কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল’র ৩৮ তম জন্মদিন ১ ফেব্রুয়ারী
এডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহিনঃ বিশ্বের তাবৎ মানুষের মধ্যে সত্যিকারের প্রেম প্রীতি ভালোবাসার স্বপ্নে বিভোর সদালাপি মিশুক ও আড্ডাপ্রিয় শেকড় সন্ধানী লেখক ছড়াকার গীতিকার সাংবাদিক এবং কলামিস্ট আশির দশকের শক্তিমান কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল। জন্ম ১৯৭৭ এর ১ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী গ্রামে। বাড়ীর পার্শ্বের পাঠশালা থেকেই প্রথম স্থান অর্জন করে নজর কাড়েন সকলের। এরপর ১৯৯২-এ বিশ্বনাথ আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশ্বনাথ পরীক্ষা কেন্দ্রে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে অক্ষুন্ন রাখেন প্রতিভার স্বাক্ষর। অতঃপর উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীণ দ্বীনি বিদ্যাপীঠ ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৯৪-এ আলিম, ৯৬-এ ফাযিল ও ৯৮-এ বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি কামিল (মাস্টার্স সমমান) উত্তীর্ণ হন কৃতিত্বের সাথে। ১৯৮৮’র ১৫ জুলাই ‘রামাদ্বান’ শিরোনামের কাব্য রচনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সাহিত্য জগতে পথচলা। এরপর থেকে আর থেমে থাকেনি কলম।
জাতীয় স্থানীয় দেশি বিদেশি জনপ্রিয় গণমাধ্যমে সাড়া জাগানো কলাম, গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া শেকড় সন্ধানী ইতিহাস ঐতিহ্য ও তথ্যভিত্তিক লেখা এবং সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ভিন্নধারার কলাম লেখে অর্জন করেন ঈর্ষনীয় খ্যাতি। সেসাথে কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ, গল্প, আঞ্চলিক গান ও মজার মজার প্যারোডিতো আছেই।
গত বছর বাজারে আসে কবি নাজমুল’র কথা ও সুরে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার বেশ কটি গানসহ প্যারডি গানের অডিও অ্যালবাম ‘‘আমরা ঘরর তাইন’’। ক্ষুরধার শব্দের গাঁথুনিতে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ অসংগতি চমৎকার সুরে সঙ্গীতের মাধ্যমে তুলে ধরায় অ্যালবামটি বাজারে আসার সাথে সাথেই দেশে বিদেশে হয় ব্যাপক সমাদৃত। প্রচন্ডরকমভাবে ‘ঘা’ লাগে মুখোশধারীদের আতে। প্রতিবাদী এ গানগুলো বার বার প্রতিবিম্বিত হয়ে তাদের কর্ণকুহরে সৃষ্টি করে অসহ্য যন্ত্রনার। মর্মে মর্মে বিদ্ধ হতে থাকে যেন রক্তমাখা তীরের মতো। হারাম হয়ে যায় মুখোশধারীদের ঘুম নিদ্রা। অনেক মুখোশধারী জ্বলে পুড়ে ছাই ভস্ম হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীও হয় লেখকের উপর। এজন্য কতিপয় ভন্ড টাউট সমাজের কীট পতঙ্গ মুখোশধারী দালালদের রক্তচক্ষু কথিত বিচার হামলা ও হুমকী ধামকী মোকাবেলা করেই লেখনি চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। এটাই একজন লেখকের লেখার সর্বোচ্চ সফলতা।
লন্ডন দুবাই ও সৌদি আরবে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘‘আমরা ঘরর তাইন’’ অ্যালবামের পৃথক পৃথক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। এছাড়া সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে পৃথক পৃথক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান সৃষ্টি করে এক বিরল রেকর্ড। গ্রীনেজ বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডে একটি অডিও অ্যালবামের দেশে বিদেশে সর্বোচ্চ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের রেকর্ডের স্বীকৃতি পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করেন সকল ঘরানার দেশ বিদেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক কবি সাংবাদিক সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী গীতিকার সুরকার আউল বাউল ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দসহ সকল স্থরের সুধীসমাজ। বিজ্ঞজনেরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবি নাজমুলকে উপাধি দেন ‘‘প্যারডি স¤্রাট’’। দেশ বিদেশের বাজারে আসার সাথে সাথেই অ্যালবামের সব কপি ফুরিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের কাজ চলছে। পাশাপাশি তাঁর দুটি গানের বই এবং আরও নতুন দুটি অডিও অ্যালবামের কাজও চলছে। তা শিগগিরই বাজারে আসবে বলে জানা গেছে।
