রাতারগুলে ফের ওয়াচটাওয়ার নির্মান কাজ শুরু
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ পরিবেশকর্মীদের আপত্তির মুখে দু’দফা বন্ধ করলেও রাতারগুল জলারবনে ফের ওয়াচ ট্ওায়ার নির্মান কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। যদিও গত ২১ ডিসেম্বর পরিবেশবিদ, পরিবেশ কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে বৈঠকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, সকল মহলের সাথে আলোচনা করে ওয়াচ টাওয়ারের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এই বৈঠকের এক সপ্তাহ না যেতেই কারো সাথে আলোচনা না করেই অনেকটা গোপনে পুণরায় ওয়াচ টাওয়ারের নির্মান কাজ শুরু করা হয়। এ নিয়ে সিলেটের পরিবেশ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এর আগে পরিবেশ কর্মীদের আপত্তি ও আন্দোলনের মুখে রাতারগুলে ওয়াচ টাওয়ার নির্মান কাজ দু’দফা বন্ধ করে বন বিভাগ। অপরিকল্পিতভাবে ওয়াচ টাওয়ার নির্মিত হলে দেশের মিঠাপানির একমাত্র জলারবন রাতারগুল তার চরিত্র হারাতে পারে ও জীববৈচিত্র সঙ্কটে পরবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে নির্মান কাজ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামে সিলেটের পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছরের শুরুর দিকে রাতারগুল জলারবনে পর্যটকদের সুবিধার জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও বনকর্মীদের আবাসনের জন্য স্থাপনা নির্মান কাজ শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ছাড়াই বিশেষায়িত বনের ভেতরে স্থাপনা নির্মানের প্রতিবাদে সে সময় থেকে আন্দোলনে নামে সিলেটের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। পরিবেশবাদী সংগঠন ও সিলেটের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘রাতারগুল জলারবন সংরক্ষণ কমিটি।’ এই কমিটির আন্দোলনের মুখে বন বিভাগ ওয়াচ টাওয়ারের নির্মান কাজ শুরু করে। তবে এর কিছুদিন পরই অনেকটা গোপনে আবার নির্মান কাজ শুরু করে বনবিভাগ। পুণরায় নির্মান কাজ শুরুর প্রতিবাদে বন বিভাগ ঘেরাও করে ভূমিসন্তান বাংলাদেশসহ পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। আন্দোলনের মুখে পুণরায় বন্ধ করা হয় নির্মান কাজ। সে সময় আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মতবিনিময়ের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
সেই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গত ২১ ডিসেম্বর নগরীর শহীদ সোলেমান হলে পরিবেশবিদ ও পরিবেশকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসে বনবিভাগ। বৈঠকে রাতারগুলে ওয়াচ টাওয়ারসহ সব ধরনের অপরিকল্পিত স্থাপনা বন্ধের দাবি জানান পরিবেশকর্মীরা। বৈঠকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন বলেন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মানে সকলের আপত্তির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এবং সকলের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যেও আবারও গোপনে রাতারগুলে ওয়চ টাওয়ার নির্মান কাজ শুরু করে বন বিভাগ। ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সরেজিমনে রাতারগুলে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা ওয়াচ টাওয়ারের নির্মান কাজ শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, বনবিভাগ আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সকলের সাথে আলোচনা করে ওয়াচ টাওয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তিনি তাঁর কথা রাখেননি। গোপনে আবারও ওয়াচ টাওয়ারের নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সবার সাথে আলোচনা না করে ওয়াচ টাওয়ার নির্মিত হলে এবার আমরা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামবো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোল, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কীম বলেন, আমাদের আলোচনায় রেখে বনবিভাগ গোপনে ওয়াচ টাওয়ার নির্মান করে ফেলছে। এটি বন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের উত্তর সিলেট রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মানের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘ওয়াচ টাওয়ারের কাজ মনে হয় শুরু হয়েছে।’‘আমি একটি মিটিংয়ে আছি’ বলে তিনি মোবাইল ফোনের কল কেটে দেন।