পক্ষি : মোঃ শামীম মিয়া
সেদিন স্কুলে ক্লাসে স্যার,আমাদের পড়াছেন এমন সময় স্যার বলছেন তোমরা কী বলতে পারো পক্ষি শব্দের অর্থ কী ? আমি সহ সবাই ঠোট ভ্যাংছিয়ে বললাম, জানিনা স্যার। স্যার, বললো এই সাধারণ শব্দের অর্থ জানো না। তোমরা যত উপর ক্লাসে উঠবে তত কঠিন জঠিল বানান শব্দ পাবে। আমি বললাম, স্যার আমরা তো মাত্র তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি এতো কঠিন জঠিল ভাষা শিখব কি করে ? স্যার আপনী আমাদের প্রতিদিন একটি করে নতুন জটিল কঠিন শব্দের অর্থ শিখাবেন তাহলে আমাদের আগামীতে সমস্যা হবে না। স্যার এবার, বলেন পক্ষি শব্দের অর্থ কী ? স্যার, বললেন পক্ষি শব্দের অর্থ পাখি।
আমি এই কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলাম। এমন সময় স্যার , এসে আমাকে ঠাস করে একটা চর মারেন। শব্দহীন ক্লাস রুম। এমন সময় স্যার বললেন, বলতে পারলি না আবার হাসলি কেন? দুষ্টামী স্যারের সাথেও করিস। পড়া শুনায় ভালো হলেই হয়না, শিক্ষককে সম্মান করা শিখতে হবে। আমার চোখের পানিতে বুকটা ভিজে যাচ্ছে। দ্বাড়িয়ে স্যারকে বললাম স্যার আসলে তা না। আমি এই জন্যই হাসছি আমি বেশ কয়দিন আগে একটা পোষা পাখি এনেছি আমদির পাড়া গ্রাম থেকে। স্যার তার নাম রেখেছি পক্ষি, আসলে আমি এমনীতেই তার নাম রাখি পক্ষি তবে জানতাম না স্যার, পক্ষি শব্দের অর্থ পাখি। আজ তা মিলে গেলো স্যার, সত্যি বলছি স্যার আমি আনন্দেই হেসে উঠেছিলাম। স্যার বললেন, ঠিক আছে সবাই পড়াশুনায় মনোযোগ দাও।
সব ক্লাস শেষে আমি বাড়িতে এসে পাখির সাথে কথা বলছি। পাখি কথা বলতে পারেনা তবুও। আমার ছোট্ট বেলার প্রিয় বন্ধু ভাতি। এসে আমার আর পক্ষির বন্ধুত্ব দেখে বললো, সত্যি তুই তোর পক্ষিকে খুব ভালোবাসিস তাইনা। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম হ্যাঁ। এর মধ্যেই আমার মাথার উপরে এসে একটা পাখি চিঃ চিঃ চিঃ করছে। পাখির দিকে তাকাতেই আরো দশ বারোটি পাখি আসলো । তারাও চিঃ চিঃ চিঃ করছে। আমি ওদিকে কান না দিয়ে চললাম ভাতির সাথে খেলতে।
ঠিক সন্ধ্যার আগে আসি আবার বাড়িতে। মা জননী আমাকে বললেন, পাখিটা কৈ থেকে এনেছিস ? আমি বললাম আমদির পাড়া গ্রামের বটগাছ থেকে। মা বললো, বাবা পাখিটিকে সেখানেই রেখে আসিস। আমি বললাম কেন গো মা ? কী হয়েছে ? মা কোন কথা তখন না বলে রান্না করতে গেলেন। আমি পড়তে বসে ভাবছি মা এমন করে বললো কেন ? আমি তো পক্ষিকে এনেছি পোষার জন্য। রাতে খেয়ে মা জননীর বুকে মাথা দিয়ে বললাম, মাগো তুমি এমন করে বললে কেন ?,গো। মা জননী বললো কী বললাম ? আমি বললাম পক্ষিকে রেখে আসতে বললে। মা বললো, বাবারে পাখি আনার পর থেকেই খাঁচাটির আশে পাশে অসংখ্য পাখি ঘুরা ঘুরি করছে। জানিস বাবা ওই পাখি গুলো কেন ঘুরছে ? আমি মাথাটা ঘুরিয়ে বললাম কেন ঘুরছে মা পাখি গুলো। মা বললো, যে পাখি গুলো খাঁচাটির আশেপাশে ঘুরছে সেই পাখি গুলোর মধ্যে আছে খাঁচায় বন্দি পাখি ছানাটির মা-বাবারাও। তারা তার ছানাকে নিতে এসেছে। বাবা, আমি যদি এক মহুত্য না থাকি, তাহলে তোর কেমন
লাগে ? আর তুই না থাকলে আমার কেমন লাগে বল ? মার মুখে এমন কথা শুনে আমার গা শিহরে উঠলো। আমি মাকে বললাম, মা এমন করে বলছো কেন। মা বললো, বাবা পাখিটি কে সকালেই ছেড়ে দিবি, নইলে যেখান থেকে এনেছিস পাখিটি সেখানেই রেখে আসবি। তাছাড়া পাখি গুলো মন্নি দিবে, গুনা হয়। পড়াশুনা হয়না। পাখিদের সুন্দর বাহিরেই দেখা যায়। বাবা তোকে কে বলেছে খাঁচায় পাখি কে সুন্দর দেখা যায়। বনের পশুপাখি বনেই ভালো দেখায়। যদি পাখিকে ভালোই বাসতে চাস তাহলে যদি দেখিস পাখির ছানা মাটিতে পরে আছে, সেই ছানাটিকে পাখির বাসায় রেখে আসবি। কেউ যদি পাখির ডিম পারে বা ভাঙ্গতে চায় তাকে বুঝিয়ে ডিম গুলো পাখির বাসায় রেখে আসবি। আমি মার মুখে এমন কথা শুনে। বুঝতে পারলাম আমি বড় ভুল করছি, তাই মাকে বললাম, মাগো আমি সকাল বেলাই পাখির ছানা পাখির বাসায় রেখে আসবো।
পরেরদিন, সকালে পাখির ছানা পাখির বাসায় রেখে আসবো এমন সময় দেখলাম গতকালের পাখি গুলো আবারো এসেছে। চিঃ চিঃ চিঃ করে উড়ছে আমাকে ঠোকোর দিতে আসছে বারবার। আমি দৌড়ে মার কাছে গেলাম। মাকে বললাম মা, পাখি গুলো তো ঠোকোর দিতে চায়। আমার ভয় লাগছে। মা বললো, ভয় না করে খাঁচা থেকে পাখিটাকে বাহিরে রাখ তাহলেই মা পাখি, তোর পক্ষি কে নিয়ে যাবে। তাই করলাম, এবার আড়ালে লুকিয়ে গেলাম । দুর থেকে দেখছি কী করে ? কিছুক্ষন পর অবাক হয়ে গেলাম। মা পাখি তার ছানাকে মুখে করে নিয়ে গেলো যানি না কোথায় যেন। আমি শুধু দুর থেকে টাটা দিলাম পক্ষিকে। তবে মনে মনে বললাম মা তো মা-ই, মায়ের তুলনা কারো সাথে হয়না। তোমাকে সালাম মা, হাজার বার সালাম। মা, মায়ের কষ্ট সহজে বুঝে নিলো। তারপর হাসিমাখা মুখে মার কাছে গেলাম, খাওয়া দাওয়া শেষে আবারো প্রতিদিনের মত স্কুলে গেলাম। সমাপ্ত