ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিএনপির ২৩ জেলা কমিটি
ডেস্ক রিপোর্টঃ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এখনও পুনর্গঠন হয়নি, অথবা বিরোধ দেখা দিয়েছে এমন প্রায় ২৩ জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিএনপি। এসব জেলার নামের তালিকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে রয়েছে।
কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে এমন জেলাগুলো হল: রাজশাহী মহানগর, রাজশাহী জেলা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চাপাই নবাবগঞ্জ, বগুড়া, চট্টগ্রাম মহানগর, বরিশাল মহানগর, বরিশাল জেলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রংপুর।
একই সঙ্গে বিএনপি সিলেট মহানগর ও জেলাসহ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে ১২টি জেলায়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান ৯ আগস্ট একটি চিঠিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা, মহানগর ,থানা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে বলেছেন। ৯ আগস্ট ওই চিঠি যাওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় কাজ শুরু হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে থাকা ও পৌর নির্বাচনের কারনে পুনর্গঠন থমকে যায়। পৌর নির্বাচনের পরে আবার পুনর্গঠনের ওপর জোর দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর মার্চ এপ্রিলের দিকে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয়ে হোম ওয়ার্ক চলছে দলটিতে।
বিএনিপর গুলশান কার্যালয় সূত্র বলছে, যেসব জেলায় সাংগঠিনক কাজ ঝিমিয়ে পড়েছে- এমন জেলা কমিটি ভেঙে দিতে তালিকা করা হয়েছে। দায়িতপ্রাপ্ত নেতারা তালিকা তৈরি করে খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন। এখন বিএনপি প্রধান যেকোনো সময়ে ওই কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করবেন।
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে খালেদা জিয়ার সামনে হাজির করতে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এর আগে প্রায় প্রতিটি তৃণমূল সভায় মতবিনিময়ে খালেদা জিয়া বলছেন, ‘নতুন নেতৃত্ব চাই। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে কমিটি করা হবে। পুরোনো নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন হবে না। প্রবীণরা পরামর্শ দেবেন। নেতৃত্বে থাকবেন তরুণরা। তারাই সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন।’
দলে প্রভাবশালী নেতাদের একাধিক পদ-পদবী দখলে রাখার অচলায়তন ভাঙতে পারছে না বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সঙ্গে সঙ্গে জেলা কমিটির শীর্ষ পদও দখল করে রয়েছেন অনেক নেতা। বছরের পর বছর ধরে চলছে। বহুকাল অধিকাংশ নেতাই আঁকড়ে রেখেছেন দুইয়ের বেশি বিভিন্ন স্তরের পদ। একাধিক পদ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশ মানেন না দলের কোনো নেতা। তারা বিভিন্ন অজুহাতে পদ দখল করে আছেন। নির্বাচনী এলাকায় নিজের প্রভাব ধরে রাখতেই তারা এসব পদ আঁকড়ে আছেন। বছরের পর বছর ধরে পদবঞ্চিত হয়ে থাকতে হয় মাঠ পর্যায়ের অনেক ত্যাগী যোগ্য নেতাকর্মীদের। এ থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন, এক নেতা এক পদের বেশি পদে থাকতে পারবেন না।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের ৭৫টি জেলা কমিটির প্রায় সবগুলোই মেয়াদ উত্তীর্ণ। অধিকাংশ জেলায় ‘নেতায়-নেতায়’ আধিপত্যের লড়াইয়ের কারণে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও বিরোধ মেটেনি। তাই কমিটিও নতুন হয়নি। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চূড়ান্তরকমের থাকায় অনেক জেলায় বিএনপির একযুগেও কমিটি হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জেলা কমিটিগুলোর অধিকাংশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেক আগেই কমিটিগুলো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও নানা কারণে তা কার্যকর করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এখন আগের কমিটিগুলো ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দলের পুনর্গঠন করা নিয়মিত কাজ। যেসব জেলায় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে ভেঙে নতুন কমিটি করা হবে। পৌর নির্বাচনের কারণে কিছুটা দেরি হলেও এখন শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিরোধপূর্ণ জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কমিটির মধ্যে যারা দলে সময় দিচ্ছেন না, ‘দেশের বাহিরে চলে গেছেন বা নিজ নিজ ব্যবসায় জড়িত এমন নেতাদের বাদ দিয়ে সক্রিয়দের কমিটিতে স্থান করে দেওয়া হবে। আমরা মার্চে জাতীয় কাউন্সিল করতে চাই । এর আগে সব জেলা কমিটি পুনর্গঠন শেষ করবো।’