একই কায়দায় ভোট : সংঘর্ষ, গুলি, নিহত ২
ডেস্ক রিপোর্টঃ ব্যালট বাক্স ছিনতাই, সংঘর্ষ, গুলি, ভোট বর্জন- সেই একই চিত্র, একই কায়দায় সম্পন্ন হয়েছে তৃতীয় ধাপের ভোটে। গতকাল ৬১৪ ইউপির নির্বাচনে বেশ কিছু জায়গায় ঘটেছে এমন ঘটনা। সংঘর্ষ ও গুলিতে নিহত হয়েছে দুই জন। চাটমোহরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিজিবি’র ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয়েছে ১ জন। ভৈরবে পোস্টার লাগানো নিয়ে সংঘর্ষে আহত একজন গতরাতে মারা গেছে। লাকসামে কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে মারা হয়েছে সিল। শেরপুরের ৬টি কেন্দ্রে ঘটেছে ব্যাপক সহিংসতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চালিয়েছে গুলি, রাবার বুলেট। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঘটেছে কেন্দ্র দখল। হয়েছে দুপক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ। সিরাজগঞ্জে সিল মারার দলে নেমেছিল আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্ট। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। সেখানে ঘটেছে ব্যাপক জাল ভোটের ঘটনা। নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব চারিতাল্লুক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষনা না দেয়ায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। তারা কেন্দ্র ঘেরাও করে রাখে। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের একটি মাইক্রোবাস ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। একপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। পুলিশ বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয় ৭ জন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রূপগঞ্জে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
চাটমোহরে গুলিতে নিহত ১
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে জানান, নির্বাচনের ফলাফল দেরিতে ঘোষণা করাকে কেন্দ্র করে চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বিএনপি সমর্থিত ইমদাদ হোসেন (৩৫) নামের একজন নিহত ও এক বিজেপি সদস্যসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ইমদাদ হোসেন (৩৫) বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। চাটমোহর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকরা উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর ভোট কেন্দ্রে বিক্ষোভ করে। এমনকি বিক্ষুব্ধ জনতা দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আনসার ও বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। বাহাদুরপুর ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বরত বিজিবির সহকারী পরিচালক হাসান আলী সাংবাদিকদের জানান, জনতা আমাদের উপর চড়াও হলে আমাদের দায়িত্বরতরা ৯ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এ সময় কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে নিহত ব্যক্তি কিভাবে মারা গেছে সে বিষয়টি আমার জানা নাই। এঘটনার পর থেকেই এলাকায় চরম উত্তেজনা ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভৈরবে নিহত ১
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ভবানীপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত আবু বক্কর সিদ্দীক চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রাত ৯টায় মারা গেছেন। পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী সোলায়মানপুরের হুমায়ুন গ্রুপের হয়ে নির্বাচনী কাজ করছিলেন। সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় সোলায়মান গ্রুপের লোকজন অপর সদস্য পদপ্রার্থী জয়নালের পোস্টারের উপর পোস্টার লাগালে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এদিকে, ওই মৃত্যুর খবরে সোলায়মান গ্রুপের লোকজন উত্তেজিত হয়ে গতকাল রাত ৯টায় জয়নাল গ্রুপের লোকজনের উপর হামলা চালান। এসময় ১০-১২টি বাড়ী ভাংচুর করে। এসময় শিশু মেম্বার নামে সাবেক ইউপি সদস্যের দোতলা পাকা বিল্ডিংও ভেঙ্গে ফেলা হয় ।
রূপগঞ্জে এলাকাবাসী-বিজিবি সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ৭
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ভোলাব ইউনিয়নের চারিতাল্লুক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনা না দেয়ায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ভোট কেন্দ্র ঘেরাও করে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের একটি মাইক্রোবাস ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারসহ দুইটি গাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট , প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে ফেলে তারা। একপর্যায়ে এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইপ পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া শতশত রাউন্ড গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা এলাকার আঞ্চলিক সড়কের কয়েক স্থান কেটে ফেলে এবং বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে ও গাছে আগুন জ¦ালিয়ে দিয়ে সড়কে চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ , র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টায় গুলি ছোড়া শুরু করলে মিসড ফায়ারে বিজিবি সদস্য আনছারুল্লাহ, স্থানীয় এলাকাবাসী শফিকুল, মজিবর, আয়েছ আলী, মনির হোসেন, আমজাদ হোসেন গুলিবিদ্ধসহ কায়েস, রোমাজ্জল, জাহিদ হোসেন, দেলোয়ার, সাজ্জাদ, দেলোয়ার হোসেন, মিজান, আমিনুল ইসলাম, শফিক, মিন্টু, কবির হোসেন, সহিদুল¬াহ, জামাই মনিরসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে ভোটকেন্দ্র দখল, দফায় দফায় সংঘর্ষ, জালভোট প্রদান আর বিএনপির প্রার্থীদের বর্জনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘাতের ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। জালভোট দিতে গিয়ে জনতার রোষানলে পড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, এমপির