সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাস ছাড়তে ছাত্রলীগের বাধা ॥ রাতে সিলগালা

politechnicসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ‘বঙ্গবন্ধুর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। প্রশাসনের দালালী চলবেনা, চলবেনা। সুরমা ছাত্রাবাস বন্ধ কেন জবাব চাই।’ এরকম শ্লোগানে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে উত্তাপ ছড়িয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল বিকেল ৪টা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল করে উত্তাপ ছড়ালে এবং ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থানের কারণে পিছু ছাত্রবাসে অভিযান দিতে পারেনি পুলিশ। পরে দফায় দফায় বৈঠক হয় ক্যাম্পাস। এরপর রাত ৮টায় ৭০ থেকে ৮০ জন পুলিশ সদস্য অভিযান চালান ছাত্রাবাসে। অবস্থানকারী ছাত্রদের তারা অন্যস্থানে চলে যেতে অনুরোধ জানান। পরে সুরমা ছাত্রাবাস সিলগালা করে পুলিশ।
সূত্রমতে, পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ সুশান্ত কুমার বসুর বাসায় হামলা ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার পর সরকারের উপর মহলের নির্দেশে পুলিশ ছাত্রবাস থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে যায় বিকেল ৪টায়। কিন্তু ক্যাম্পাসে সাড়ে ৩টা থেকে অবস্থান করে মহানগর ছাত্রলীগ ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা ক্যাম্পাসে মিছিল করে। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে বসে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশ ছিল নিরব দর্শকেরমত। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে র‌্যাবের একটি টহল টিম ক্যাম্পাসের সামনে দেখা যায়। তারা ১০ মিনিটেরমত ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করেন। এসময় তাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায় মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতাকে। এরপরই চেলে যান র‌্যাব সদস্যরা। এর আগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কথা বলেন দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের সাথে। তারা পুলিশকে বলেন, যদি ছাত্রলীগ নোকর্মীরা অধ্যক্ষের বাসায় হামলা করে থাকে আর তা যদি প্রমান করা যায় তাহলে ছাত্রলীগ নেতারা তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। নেতাকর্মীরা বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি ৪ থেকে ৫ জন দুর্বৃত্ত অধ্যক্ষের বাসায় হামলা চালিয়েছে। যার কারণে কলেজের অসহায় ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে কেন সুরমা ছাত্রবাস থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। অপরাধ করবে ৪ থেকে ৫ জন আর সাজাভুগ করবে ৩০০ ছাত্র তা ছাত্রলীগ থাকতে কখনই হতে দেয়া যাবেনা। তারা বলেন, কলেজের কিছু সংখ্যক শিক্ষক এমনকি তাদের স্ত্রীরাও জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা প্রতিষ্ঠানে তাদের দুর্নীতি আর অপকর্ম চালাতে না পেরে ছাত্রলীগকে কোনঠাসা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী আসছেন আসার পরই জামায়াত প্রন্থীদের প্রতি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাদেরকে জানানো হয়েছে।
রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছাত্রদের অন্যত্র সরে যেতে বললে ছাত্ররা সরে যায়। পরে পুলিশ সুরমা আবাসিক হল সিলগালা করে।
দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম খান জানান, আমরা সরকারের উপর মহলের নির্দেশেই ছাত্রবাস খালি করতে যাই। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। পরে রাত ৮টায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অভিযান চালিয়ে হলটি সিলগালা করা হয়।
এদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মিছিল চলাকালে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মুসাদ্দেক হোসেন মুসা, মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক ইলাসী দিনার, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাশ, আবু সিদ্দিক সুবেল, ধর্ম সম্পাদক বিদ্যুৎ ভূষন, পলিটেকনিক ছাত্রলীগ সভাপতি সৈইকত চন্দ্র রিমি, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল জলিল পারভেজ, মিটু মোহন দেব, যুবলীগ নেতা গৌরাঙ্গ কুমার চন্দ্র, জেলা ছাত্রলীগ নেতা সুবায়ের আহমদ সুহেল, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সাজন মিয়া, ফয়ছল আহমদ, আপু দাশ, দিপু রায়, কামরুল হাসান সুমন, আকিব অপু, মঞ্জুর আহমদ, লিমন এস, লিমন কান্তি, পলিটেকনিকের ছাত্র জসিম উদ্দিন রানা, শান্ত আহমদ, শেখ রাজু, সুমন কানন, হৃদয়, রুপম, মিশু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, চাহিদামতো চাঁদা না দেয়ায় সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষের বাসায় গত ২৫ জনিুয়ারি হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তারা অধ্যক্ষের বাসায় রাখা সরকারি গাড়ি ও বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সুশান্ত কুমার বসু ৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৪০-৪৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার কোনো আসামী গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।