সুনামগঞ্জ জেলা আ.লীগের সম্মেলন স্থগিতের নেপথ্যে
ইয়াহইয়া মারুফঃ র্দীঘ ১৭ বছর পর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হবে আশায় যখন তৃনমুলের নেতাকর্মীরা আনন্দিত। ঠিক তখন সুনামগঞ্জ আওয়ামীলীগের একটি চক্র নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের আনন্দকে ধ্বংস করে সম্মেলন স্থগিত করানো হয়। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন গতকাল শনিবার অনুষ্টিত কথা ছিল। কিন্তু তৃনমুলে যখন সব আয়োজন সম্পন্ন ঠিক তখন গত বুধবার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অসুস্থতার কথা বলে সম্মেলন স্থগিত করেন। তবে আগামী সাপ্তাহে সম্মেলন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট। কিন্তু সম্মেলন স্থগিত নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে, নিজ নিজ উপজেলায় কমিটি গঠনেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন জেলার সহসভাপতি, দুই সংসদ সদস্য। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তাদের মতামত না নিয়েই এসব উপজেলা ও থানা কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন জেলা নেতৃবৃন্দ বলে অভিযোগ তুলেছেন কমিটি বঞ্চিতরা।
এ নিয়ে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব আরো বেড়েছে। তবে তৃনমুল নেতাকর্মীদের অভিযোগ জেলার চার এমপিসহ কিছু স্বার্থনেষী কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝানোর ফলে কেন্দ্র শেষ মুহূর্তে এসে জেলা আ.লীগের সম্মেলন স্থগিত করে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নানা নাটকীয়তার পর চার এমপি ও জেলা পরিষদ প্রশাসকের চাপের মুখে কেন্দ্র শেষ মুহূর্তে এসে জেলা আ.লীগের সম্মেলন স্থগিত করে। যদিও জেলার ওই সব নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বেশি অসুস্থ থাকায় সম্মেলন পেছানো হয়েছে।
অন্যদিকে, সম্মেলন পেছানোর পক্ষের নেতাদের দাবি-সব উপজেলায় সম্মেলন না হওয়া, চুড়ান্ত কাউন্সিলর তালিকা না থাকা, এমপি অনুসারীদের মূল্যায়ন না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সম্মেলন স্থগিত করেছে কেন্দ্র।
গত কয়েকদিনে সম্মেলনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমানের মতামত না নিয়েই তাদের নির্বাচনী এলাকার জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন জেলা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট। নেতা কর্মীদের অভিযোগ- স্থানীয় এমপিরা সম্মেলনের বিরোধিতা করায় এবং তাদের মতামত না নিয়েই জেলা নেতৃবৃন্দ এসব উপজেলা কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন।
ছাতক উপজেলায় এমপি মানিক সমর্থিত লুৎফুর রহমান সরকুমকে বাদ দিয়ে পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম সমর্থিত আবরু মিয়া তালুকদারকে আহ্বায়ক, দোয়ারাবাজারে এমপি মানিক সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীককে বাদ দিয়ে ফরিদ আহমদ তারেককে আহ্বায়ক, মধ্যনগর থানা কমিটিতে এমপি মেয়াজ্জেম হোসেন রতন সমর্থিত গিয়াস উদ্দিন নূরীকে বাদ দিয়ে আব্দুল আউয়ালকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
যদিও জেলা আ’লীগ সভাপতি মতিউর রহমান দাবি করেছেন, মধ্যনগর কমিটি অনুমোদন হয়নি। নেতাকর্মীরা জানান, নবগঠিত কমিটির প্রায় সবাই জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী এবং স্থানীয় এমপি’র বিরোধী হিসেবে তারা পরিচিত।
এমপি মানিক অনুসারী ছাতক উপজেলা আ.লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এক নেতা জানান, আমাদের আশা ছিল দীর্ঘদিন পর উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন হবে। কিন্তু আমাদের কোনো মতামত না নিয়েই শুনলাম একটি কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটি গঠনে আমাদের এমপিসহ কারোর মতামত নেওয়া হয়নি। কমিটিতে ত্যাগীদের (মানিক অনুসারীদের) মূল্যায়ন করা হয়নি।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ এমপি মেয়াজ্জেম হোসেন রতনের ঘনিষ্ট এক নেতা চার এমপি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক সম্মেলন স্থগিত করিয়েছেন এমন অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, তড়িঘড়ি করে পকেট কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা কমিটি। এই সব কমিটির অনুমোদন সম্পর্কে আমাদের ও এমপি‘র জানা নেই।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট বলেন, যে কমিটি গুলো অনুমোদন হয়েছে তাতে পরীক্ষিত ও রাজপথে সক্রিয় নেতারা স্থান পেয়েছেন। আমরা কাউকে অমুল্যায়ন করিনি। যে কোন সংগঠনের তৃনমুল শক্তিশালী না হলে সংগঠনই তো দুর্বল থেকে যায়। আর মধ্যনগরের কমিটি তো অনুমোদন হয়নি। আগামী সপ্তাহে সম্মেলন হবে বলে আশ্বস্ত করেন সুনামগঞ্জ আওয়ামীলীগের এই প্রবীণ নেতা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মেয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যরিষ্টার এনামুর কবির ইমনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে সবুজ সিলেট’র পক্ষ থেকে গতকাল রাতে বার বার চেষ্টা করেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।