নূর হোসেনের কথিত স্ত্রী মহিলা লীগের নীলার বর্তমানে তালাক স্বামীর সাথেই বসবাস
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নূর হোসেনের কথিত স্ত্রী মহিলা লীগের নেত্রী কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌসী নীলা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ, এসপি, র্যাব এবং শীর্ষ দলীয় নেতা ও আইনজীবীর কাছে গিয়েছিলেন এমনটাই দাবী করেছেন। যদিও নূর হোসেনের সাথে শেরাটন হোটেলের রাত্রিযাপন নিয়ে, স্কুলে ভর্তির সময় নিজের সন্তানের পিতার নাম নূর হোসেন উল্লেখ করা প্রসঙ্গে মহিলা লীগের এ নারী নেত্রীকে নিয়ে নারায়নগঞ্জে অনেক মুখরোচক গল্প চালু আছে। নীলার দাবী অনুসারে সম্পর্কে চাচা নূর হোসেনের জন্যই তার সুখের সংসার ভাঙ্গলেও কেউ তাকে সহযোগিতা কিংবা আইনী সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি। উল্টো ‘তাদের ভাই’ নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের র্যাব, পুলিশ, এসপি ও ডিসিসহ কোন নেতাই যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন ঐ সব পুলিশ কর্মকর্তা, দলীয় নেতা ও আইনজীবী। ‘নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের ক্ষমতা নেই নূর হোসেন ভাইকে স্পর্শ করতে পারে। পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা তার পকেটের লোক। নিজের জীবন যদি বাঁচাতে চান তাহলে নূর হোসেন ভাই যা বলেন তাই করুন-‘ এ পরামর্শ দেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার ও দলীয় কয়েক নেতা।
যে কারণে নীলা নূর হোসেনকে বস মেনে নিলেন
নীলা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তার পিতা আব্দুল মোতালেব জড়িত। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। আজ সিদ্ধিরগঞ্জে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা দেখা যায়। আগে তার পিতাসহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতা ছিলেন। তার পিতা রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করে আসছিলেন। নীলার প্রাক্তন স্বামী আবু সায়েম সোবহান একজন ব্যবসায়ী। কাঁচপুর চিটাগাং রোডে তার স্বামী পরিবহন ইজারাদার ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি ছিল তেলের ব্যবসা। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নীলা সিদ্ধিরগঞ্জ ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হন। ঐ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং নির্বাচনে সহযোগিতা চান। ঐ নেতাদের মধ্যে নূর হোসেন একজন। নীলা নূর হোসেনের কাঁচপুর সিমরাইলের বাসায় গিয়ে দেখা করেন। ঐ সময় নীলার উপর চোখ পড়ে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন নূর হোসেনের। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নীলা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর নূর হোসেন নীলাকে হাতছাড়া করতে নারাজ। যে প্রক্রিয়ায়ই হউক তাকে পেতে হবে। প্রথমে নীলার স্বামীর কাঁচপুরের পরিবহন ব্যবসা এবং পরবর্তীতে তেলের ব্যবসা কেড়ে নেন নূর হোসেন। নীলার দাবী, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কৌশলে ঝগড়া লাগিয়ে দেন নূর হোসেন। এ সুযোগে নীলার স্বামী সায়েমকে হত্যাসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় নূর হোসেন। তার কথা মতো না চললে সব হারাতে হবে। নীলার পিতার ব্যবসাও দখলে নেন নূর হোসেন। স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন নূর হোসেন। নূর হোসেনের এ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিকারের আশায় ঐ সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার, এসপি ও র্যাবের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ ও র্যাবের পক্ষে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়। নীলাকে দলীয় নেতারা পর্যন্ত একই কথা জানিয়ে দেন। একমাত্র কন্যা, স্বামী, পিতা ও নিজের জীবন রক্ষার্থে নীলা নূর হোসেনের হাতে বন্দী হয়ে পড়েন। এছাড়া ঐ সময় নীলার পক্ষে কিছু করার ছিল না বলে জানান।
স্বামীকে তালাক দিলেও নিয়মিত সম্পর্ক রেখেছিলেন
