সম্পাদকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

2432_hrwডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে দেশের দুটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সব ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) অভিযোগ প্রত্যাহার করা। একই সঙ্গে মানহানী ও রাষ্ট্রদ্রোহের আইন আন্তর্জাতিক মানদন্ড লঙ্ঘন করে বলে তা বাতিল করা উচিত। এমন দাবি জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ২০শে ফেব্রুয়ারি নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ: চার্র্জিং এডিটরস ইজ ড্রামাটিক ব্যাকসøাইড’ (অর্থাৎ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাটকীয়ভাবে পশ্চাৎধাবন) শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে পরিষ্কার যে, এর উদ্দেশ্য হলো দেশের সব মিডিয়াকে ভীতি প্রদর্শন করা। সরকারকে প্রেসের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। তা নাহলে বাংলাদেশ কর্তৃত্বপরায়ণ একটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এতে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বিচারহীন অবস্থায় ২০১৩ সাল থেকে জেলে আটকে রাখার প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০শে ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম মোট ৫৪টি মানহানী ও ১৫টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার মুখোমুখি। কয়েক বছর আগে সেনা সূত্র থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত পাওয়া রিপোর্ট প্রকাশের কারণে এসব মামলা হয়েছে। একজন আইনজীবির করা মামলায় এ বছরের ১৬ই ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা হয়েছে। মামলা রয়েছে পত্রিকাটি ও এর কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও। এগুলো মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে করা মামলা। প্রতিটি মানহানি মামলায় শাস্তি হিসেবে দু’ বছরের জেল হতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তিন বছরের জেল হতে পারে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার যে, দেশের সব মিডিয়াকে ভীতি প্রদর্শন করাই উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে এখন পার্লামেন্টের বেশির ভাগ আসন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন সরকার ক্ষমতায়। তাদের এবং জাতীয় নির্বাহী সব কর্তৃপক্ষের উচিত মিডিয়ার স্বাধীনতা রক্ষা করা। তা না হলে বাংলাদেশ পরিণত হবে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নিরপেক্ষ মিডিয়ার বিরুদ্ধে এমন মামলা কয়েক বছর ধরেই একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা। বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ সমালোচনা করে এমন মিডিয়া হাউজ বন্ধ করে দিয়েছে। সম্পাদকদের জেলে দিয়েছে। ব্লগারদের বিচার করেছে। সরকারের পক্ষে যায় না এমন রিপোর্টের কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে বিচার ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও টেলিফোন সংলাপ প্রকাশ করার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের একটি অংশ আওয়ামী লীগ প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা এ দু’জনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আনে।