এসব পরিচয় ছাড়াও তাঁর আরেকটি বড় পরিচয় হচ্ছে কবি নাজমুল হচ্ছেন একজন সফল সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবি, সাহিত্যসেবি। “কলম তোমার অস্ত্র বানাও” শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০০৪ এর ১ জুন গঠন করেন সিলেটের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন “সিলেট লেখক ফোরাম”। দেশী বিদেশী লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রবাসী সাহিত্যানুরাগীদের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতায় এবং কঠোর পরিশ্রমে তিল তিল করে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন প্রিয় সংগঠনটি। হাটি হাটি পা পা করে ফোরামের এগারো বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। দেশের দুর্গম ও ঐতিহাসিক জায়গাগুলোতে সাহিত্য আড্ডা ও গুণীজন সম্মাননার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জয়গান গেয়ে যাবার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সফল সাহিত্য আড্ডাসহ ব্যতিক্রমী নানা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন তারা। আর এর মুল কারিগর ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল।
৭১’র রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিশ্বনাথ উপজেলা কমান্ডের নির্বাচিত সহকারী কমান্ডার আলহাজ্ব মোঃ মরতুজ আলী এবং আলহাজ্ব আপ্তাবান বেগমের গর্বিত সন্তান নাজমুল ২০০০ সালে গঠন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন ‘মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠন দু’টির সফল সভাপতি নাজমুল আরও অনেকগুলি সামাজিক সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও রাখছেন অসামান্য অবদান।
১৯৯৬-এ উপমহাদেশের আলোকিত তিনজন সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব স্মরণে ‘যাদের তরে অশ্রু ঝরে’ স্মারক গ্রন্থ সম্পাদনা করে সম্পাদনা জগতেও করেছেন দাপুটে বিচরণ। এছাড়া সম্পাদনা করেছেন আরো বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংকলন। কবিতা ছড়া ও প্রবন্ধে পুরস্কারও পেয়েছেন বহুবার। ‘লন্ডন বিশ্বনাথের মাটি ও মানুষের সেতুবন্ধন’ শ্লোগানে সাড়া জাগানো পত্রিকা ‘টেমস বাসিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইউরোপে প্রথম প্রতিষ্ঠিত বাংলা টিভি চ্যানেল বাংলা টিভি ও জাতীয় দৈনিক আমার দেশ’র বিশ্বনাথ সিলেট প্রতিনিধির দায়িত্ব ছাড়াও দেশ বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে সাংবাদিকতা জগতেও রাখছেন যুগান্তকারী ভুমিকা।
নাজমুল ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। দুই সন্তান রিদওয়ান নাজমুল এবং লুবাবা জান্নাত’র জনক নাজমুলের লেখা সম্পর্কে ‘কবি আল-মাহমুদ’ মন্তব্য করেন, তরুন কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল’র বেশ কয়েকটি কবিতা আমি উল্টে পাল্টে দেখেছি। তার লেখায় আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া আমাকে প্রবলভাবে আলোড়িত করেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তার প্রতিভার ফসল একদিন সীমানা অতিক্রম করে প্রেরণা দেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে।
কবির ক্ষুরধার কলমযুদ্ধ অব্যাহত থাকুক সে প্রত্যাশা আমাদের সকলের।