তুলির আঁচড়ে হৃদয়ের স্পন্দন সৃষ্টিই আমার কাজ
তানভীর ইউসুফ রনী সিবিএন কানাডা থেকে।। “তুলির আঁচড়ে হৃদয়ের স্পন্দন সৃষ্টি করা’ এ এক তুলনাহীন কাজ। ক্যামেরা দিয়ে সামনের চিত্রটিকে স্থায়ীভাবে ফ্রেমবন্দী করা যায় সত্য কিন্তু মনের মাধুরী মিশিয়ে চিত্রকে রংতুলি দিয়ে এঁকে রাখা অবশ্যই সীমাহীন ভালোবাসা ছাড়া সম্ভব নয়’। কথাগুলো বলছিলেন মন্ট্রিয়ল প্রবাসী চিত্রশিল্পী আরিফুর রহমান কামাল। বাংলাদেশী কানাডিয়ান এই চিত্রশিল্পী বেশিদিন হয়নি কানাডায় এসেছেন। ২০১০ সালে কানাডায় আসার পর থেকেই বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন বাংলাদেশকে নিজের রংতুলি’র আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে। সাফল্যও পেয়েছেন ঈর্ষনীয় গতিতে। বাংলাদেশে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী করেছেন বিভিন্ন জায়গায়, তার মধ্যে জাপানের বিশ্বখ্যাত চুয়া আর্ট গ্যালারী ও লন্ডনভিত্তিক স্টুডিও ৯৫ এও তাঁর চিত্রকর্ম প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। কানাডায়ও বেশ কয়েকটি যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছেন আরিফুর রহমান। বেশ আনন্দের সাথেই সিবিএনএ’কে জানালেন যে তাঁর হাতে আঁকা চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অফিসে! একজন বাংলাদেশী হিসেবে এটাই বা কম কিসে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী কিংবা তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা যখনই চিত্রকর্মটির দিকে তাকাবেন, আরিফের আগে বাংলাদেশের কথাই প্রথমে তাঁরা স্মরণ করবেন’। শুধু ছবি আঁকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। মন্ট্রিয়লে প্রতিষ্ঠা করেছেন “শিশু চারু নিকেতন’ নামে আর্ট স্কুল। কোমলমতি বাচ্চাদের চিত্রকর্মের প্রতি আগ্রহী করে তোলাই তাঁর এবং তাঁর স্কুলের প্রধান লক্ষ্য। “শিশু চারু নিকেতন’ আর্ট স্কুলটি ২০১১ সালে মন্ট্রিয়লে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর শেঁকড় কিন্তু বাংলাদেশেই।
১৯৭৪ সালে নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী আরিফুর রহমান ১৯৯৪ সালে ছোট্ট একটি টিনশেড ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন নারায়নগঞ্জের সর্বপ্রথম চারুকলা ইন্সটিটিউট। প্রথমদিকে তেমন কোন সহযোগিতা না পেলেও স্কুলটির সাফল্যের কারনে এবং ছাত্র ছাত্রীদের একাগ্র প্রচেষ্টায় ২০০২ সালে সরকারী ভাবে স্বীকৃতি লাভ করে আরিফের তৈরি করা এই সপ্নের ইন্সটিটিউট। নিজের তৈরি প্রতিষ্ঠান থেকেই শিল্পকর্মের ওপর অর্জন করেন উচ্চতর ডিগ্রি। ২০০৫ সালে কানাডায় বসবাসের জন্য আবেদন করার বছর দুই আগে ২০০৩ সালে সার্বিক প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জে স্থায়ীভাবে নির্মান করেন “শিশু চারু নিকেতন’ নামের আর্ট স্কুল। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের প এক সাফল্য সহজেই ধরা দিয়েছে তাঁর কাছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি জেলায় একক/যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী করেছেন তিনি। শুধু তিনিই না, তাঁর তৈরি করা আর্ট স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও পোল্যান্ড সরকার কর্তৃক আয়োজিত প্রদর্শনীতে জিতে নেয় পুরস্কার একবার নয়, তিনবার! এ যেন সত্যিই এক অসম্ভব স্বপ্নের ঈর্ষনীয় বাস্তবায়ন। তাঁর এই কঠোর পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে তিনি পেয়েছেন তাঁর প্রাপ্য সন্মান। নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী এবং এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে দীর্ঘদিন তিনি চিত্রকর্ম শিক্ষকের দায়িত্ব পালনও করেছেন। গুণী এই শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশী ছাড়াও বিদেশীদের কাছেও। ইতিমধ্যে মন্ট্রিয়লের সেন্ট লরেন্ট সিটি হল কর্তৃক তাঁর বেশ কয়েকটি চিত্রকর্মও নেয়া হয়েছে অফিসিয়াল প্রদর্শনীর জন্য।
বাংলাদেশের মতো কানাডার বাংলাদেশী কোমলমতি শিশুরাও তাঁর প্রতিষ্ঠিত “শিশু চারু নিকেতন’র মাধ্যমে চিত্রকর্মে ভালোবাসা খুঁজে পাবে এই আশাবাদই ব্যাক্ত করেছেন তিনি। চিত্রকর্ম সম্পর্কিত যেকোন বিষয়ে তথ্যের জন্য তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন চিত্রশিল্পী আরিফুর রহমান, ৪৩৮ ৯৯২ ৬৮৯৯, এই নম্বরে।
তানভীর ইউসুফ রনী, নির্বাহি সিবিএনএ, কানাডা