শিগগিরই জাপার মন্ত্রীদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দশম সংসদ নির্বাচনের একবছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় আামাদের যে কজন সদস্য আছে, তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেব।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বাংলাদেশ সফরকালে রওশন তাকে বলেন, ‘আমরা প্রকৃতভাবে সরকারের বিরোধিতা করছি। তবে সরকারে আমাদের কয়েকজন মন্ত্রী থাকায় সেটা খানিকটা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, দশম সংসদে প্রথমবারের মতো বিরোধীদল হয়েছে জাতীয় পার্টি। একইসঙ্গে সরকারেও তাদের অংশীদারিত্ব আছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পানি সম্পদ মন্ত্রী, মশিউর রহমান রাঙাকে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও মুজিবুল হক চুন্নুকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এছাড়া জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও মন্ত্রী পদমর্যাদাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়েছে।
রওশন বলেন, ‘আমাদের এক বছর পূর্তি হয়েছে। জনজীবনে স্বস্তি এসেছে। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এ নির্বাচনে সাড়া দেয়নি। নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায়ও তারা আসেনি। বিএনপি নির্বাচনে না এসে ঠিক করেনি। নির্বাচনে অংশ নিলে তারা অনেক ভালো করতে পারতো। তারা সংসদেও থাকতো, বাইরেও থাকতো। সেটা সবার জন্য ভালো হতো।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার বিষয়ে রওশন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সনকে অবরুদ্ধ রাখা হয়নি। সরকারের কাছেন কী ইনফরমেশন আছে, সেটা আমার জানা নেই। নিরাপত্তার জন্য করা হলে আমাদের বলার কিছু নেই। তবে গণতন্ত্রের জন্য তাকে অবরুদ্ধ করা হলে সেটা আমরা সাপোর্ট করি না। আমার মনে হয়, নিরাপত্তার জন্য এগুলো করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পারে, তাকে কীভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে।’
‘মধ্যবর্তী নির্বাচন’ প্রসঙ্গে এরশাদ পত্নী বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন হলে সবাই মিলে বসে আলাপ করে ঠিক করবো। সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা এখন বলতে পারি না। তবে জনগণ মধ্যবর্তী নির্বাচন চায় না। তারা শান্তি চায়।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে বসে দেশকে কী করে এগিয়ে নিয়ে যাবো, সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তবে সে আলোচনা মিডটার্ম ইলেকশানকে কেন্দ্র করে না। নির্বাচন হয় ৫ বছর পর পর। মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টা জনগণ নির্ধারণ করবে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে। এটা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। এগুলো জনগণ চায় না। জনগণ শান্তি চায়। আমি মনে করি আবার শান্ত হয়ে যাবে। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে মিলে মিশে গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তুলবো।’
শুরুতেই রওশন বলেন, ‘২০১৩ সালে হরতাল, অবরোধে জনজীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সহিংসতায় সারা দেশে চারশত মানুষ নিহত হয়েছে। তিন হাজারেরও বেশি মানুষ পেট্রোল বোমায় আহত হয়েছে। সে কী করুণ দৃশ্য, সেটা না দেখলে বোঝা যায় না। সে সময় দেশের হাজার হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তখন চিন্তা করলাম, নির্বাচন হলে শান্তি ফিরে আসবে। এভাবে চলতে থাকলে সেটা দেশের জন্য সুখকর নয়। সেজন্য নির্বাচনের চিন্তা করেছি। আলাপ আলোচনা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি স্থির করলাম। নির্বাচনের পরেই দেশে শান্তি ফিরে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পরে দেশে জিডিপি বেড়েছে। দেশে শান্তি থাকলে জনগন আশান্বিত হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি বিরাজ করছে। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। ধারাবাহিকভাবে আমরা প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনমুখী দল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সহিংসতায় দেশের হাজার হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে তখন আলাপ আলোচনা করে করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচনের পরেই দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। জিডিপি বেড়েছে। দেশে শান্তি থাকলে জনগন আশান্বিত হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি বিরাজ করছে। আমরা বরাবরই নির্বাচনমুখী দল। ধারাবাহিকতায় প্রতিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফাইল ছোঁড়াছুড়ি করার বিরোধীদল আমরা হতে চাই না। আমরা চাই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে। আগের বিরোধীদলের মতো বাজে কথা বলতে চাই না। সবাই যদি বিদ্বেষ প্রতিহিংসার রাজনীতি বর্জন করি, তাহলে রাজনৈতিক শান্তি আসবে। এটা ছাড়া দেশে উন্নতি হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, নুর-ই- হাসনা লিলি চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক উপদেষ্টা গোলাম মসিহ।