারা নদীর তীর বরাবর বেড়া দেয়া হয়, তাহলেও সমস্যা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ করিমগঞ্জ একটি নদীবন্দর আর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র। নদীর ধারেই রয়েছে জেটি, গুদাম প্রভৃতি।
কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে তৈরি হওয়া এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে গত শনিবার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন প্রতিবাদীরা।
করিমগঞ্জের জেলা প্রশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বড়ুয়া বলছেন, এটা খুব বড় কোনো সমস্যা নয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে কিছু বসতবাড়ি বা দোকানের হয়তো তি হবে। কত বাড়ি বা দোকান বেড়ার বাইরে পড়বে, সেটা জরিপ করানো হবে। আগামী সপ্তাহে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জরিপ শুরু হবে। সাধারণ মানুষের য়তি যাতে খুব কম হয়, আমরা তার চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অনেক রাজ্যেই কাঁটাতারের বেড়া দেয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল আগে।
ত্রিপুরা, মেঘালয় আর পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়া নিয়ে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে বেড়ার বাইরে যাদের ঘর পড়ে গিয়েছে, তারা কাজে বাধা দিয়েছিলেন।
কিন্তু মূলত আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই পুনর্বাসন দিয়েই সব জায়গায় সমস্যার সমাধান করা হয়েছে বলে বিএসএফের সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে কোনোেে ত্রই করিমগঞ্জের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যেখানে একটা শহরের কিছুটা অংশ বেড়ার বাইরে চলে যাবে।
তবে কোনো গ্রাম বা জনবসতি বেড়ার বাইরের ১৫০ মিটারের মধ্যে পড়ে গেলে মানুষের যাতায়াতের জন্য লোহার দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়। পরিচয়পত্র দেখিয়ে সেখান দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা যাতায়াত করতে পারেন ভারতীয়রা।
তবে সন্ধ্যায় দরজা বন্ধ হওয়ার পরে কোনো কারণে বেড়া পেরুতে গেলে বিএসএফ সদস্যরা হেনস্তা করেন বলেও অনেক সময়ে অভিযোগ ওঠে। তবে সীমান্তরী বাহিনী সেই অভিযোগগুলো সব সময়ে স্বীকার করে না।