ইতালিয়ান হত্যায় আইএস জড়িত এমনটা আমি মনে করি না
নিউইয়র্ক থেকে এনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি এবং জামায়াতকে এখন আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। ওরা হচ্ছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদি দল। আগাম নির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, আগাম নির্বাচন কেন? আমরা যে উন্নয়ন করছি তা কি পছন্দ হচ্ছে না? সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী যারা জাতীয় সংসদে বিরোধী দল বলে বিবেচিত তারাই হচ্ছে আসল বিরোধী দল। অন্যদিকে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যায় আইএস জড়িত আছে এটা আমি মনে করিনা। তবে এ ব্যাপারে বিএনপির এক নেতা অতি উৎসাহী হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। আমি দেশে গেলে তাকে ইন্টারোগেশন করা হবে বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ( নিউইয়র্ক সময়) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রী তার জাতিসংঘ সফরের প্রসঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ নিয়েও বিস্তারিত বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন। শেখ হাসিনা কানের চিকিৎসার ফলোআপের জন্যে যাবেন বিধায় লিখিত বক্তব্যের সারাংশ উল্লেখ করেই পুরো সময় সাংবাদিকদের দিয়ে দেন। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গিদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং মশিউর রহমান, জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি আব্দুস সোবহান গোলাপ, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মতলুব আহমদ প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান প্রমুখ।
প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনায় সহায়তা করেন মিশনের প্রেস সেক্রেটারি বিজন লাল দেব। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারটি ঝুলে রয়েছে আদালতের কারণে। আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে জাতিরজনকে সপরিবারে হত্যা, ৭ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় ৪ নেতা হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে হত্যা আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও তা থেকে জাতি আজ পরিত্রাণ পেয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে যারা হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে আগে ফায়দা লুটেছে তারা কখনোই চাইবে না ওগুলোর বিচার হউক। সে জন্যেই তারা নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তেমন অবস্থাতেও আমরা জনজীবনে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি। তবে কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তেমন ঘটনা এই আমেরিকাতেও ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুল ইসলামকেও হত্যা করা হয় এই সিটিতেই। কানেকটিকাটে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সম্পাদক বেলাল তরফদারকে। পেট্রল বোমা নিক্ষেপসহ নানা সন্ত্রাসবাদে লিপ্তদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় সচেষ্ট রয়েছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে মানুষের নিরাপত্তা দিতে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোট নির্বাচনে না গিয়ে মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। ২০১৩ সালে তারা খুন-খারাপি শুরু করেছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তা চলেছে। আবার ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত একই ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে হবে। কোন খুনীই রেহাই পাবে না। যে যেখানেই থাকুক না কেন? যত চেষ্টাই করুক, সে যেই হউক-তাদের বিচার আমরা করবোই।
বাংলাদেশে আদৌ কোন বিরোধী দল আছে কিনা সে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী যারা জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে বসছেন তারাই সত্যিকারের বিরোধী দল। তবে আমাদের দেশে আরেকটি দল আছে যারা নির্বাচনে যায়নি, নির্বাচনের পথ ছেড়ে দিয়ে যারা জঙ্গিবাদি, সন্ত্রাসী, জ্বালাও-পোড়াও করেছে তারা রাজৗনৈতিক দল হতে পারে না। তারা জঙ্গিবাদি দল। ২০১৯ সালের আগে জাতীয় সংসদের আগাম কোন নির্বাচনের সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে কিনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আগাম নির্বাচন কেন? আমরা যে উন্নয়ন করছি এটি পছন্দ হচ্ছে না? হ্যাঁ, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন পছন্দ করবে না তারাই আগাম নির্বাচনের জন্যে চিৎকার করবে। আর আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে উন্নয়নের গতিও বাড়তে থাকবে। তাই জনগণ কোনটি চাইছে সেটি জণগণকে জিজ্ঞাসা করতে বলবেন। শেখ হাসিনা বলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই সামনের নির্বাচন হবে। এ নিয়ে কোন চিন্তার কারণ নেই।
বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব আছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে দেশে একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠি মানুষ পুড়িয়ে মারে, মানুষ হত্যা করেই যারা দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী করতে চায়, এমন কিছু লোকতো বাংলাদেশে রয়েছে। তারাতো চাইবেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সে শ্রেণীর লোকদেরই কর্মকান্ড এগুলো। একজন মানুষ মারা গেছে সেটি আমরা জানি। এজন্যে আমরাও দু:খিত এবং এটি অত্যন্ত দু:খজনক ঘটনা। তবে আইএস এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে বলে যে দাবি উঠেছে সেটি আমরা যদ্দুর জানি, শিকাগো থেকে একটি মেসেজ দেয়া হয়েছে যে, এটি আইএস করেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ এমন দাবি করেছে বলে এখন পর্যন্ত কোন মেসেজ পাইনি। তবে বাংলাদেশই শুধু নয়, এখন বিশ্বব্যাপী এমন সন্ত্রস্ত পরিস্থিতি তৈরীর একটা চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা কোন জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করি না। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানও আমরা চাই না। এই নিউইয়র্ক শহরেও আওয়ামী লীগ নেতা নজমুলকে হত্যা করেছে দুর্বৃৃত্তরা। তাই বলে কি এই সিটিতে রেড এলার্ট জারি করেছিল? আমরা অবাক হয়ে দেখলাম যে, বিভিন্ন দূতাবাস থেকে রেড এলার্ট জারির পরই বিএনপির একনেতা জোর গলায় কথা বলছেন। এখনতো সন্দেহ হয় যে, ওনাকে (বিএনপির ঐ নেতাকে) ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত যে, ঐ ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা। আমি দেশে ফিরে সে ব্যবস্থাও করবো। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসকাবে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফ্রন্ট আয়োজিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে সরকার এ দেশে নানা জঙ্গিগোষ্ঠী ক্রিয়াশীল রয়েছে বলে পশ্চিমা বিশ্বকে জুজুর ভয় দেখিয়ে আসছে। এখন তারাই সেই জুজুর শিকার হয়েছে।’
ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া কেন আসছে না সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অনেকগুলো খেলা হয়েছে। এমন কোন পরিস্থিতিতো কেউ দেখেনি বা ঘটেনি। এছাড়া, এতটুকু বলতে পারি যে, আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এবং জনসাধারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খেলাধূলা পরিচালনায় সবধরনের সহায়তা দিয়ে থাকেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও যথেষ্ট পারদর্শিতার সাথে সকলের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর। তিনি মিনি অলিম্পিকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সে সময় সামান্য বন্যা হয়েছিল। সেটিকে পুঁজি করে যত ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।
২০১৯ সালের আগে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায় দেশবাসী দেখতে পাবে কিনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এটিতো আদালতের ব্যাপার। আমিতো জজ সাহেব বসিনি। তবে অন্যায় যে করবে তার বিচার হবেই। এটিই বাস্তবতা। এদিকে, বিকেল চারটায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল থেকে সাসটোনেইবল ডেভেলপেন্ট গোল বাস্তবায়ন বিষয়ক এক সেমিনারে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন’র সঞ্চালনায় এতে নেদারল্যান্ডেস’র রাজা উইলিয়াম আলেকজান্ডারের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন আফ্রিকার বেনিন’র প্রধানমন্ত্রী বণি ইয়া-ই ও সুইডেন’র প্রধানমন্ত্রী স্টেফেন লভেন, জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবশেন’র প্রেসিডেন্ট মগেনস লিক্কেটফ্ট, উইএনডিপির একমাত্র মহিলা প্রশাসক হেলেন কার্ক জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতিনিধি ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।এসময়ে প্রধানমন্ত্রী’সহ উভয় বক্তাই জিডিপির উন্নয়ন, জলবায়ু মোকাবেলায় সাহসি ভূমিকা’সহ এমডিজি ও এসডিজি বাস্তাবায়নে বাংলাদেশের ভূয়শী প্রসংশা করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সোজা চলে যান জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন কার্যালয়ে। এরপর অংশ নেন সংবাদ সম্মেলনে। আগামী কাল (বুধবার) সকাল ন’টায় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৪তম বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন তিনি।