শ্রীমঙ্গলে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ঘুষ না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বন্ধ!

ghushকমলগঞ্জ প্রতিনিধি: সরকারি একজন কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় একজন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা। ২৩ জানুয়ারী শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল প্রেসকাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলী আশরাফ লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামান তাঁর কাছে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ না পেয়ে তাকে তাঁর চলমান মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ব্যাংকের চিঠি দিয়ে বন্ধ করে দেয়ায় তিনি চরম দূর্ভোগে দিনানিপাত করছেন। তবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামন তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এ সব অভিযোগ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত ছৈয়দ আলী মাষ্টারের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী আশরাফ জানান তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাড়ি তৈরি করে শ্রীমঙ্গল শহরের জালালিয়া সড়কে সপরিবারে বসবাস করে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে তিনি চাঁদপুর অঞ্চলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর নাম কল্যাণ ট্রাষ্ট, ভলিয়ম নং-৪, ক্রমিক নং-৩৪৪২৮, গেজেট নং-১৪৯৬, তারিখ : ২১/০৫/২০০৫খ্রি., মুক্তিবার্তা নং-০২০৪০৫০২২০ তাঁর নাম তালিকাভূক্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে সাময়িক সনদপত্র যার স্মারক নং-মুবিম/সা/চাঁদপুর/প্রা-৩/২০/২০০২৫/৪২৯, তারিখ-২৪/০৩/২০০৩খ্রি. তিনি পেয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত সপরিবারে শ্রীমঙ্গল শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এ কারণে তিনি নিজ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা গ্রহণ না করে শ্রীমঙ্গলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র, বাড়ির দলিলপত্র ইত্যাদি কাগজাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় হতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তাঁর সকল কাগজপত্র যাছাই-বাছাই পূর্বক মোঃ আলী আশরাফকে সম্মানী ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় এবং ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট তা বাস্তবায়নের জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সমাজসেবা কর্মকর্তা তাঁর কাছে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন বলে অভিযোগ আলী আশরাফের। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ কারনে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার বই তাঁকে না দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকেন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে সম্মানী ভাতার বই প্রদানের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামানকে নির্দেশ দিলে তিনি বই প্রদান করেন। এরপর থেকে তিনি যথারীতি সম্মানী ভাতা পেয়ে আসছেন। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তেলনে সোনালী ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখায় গেলে তাঁকে জানানো হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. আসিকুজ্জামান স্বাক্ষরিত ব্যাংক ব্যবস্থাপক বরাবরে প্রেরিত এক পত্রে (পত্র নং-৮২৪/২০১৫, তারিখ-২২ ডিসেম্বর ২০১৫খ্রি.) বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা ২০১৩ এর প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি ‘গ’ ধারা মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের সম্মানী ভাতা বন্ধ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ লিখিত বক্তব্যে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা ২০১৩ এর প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি ‘গ’ ধারায় উলেখ করা হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা গ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীগণ সংশিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সংশিষ্ট জেলা প্রশাসক, পৌরসভা ও উপজেলার ক্ষেত্রে সংশিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নিকট নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্র দাখিল করবেন। তবে একই নীতিমালার ‘ক’ ধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘পূর্ব থেকে যারা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করেছেন তাঁদের সম্মানী ভাতা প্রদান অব্যাহত থাকবে।’ মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ বলেন ‘যেহেতু আমি নীতিমালা প্রণয়নের পূর্ব থেকেই সম্মানী ভাতা প্রাপ্ত সেহেতু আমার ভাতা বন্ধ হবার কোন কারন নেই। শুধুমাত্র উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামানকে তাঁর দাবিকৃত ৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদান না করায় তিনি বারবার আমার সাথে এ ধরণের আচরণ করে চলেছেন।’ এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আসিকুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন ‘তিনি প্রায় এক বছর যাবত আমাকে ডিস্টার্ব করে আসছেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে অযথা ৫ হাজার টাকার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি যে জেলার বাসিন্দা সে জেলা বা উপজেলা থেকে সম্মানী ভাতা নেবার কথা। তিনি এ জেলা বা উপজেলার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা নন। তাঁকে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে ভাতা নিতে হবে। এছাড়া ইউএনও স্যার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা থেকে ভাতা নিতে হবে। তিনি বিধি মোতাবেক ইউএনও স্যারের সাথে বসে যদি ভাতা প্রাপ্ত হয় তবে নিতে পারেন। এতে আমার কোন বাধা নেই। নীতিমালা অনুযায়ী ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তার ভাতা বন্ধ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এবং তাঁর অন্যায় বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনয়ন করে চলেছেন। যাছাই-বাছাই কমিটি সকল বিষয় অবগত রয়েছেন বলে তিনি জানান।