এপিএস। শুক্রবার রাতেই রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক)-এর এপিএস মনিরুজ্জামান নাফিসসহ ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মুড়াপাড়ার মঙ্গলখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে জালভোট দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকেরা নাফিসকে কেন্দ্রের ভেতর আটক করে রাখে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। শনিবার ভোট শুরুর পরপরই মুড়াপাড়ার মঙ্গলখালী ও ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে নির্বাচনে জালভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত ৩৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ভোলাব ইউনিয়নের পাইস্কা-বাসুন্দা ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি শেখ সাইফুল ও তার স্ত্রী চম্পা আক্তারকে আটক করে রাখে এলাকাবাসী। এসময় আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের নেতৃত্বে ভোলাব শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এছাড়া জালভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে ভোলাব আদর্শ কমিউনিটি স্কুলে এলাকাবাসী হামলা চালালে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দুই ঘণ্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখেন। চারিতাল্লুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি দলের সমর্থিত লোকজন হামলা চালিয়ে ব্যালটপেপার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা পুলিশের একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৫৩০২) ভাঙচুর করে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ব্যালট পেপার ও ভোটসামগ্রী রক্ষায় সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন। এদিকে ব্যাপক কারচুপি, জালভোট, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া আর প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে দুপুর আড়াইটার দিকে বিএনপির ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে গোলাকান্দাইল, ভুলতা ও মুড়াপাড়া ইউনিয়নের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
শেরপুরে ব্যালটবাক্স ছিনতাই, গুলি সংঘর্ষ
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের ৬টি কেন্দ্রে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৭৫ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫১ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। অন্যদিকে ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে কামারেরচর ইউনিয়নের ৭নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে একজন সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পুলিশ ৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ৩ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আঙুর মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুরুতর অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া একই ইউনিয়নের নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আরেক সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করতে গেলে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। ওই সময় কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। কামারেরচর ইউনিয়নের সাহাব্দীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগের ঘটনায় পুলিশ ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ১৫ জন আহত হয়। দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের ঘিনাপাড়া ইবতেদায়ী মাদরাসা কেন্দ্রে জালভোট দেয়ার চেষ্টাকালে ৩ জনকে আটক করে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোটগ্রহণ শেষে ৪টি ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে কামারেরচর ইউনিয়নের ৭নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি বাতিল করা হয়েছে।
নবীনগরে বিএনপি ও জাসদ প্রার্থীদের ভোটবর্জন
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, নবীনগরে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শ্রীঘর কেন্দ্রে ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে ২০ জন, গ্রেপ্তার হয়েছে ১ জন। ওদিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে দুপুরে জাসদের একজন সহ বিএনপির ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। হলেন- শিবপুর ইউপির এমআর মজিব, বড়িকান্দি ইউপির মো. নাজমুল হোসেন, জিনদপুর ইউপি মো. মিজানুর রহমান, রতনপুর ইউপির মো. রফিকউল্লাহ্, নবীনগর পশ্চিম ইউপির গোলাম কিবরিয়া গোলাপ, বড়াইল ইউপির বিএনপি প্রার্থী আবুল বাশার, জাসদ প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন, বিএনপি প্রার্থী মো.গোলাম রব্বানী।
শ্রীপুরে সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই-এর মধ্য দিয়ে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকে ১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে ৩ নং-শ্রীকোল ইউনিয়নের বারইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থক জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে সিল মেরে তা বাক্সে ঢুকিয়েছে। দুটি ব্যালট বই ছিনতাই হয়েছে বলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এখানে বেলা ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। তাছাড়া একই ইউনিয়নের পূর্ব-শ্রীকোল ভোট কেন্দ্রের সামনে নৌকা প্রতীকের সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এখানে প্রায় ১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। একই ইউনিয়নের দোসতিনা কেন্দ্রের সামনে নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এখানেও সাময়িক সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। শ্রীকোল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মধুসূদন সাহা বলেন, সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকে বারইপাড়া কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৮নং নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর ভোটকেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
