খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

1নুরুল হক শিপু :: প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) সার্বিক কার্যক্রম। এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স ছাড়া আরও ৬টি ট্রেডকোর্স নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি ভুগছে জনবল সংকটে। যার কারণে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কাজে ব্যাগাত ঘটছে। শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না। বর্তমানেও তাদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
২০০৬ সালে দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আছে। বর্তমানে অধ্যক্ষসহ মঞ্জুরিকৃত ৮৪ পদের ৬০টিই শূন্য রয়েছে। ৪২টি শিক্ষকের পদের বিপরীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ মোট ৭ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে ৬টি ট্রেডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক্সে ৪০, অটোকেটে ৪০, গারমেন্টেসে ৪০, পেটানে ৪০, কম্পিউটারে ৩০ জন এবং এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সে ৭০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়াও ১৫তম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সৌদি আরব গমনেচ্ছু ৭৮ জন নারী।
প্রতিষ্ঠানে সৌদি আরব গমনেচ্ছু নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিএমইটি (ব্যুরো অব ম্যান পাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং)-এর কাস্ট কোর্স ও সৌদি আরব গমনেচ্ছু নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানে তাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নেই; কিন্তু তারপরও এই প্রশিক্ষণার্থীদের থাকতে দেয়ার নির্দেশনাও রয়েছে। ভবনের তৃতীয় তলায় কয়েকটি কক্ষে প্রশিক্ষণার্থীদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১লা জুন থেকে শুরু হয় প্রশিক্ষণ শুরু হয় সৌদি আরব গমনেচ্ছু নারীদের। প্রথমে এ প্রশিক্ষণ কোর্সটি ছিল ১০ দিন মেয়াদি। আটটি ব্যাচ এভাবে চলার পর বিএমইটি থেকে নির্দেশনা আসে কোর্সের মেয়াদ ৩০ দিনে উন্নীত করার। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৫ তম ব্যাচ শেষের পথে। সিলেট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১ হাজার জন নারী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সৌদি আরব চলে গেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রথমদিকে মৌখিকভাবে প্রশিক্ষণার্থীদের দৈনিক খরচ হিসেবে ১৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সে হিসেবে অর্থ ছাড় পাওয়া যায়নি। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রথম দিকে খাওয়ানো গেলেও বরাদ্দ সংকটের কারণে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। দশম ব্যাচে খাওয়ানো যায়নি চার দিন। আর গত বছরের পয়লা ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ১১তম ব্যাচটিকে খাওয়ানো হয় ১০ তারিখ পর্যন্ত। এরকম টানাপোড়েনেই ১২তম ব্যাচ পর্যন্ত চলে। ১৩তম ব্যাচ শুরু হওয়ার সময় পাল্টে যায় রীতি। উপরের নির্দেশে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ৩৬০০ টাকা ভর্তি বাবত নেয়া হয়। বর্তমানে ওই টাকায়ই চলছে তাদের খাওয়ার খরচ।
টিটিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১০ মাস বেতন পাননি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এরপর অনেক তদবির করে পাঁচ মাসের বেতন পাওয়া যায় গত মাসে। বর্তমান মাস-সহ এখনও পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে শিক্ষকদের। ঠিকমতো বেতন না পেয়ে শুধু টিটিসির উন্নয়ন থেকে রাজস্ব শাখায় স্থানান্তরিত হবে, এমন আশায় কষ্ট সয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশের ২৬ টিটিসির ১৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মামলা করেন। হাইকোট ও সুপ্রিম কোর্টের রায় শিক্ষক কর্মচারীর পক্ষে হলেও এখনও সরকারি বরাদ্দ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না; একই সাথে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত দেওয়া হয় না। টিটিসির পাঁচ মাসের গ্যাস বিল এখনো দেওয়া হয়নি। তাই যে-কোনো মুহূর্তে গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে। টিটিসি কর্তৃপক্ষ আবেদন করে দুই মাসের সময় চেয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকল হলে তা সারাতে হয়। পয়োনিষ্কাশন সমস্যাও রয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাছে এ বিষয়ে বার বার সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। পরে বাইরে থেকে পরিচ্ছন্নকর্মী এনে ময়লা পরিষ্কার করতে হয়েছে। এগুলোর খরচও সমন্বয় করতে হয়।
সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুর রব বলেন, নানা সমস্যা সত্ত্বেও ভালোভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে প্রশিক্ষণার্থীদের যথাসম্ভব ভালো সেবা দেওয়ার। পাঁচ মাস ধরে শিক্ষক ও কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। খুব কষ্ট করে জীবন কাটাতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে এনে খরচ জোগাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাইরে টিউশনি করছেন। তবুও তারা দরিদ্র মানুষদের টাকায় হাত দেন না।
প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগে ১১ মাস বেতন আটকা ছিল। এরপর ১০ মাস চলে যায়। গেল মাসে ৫ মাসের বেতন পাওয়া গেছে। এখনও ৫ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।’