সিলেটের উন্নয়নের দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী
সিলেট আওয়ামী লীগের অন্যতম ‘শক্তিশালী ঘাঁটি’। জাতির জনকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী লীগ। জোট সরকারের সময় সিলেটে মৌলিক উন্নয়ন হয়নি
নুরুল হক শিপুঃ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতিকালে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যৌথসভায় মিলিত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট (বিজি-০১৬) সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রাবিরতিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করে বিমানবন্দরে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য দেন বলে জানান দলীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতেই দেশবাসীকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেট আসার সুযোগ হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে। এর আগের কোনো সরকারই ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। তাই প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে আগের থেকে অনেক বেশি উৎসাহ বোধ করছেন। সিলেট বিভাগের তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে আরও চাঙা এবং শক্তিশালী করার জন্য নেতাদের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে হবে। দলে কোন রকমের অনৈক্য থাকা চলবে না। সবাইকে একজোট হয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার ব্যাপারেও আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীকে সর্তক থাকতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিলেট আওয়ামী লীগের অন্যতম ‘শক্তিশালী ঘাঁটি’। সিলেটের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন। তাই সিলেটের আওয়ামী লীগ প্রিয় জনগন প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরকেই বিজয়ী করেছেন। তিনি বলেন, আজ ইংল্যান্ডে তিন বাংলাদেশী বিজয়ী হওয়ার পিছনে সিলেটের প্রবাসীদের অবদান রয়েছে।’
অতীতে চারদলীয় জোট সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে সিলেটে শুধু বিল্ডিং পরিবর্তন করে নামকরণের উন্নয়ন করা হয়েছে। কোন মৌলিক উন্নয়ন হয়নি। জোটের বাঘা-বাঘা নেতারা কোনোই উন্নয়ন করেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা, রেলস্টেশন আধুনিকায়ন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উন্নয়ন, সিলেটে পূর্ণাঙ্গ সেনানীবাস, নতুন করাগারসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেটকে একটি সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত করতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, অব্যাহত থাকবে।’
বঙ্গবন্ধুর সকল পরিকল্পনার প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন-তা নয়, স্বাধীনতা অর্জন করার পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কিভাবে গঠণ করা হবে, কোথায় কি কি কাজ করতে হবে সবকিছুর পরিকল্পনা করে গেছেন। জাতির জনকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই বাকি ছিল। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনা ও উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। সেই নীতিতে আমরা অবিচল থেকেই একেক করে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পেরেছি। প্রতিবেশী চারটি রাষ্ট্রের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তি করে গিয়েছিলেন। এই চুক্তি বাস্তবায়নে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে তৃতীয় সংশোধনী এনেছিলেন। কিন্তু এতোদিন ভারত তাদের সংবিধান সংশোধনী না করায় চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত ৭ মে ভারত সংবিধান সংশোধন ও আইন পাশ করায় স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর আগে আমরা মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র বিজয়ও করেছি। এখন আমরা নদী সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। ভারতের ৫৪টি নদী বাংলাদেশে এসে সংযুক্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে যে সমস্যা বিরাজমান রয়েছে তার সমাধানের ব্যাপারেও আমরা আশাবাদী।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে ‘জিয়া, এরশাদ, খালেদা ও তত্ত¡াবধায়ক সরকার’ দেশ চালালেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের স্বার্থে এসব সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।’
সিলেটের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের বিচার করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরে যাত্রাবিকরতিকালে সিলেট আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বক্তব্য রাখেন। দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের ৫ জন নেতা।
তারা হলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সবুজ সিলেটকে জানান, ‘জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিলেটের উন্নয়ন হচ্ছে আরো হবে। তিনি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরাসরি প্লাইট অবতণের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখবেন। কামরান বলেন, নেত্রী দলকে আরো চাঙা করার ব্যাপারে নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন। আর নানান সাফল্যজনক অর্জনের কারণে আমরা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে সিলেটে একটি সংবর্ধনা দেওয়ার আগ্রহের কথা জানাই। তিনি জবাবে বলেন, টিউলিসহ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত তিন এমপিকে সিলেটবাসীর উদ্যোগে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে অব্যাহত থাকে, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, সিলেট-হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘জননেত্রীর শেখ হাসিনা প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। তিনি একটি কথা স্পষ্ট করে বলেছেন, সবার উপরে দল, তাই দলকে সব সময় সুসংগঠিত রাখতে হবে। সিলেটে সরকারের অর্জন প্রসঙ্গে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলেন এবং সিলেটের আরো উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রার জন্য বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে দায়িত্ব নিয়েছেন।’
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ‘সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান সবুজ সিলেটকে জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন। এ সময় আমি প্রধানমন্ত্রীকে সিলেট-২ আসনের ওসমানীনগর থানাকে উপজেলা, গ্যাস ও বিদ্যুতের উন্নয়নের জন্য বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলাবাসীসহ সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানাই। শফিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করি। ৬টি উপজেলার কমিটি ইতোমধ্যে গঠনের বিষয়টিও জানাই। কার্যক্রমের কথা শুনে তিনি সস্তুষ্টি প্রকাশ করেন।’
এদিকে ১০ টা ৭ মিনিটের দিকে বিমামটি অবতরণ করলে বিমানের পাশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমেই স্বাগত জানিয়ে বরণ করেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, সিলেট-হবিগঞ্জের নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুনেচ্ছা হক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সকাল ১১টা ৮ মিনিটের সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
বিমানবন্দরে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, আওয়ামী লীগ নেতা জগলু চৌধুরী, যুবলীগের আহবায়ক আলম খান মুক্তি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ, মহানগরের সভাপতি রাহাত তরফদার প্রমুখ।