ফরিদগঞ্জে ব্যালট পেপার ছিনতাই
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদগঞ্জে বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্র দখল হয়ে যায় সকালেই। এ নিয়ে হয়েছে সংঘর্ষ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পোলিং অফিসার ও পুলিশের কনস্টেবলসহ আহত হয়েছে ৩০ জন। কেন্দ্র দখলের সময় দেশীয় অস্ত্র ও দুুটি মাইক্রোবাসসহ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত বিএসসিসহ তার ১১ সমর্থককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কিছুক্ষণ পর শওকত বিএসসিকে ছেড়ে দেয়া হয়। কেন্দ্র দখল ও গোলযোগের অভিযোগে ৫টি কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীগণ অভিযোগ করে বলেছেন, সকাল থেকে ১৩১টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা প্রায় অধিকাংশ কেন্দ্রে হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলা শুরু করে। তারা একে একে ভোট কেন্দ্রগুলো দখলে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারে। ফলে, ১০টার মধ্যে বহু কেন্দ্রে শতকরা ৬০ ভাগ ভোট কাস্টিং হয়ে যায়। একদিকে, নৌকা প্রতীকের সশস্ত্র কর্মী সমর্থকরা কেন্দ্র পাহারা দেয়। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করে। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া (দ.) ইউনিয়নের সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩টি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও দুুটি মাইক্রোবাসসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শওকত বিএসসিসহ তার ১১ সমর্থককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মাসুদ আলম বলেন, পোলিং অফিসারের সামনেই দল বেঁধে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। অন্যদিকে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোহেল চৌধুরী বলেছেন, ভোট হয়েছে সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ।
কুমিল্লায় ৫ কেন্দ্র স্থগিত, দুই কর্মকর্তা আটক
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কেন্দ্র এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, এজেন্টদের বের করে দেয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যালট পেপার ও বাক্স-সিল ছিনতাইসহ বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থেকে এক প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে সিল মারায় দুই সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের মারধর করে ব্যালট বাক্স, সিল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় ৪টি ও বুড়িচং উপজেলার ১টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মদিনগর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনতাই, একই উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর বেগম জহিরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, রঘুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, কর্মকর্তাকে মারধর করে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনতাইয়ের কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়াও বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের আবিদপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
বুড়িচং উপজেলার জগতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিজুল আলম, শাহ আলম নামের ২ সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করেছে। এরা দুইজনই ওই উপজেলার শ্রীমন্তপুর এম.এ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ভোট কেন্দ্রের পাশ থেকে পেট্রলবোমা উদ্ধার
বগুড়া থেকে সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার ধুনটে ভোট কেন্দ্রের পাশ থেকে ৫টি পেট্রলবোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে বেলকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে লোকজন ৫টি পেট্রলবোমা পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। এঘটনা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে অনেকে মাঠ থেকে চলে যায়। ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবদুর রহিম জানান, পেট্রলবোমাগুলো নিষ্ক্রীয় করার জন্য থানায় নেয়া হয়েছে।
ইসলামপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ,ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কেন্দ্রে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়। গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনের দিন সকালে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আট রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। চরপুটিমারী ইউনিয়নে সাজলের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাইন ভেঙে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সাত রাউন্ড গুলি ছুড়ে। জামালপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইউনুস আলী মিঞা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও চরপুটিমারি আখড়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নারী ইউপি সদস্য কল্পনা বেগমের সঙ্গে মেম্বার প্রার্থী আলকাছ আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে সাংবাদিকসহ সাতজন আহত হয়। এ সময় পুলিশ সাত রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। একই ইউনিয়নের বালিয়ামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ নয় রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। অপরদিকে গাইবান্ধা ইউনিয়নের মরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে জাল ভোট প্রদান ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। এতে দশজন আহত হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাত রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