নীলা জানান, ২০০১ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ডের বাসিন্দা সায়েমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ বিয়ের উকিল পিতা নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। সে ঘরে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার বয়স ছয় বছর। সুখের সংসার ছিল নীলার। নরপিশাচ নূর হোসেন তার সেই সুখের সংসার অস্ত্রের মুখে কেড়ে নিয়েছে। তার স্বামীকে নূর হোসেনের ভয়ে গত বছর ২৫ জুন তালাক দেন। কিন্তু স্বামী সায়েমকে বলেন, তোমাকে আমি তালাক দেইনি। আমার, তোমার কন্যা ও আমার জীবন রক্ষার্থে এ কাজটি করেছি। নিয়মিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ ছিল। গত বুধবারও নীলা তালাক দেওয়া স্বামীর সঙ্গে একত্রে ছিলেন।
নূর হোসেনকে চাচা ডাকি এবং তাকে বিয়ে করিনি
নীলার দাবী, এক বছর ধরে নূর হোসেনের কাছে জিম্মি ছিলেন। তবে নূর হোসেন বিয়ে করতে পারেনি। যারা বলছে নূর হোসেনকে বিয়ে করেছি, তারা প্রমাণ দেখালে সব মেনে নিব। নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম নীলার উকিল পিতা। তাকে তিনি সব সময় চাচা ডাকতেন। নূর হোসেনের চাচার সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হতো। চাচার হাত ধরে রাজনীতিতে নূর হোসেনের আবির্ভাব। নূর হোসেনকে নীলা চাচা ডাকতেন। নূর হোসেন পেশাদার কিলার, মাফিয়া ডন, এটা তার জানা ছিল না। এক বছর তার জিম্মায় থাকার পর নূর হোসেনের অপকর্ম কাছ থেকে নীলার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। নূর হোসেন নীলাকে নিয়ে রূপসী বাংলা হোটেলে (সাবেক শেরাটন) নিয়ে রেখেছিল। নূর হোসেন নীলাকে নিয়ে ভারতের শিলিগুড়িতে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকদিন ছিল। কন্যাকে দার্জিলিং-এ ভর্তি করিয়ে দেয় নূর হোসেন। তখন এই নীলায় কন্যার পিতৃপরিচয় হিসাবে নূর হোসেনের নাম উল্লেখ করে।
নূর হোসেনের পক্ষে শুধু সাতটি হত্যাকাণ্ড নয়, সবই সম্ভব
এ দেশের পেশাদার কিলার ভয়ংকর সন্ত্রাসী, অপরাধ জগতের ডন বললে প্রথম নাম বলতে হবে নূর হোসেনের। সে ঠাণ্ডা মাথার কিলার। কত লোককে নূর হোসেন চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে খুন করেছে তার হিসাব নেই। বছরখানেক নূর হোসেনের একান্ত কাছাকাছি থাকায় তিনি সবই দেখছেন এবং জানতেন।
পরিবহনের চাঁদাবাজি, দখল, কোটি কোটি টাকার হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও অস্ত্রের চালান আসতো নূর হোসেনের আস্তানায় এবং শিমরাইলের বাসভবনে। প্রতি মাসে তার কয়েক শত কোটি টাকা আয়। এক শ্রেণির পুলিশ, র্যাব কর্মকর্তা, কয়েকজন আইনজীবী, সমাজবাদি ও প্রায় সকল নেতা নূর হোসেনের কাছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় গিয়ে টাকার প্যাকেট নিয়ে আসতেন। এ কারণে নূর হোসেন কোটি কোটি টাকার মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা এবং চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রকাশ্যে চলতো। মোটা অংকের উেকাচের কারণে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন নূর হোসেনের কাছে অন্ধ ছিল বলে নীলা জানান।
যারা নজরুলের চাচার জন্য মায়া কান্না কাঁদে তারাও প্যাকেট আনতো
নীলা জানান, নজরুলসহ সাতটি হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি তার পিতার চিকিত্সার জন্য ভারতে ছিলেন। এখন কাউন্সিলর নজরুলের জন্য যারা মায়া কান্না করছেন, তাদের কেউ কেউ জামাই-শ্বশুর মিলে নূর হোসেনের বাসায় গিয়ে প্রতিদিন উৎকোচের প্যাকেট আনতো। ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ে অনেকের সঙ্গে বিরোধ ছিল নজরুলের। নূর হোসেনের পকেটের লোকরাও নজরুলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে মায়াকান্না করছেন।
নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান নীলাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বের হবে বলে দাবি করেন। নীলা নূর হোসেনের ৬ নম্বর স্ত্রী শহীদ চেয়ারম্যানের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নীলা বলেন, শহীদ চেয়ারম্যানের অভিযোগ সঠিক নয়। শহীদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে নীলা দাবি করেন।