লাকসামে কেন্দ্র দখল, ভোট বর্জন
লাকসাম প্রতিনিধি জানান, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রকাশ্যে সিলের মধ্য দিয়ে লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় লাকসাম পূর্ব বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন বয়কট করে। একই সময় আজগরা ইউনিয়নের ঘাটার নওগাঁও কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সদস্য প্রার্থী ও তার এজেন্টকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ওই সময় ১০ জন গুরুতর আহত হয়। লাকসাম পূর্ব নরপাটি ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন তার ইউনিয়নের প্রায় সকল কেন্দ্রে থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটের আগের রাতে মামলা দিয়ে তার এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য পথে পথে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রেখেছে সরকারদলীয় লোকজন। আজগরা ইউনিয়নের ঘাটার নোয়াগাঁও কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুল আলমকে তার এজেন্ট আনোয়ার হোসেনকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ওই সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে সামছুল আলমের সমর্থক রহমত আলী, জামাল হোসেন, ফারুক, সুজন, বিল্লাল গুরুতর আহত হয়। এ সময় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে আধা ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। সংবাদ পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ওই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
লৌহজংয়ে ভোট বর্জন
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, লৌহজং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি শাহজাহান খান (৫৫)-কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার বেজগাঁও ইউপির কুড়িগাঁও গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ৩য় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের কুড়িগাঁও গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. শাজাহান খানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এদিকে, ব্যাপক উত্তেজনা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে সকাল ৮টা থেকে লৌহজং উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচন হয়। এরমধ্যে ৫টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইউপি ৫টি হলো, মেদেনীম-ল, কুমারভোগ, লৌহজং-তেউটিয়া বোলতলী ও গাঁওদিয়া। ওদিকে, দুপুর ১২টার দিকে হলদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তার হোসেন লাবু, বিএনপির চঞ্চল মোল্লা ও কনকসার ইউনিয়নে বিদ্যুৎ আলম মোড়ল, বেজগাঁওয়ে বিএনপির প্রার্থী নিজ নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও সিলমারার ঘটনায় তারা এ নির্বাচন বর্জন করেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া, মেদেনীম-ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ক্ষিদিরপাড়া ইউনিয়নের ক্ষিদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, কলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ২৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
নাটারে ৭ প্রার্থীর ভোট বর্জন
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোর সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৭ প্রার্থীর ভোট বর্জন, জাল ভোটসহ কারচুপি ও জাল ভোটারদের জরিমানা প্রদানের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার দায়ে ৪ জনকে জরিমানাসহ দুই একটি কেন্দ্রে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৮৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট কারচুপি, ভোট প্রদানে বাধা, এজেন্টদের মারপিট করে বের করে দেয়া, জাল ভোট প্রদান, হুমকি এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে না পাওয়া নানা অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া একটি কেন্দ্রে ক্ষমতাশীন দলের নেতাকর্মী দ্বারা বিএনপির প্রার্থী সারোয়ারের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। পরে সকাল সাড়ে দশটায় লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া বিএনপি মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, হালসার বিএনপির ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, ছাতনী ইউনিয়ন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সুলতান আহমেদ, তেবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার এবং কাফুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী খবির উদ্দিন শাহ ও তেবাড়িয়ার বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ আকন্দ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
প্রকাশ্যে সিল
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউপির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তারিকুল ইসলাম ভাসান ও বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল খালেক তোতা এবং চৌহালী উপজেলার বাগুটিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শুকুর মাহমুদ ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রদান ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ওই সকল ইউনিয়নে পুনরায় ভোটের দাবি করেছেন। সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পঞ্চসারটিয়া কেন্দ্রে সকাল সোয়া ৯টায় ১নং কক্ষের ভেতরে নৌকার এজেন্ট ফরিদ উদ্দিন প্রকাশ্যেই ব্যালট নিয়ে ভোট দিচ্ছে। তাকে প্রশ্ন করলে বলেন, ভোটার সঠিক ভাবে ভোট দিতে পারছে না, তাই সিলটি মেরে দিয়েছি। ৩নং (মহিলা) বুথে শারমিন সুলতানা, রেবা খাতুন ও শ্যামলী খাতুন নামে নৌকার পক্ষে ৩ জন এজেন্টকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। ৪নং বুথে ঘোড়া প্রতীকের কার্ড লাগিয়ে থাকা কর্তব্যরত মিনারা খাতুন বলেন, আমি নৌকার এজেন্ট। এ সময় তার পাশেই নিশ্চুপ বসে ছিলেন নৌকার এজেন্ট হাসি খাতুন। ৫নং বুথে নৌকা ও ধানের শীষের কোনো এজেন্ট নেই। পরিচয় জানতে চাইলে ঘোড়া প্রতীকের এজেন্ট মাহমুদা খাতুন বলেন, আমি নৌকার এজেন্ট। আপনার পরিচয়পত্রে তো ঘোড়া প্রতীক এটা কিভাবে সম্ভব। এগুলো নৌকার প্রার্থী কার্ড করে দিয়েছে। তাই দায়িত্ব পালন করছি। এই কেন্দ্রের ৫টি বুথে কোথাও ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুরে ভোট বর্জন
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার আংগারিয়া, চন্দ্রপুর, রুদ্রকর ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দ মনিরুজ্জামান (বসির) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। দুপুর ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিকে, গোসাইরহাট ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোজাফর হোসেন সরদার কেন্দ্রে প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয় ও নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তারিখ আজিজ মোবারক ঢালী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট বয়কট
কুলাউড়া প্রতিনিধি জানান, কুলাউড়া কাদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আহমদ নির্বাচন বর্জন করেছেন। বেলা ২টায় উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন ও সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে। ইউনিয়নের চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকিচার ও ছকাপন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এই ৩টি কেন্দ্র। তাছাড়া ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা ও প্রশাসনের সহায়তায় জাল ভোট দেয়ারও অভিযোগ করেন। তিনি এই ইউনিয়নের নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত ও পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান। এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, আমি শুনেছি তিনি কন্ট্রোল রুমে একটি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
চাটখিলে ৯ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত
চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, চাটখিল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখলের অভিযোগে ৯ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, খালিশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানোখালী মদিনাতুল উলুম মাদরাসা, উত্তরে ফোরকানীয়া মাদরাসা, পূর্ব শ্রী নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাওর ভীমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাওর ফোরকানীয়া মাদরাসা, পূর্ব শোশালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুলশ্রী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়, বাইশসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বদলকোট বালিকা বিদ্যালয়। সকাল ১০টায় মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলে জাল ভোট
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীসহ ৫ জনকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং একই অভিযোগে এক প্রিজাইডিং অফিসারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চন্ডিপাশা ইউনিয়নে বাশহাটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে এক গার্মেন্টস কর্মীকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বাঁশহাটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কুষ্টিয়া জেলা ভেড়ামারা উপজেলার সাতমারিয়া গ্রামের রহমতউল্লাহর ছেলে রনি (২২) জাল ভোট দিতে গেলে পুলিশ আটক করে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিম উদ্দিন স্থানীয় সরকার নির্বাচন (ইউনিয়ন পরিষদ) বিধিমালা-২০১০-এর ৭২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে।
লক্ষ্মীপুরে দুটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে কেন্দ্র দখল, জালভোট, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন শেষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের এসআই মো. সেলিম উদ্দিন, কনস্টেবল সফিউল্যাসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের রামগঞ্জ-রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রায়পুরের সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক ও রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট দেয়ার অভিযোগে এক ইউপি সদস্য প্রার্থী আবদুল আল-মামুন, ফরিদউদ্দিনসহ তিনজনকে আটক করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার সকালে রায়পুর উপজেলা ও রামগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর, সৌনন্দপুর, সোনাপুর, চরকাচিয়া, চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, এল কে উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কক্ষে বিএনপি চেয়ারম্যানসহ অন্য প্রার্থীর এজেন্ট নেই। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের নেতৃত্বে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারছে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সমর্থকরা। সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আতঙ্ক তৈরি করার জন্য ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারার জন্য সহযোগিতা করছেন ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার। একইভাবে রামগঞ্জ উপজেলার লামচর, করপাড়া, ইছাপুর, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার উত্তর চরআবাবিল, সোনাপুর, দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নসহ ৮টি ইউনিয়নের ৭৪টি ভোটকেন্দ্রের চিত্র ছিল এমনটায়। এ যেন জালভোটের উৎসব ছিল। এদিকে দুপুরে ইছাপুর ইউনিয়নের সৌন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে জালভোট দেয়ার সময় ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল সমর্থক কেন্দ্রের ভেতরে বাধা দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। (মানবজমিন)