ধরিত্রি রক্ষায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিস্বাক্ষর

জাতিসংঘে ঐতিহাসিনক চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ছবি- এনা।
জাতিসংঘে ঐতিহাসিনক চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: ধরিত্রিকে রক্ষায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন বিশ্বনেতারা। স্বাক্ষর করলেন ঐতিহাসিক চুক্তি। চার মাস আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ূ সম্মেলনে বর্তমানে বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশের ৬০জনের বেশি নেতা নিশ্চিত করেছিলেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল এসেম্বলি হলে তারা ‘প্যারিস চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন। গত ২২ এপ্রিল সকালে (নিউইয়র্ক সময়) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ দপ্তরে ‘জাতিসংঘ জলবায়ূ পরিবর্তন কাঠামো’র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন। সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস ওঁলাদ। এরপর একে একে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে বাংলাদেশের পক্ষে ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ১৬৫টিরও বেশী দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলে জানা গেছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের এসেম্বলি হলে শুরু হয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মূল আলোচনা পর্ব। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন উদ্বোধনী পর্বে ভাষণ দেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস ওঁলাদ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ রাশিয়া, চিন, ইটালিসহ উন্নত দেশগুলো পরিবেশ রক্ষায় তাদের সর্বোচ্চ ও কার্যকর অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তার অঙ্গীকার করেন। সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে জাতিসংঘের শান্তির দূত এবং একাডেমি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, গণপ্রজাতন্ত্রী চাঁদের কুমারী ইব্রাহিম এবং ভারতের আমান মাহেন্দ্র বক্তব্য দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা জলবায়ূ পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলো উল্লেখ করে বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে নিঃসৃত কার্বন গ্যাস। আর জীবাশ্ম জ্বালানীর মূল হোতা শিল্পোন্নত দেশগুলো। জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর ভর করে শিল্পোন্নত দেশগুলো লাভবান হচ্ছে। তারা চিন্তাই করছে না যে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে কার্বন নিঃসরণের কারণে ধরিত্রী ধ্বংস হচ্ছে। এ ধরিত্রীকে বাঁচানোর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
জাসিংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, সম্প্রতি বিশ্বর ১৯৬টি দেশ প্যারিসে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি সর্বসম্মত এগ্রিমেন্ট গ্রহণ করেছে। কনফারেন্স অফ দি পার্টিজ (কুপ) ২১তম বিশ্ব সম্মেলনে দেশগুলোর গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রীর নিচের রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ আলোচনার পর দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সামনে এগ্রিমেন্টের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, সব দেশের চেষ্টা থাকবে তাপমাত্রা ১.৫ শতাংশের নীচে রাখা। চুক্তিতে প্রতি পাঁচ বছর পর পর অগ্রগতি মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটির বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২০ সালে । তবে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু হলো আজ থেকে। নিংসন্দেহে এটি একটি
ঐতিহাসিক চুক্তি। এর বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তির সফলতা।
প্যারিস জলবায়ু অঙ্গীকারের পুনর্ব্যক্ত করে চুক্তি স্বাক্ষরকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বিশ্বনেতারা আরো বলেন, বিশ্বের দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা রাখবে। ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সমুদ্র পৃষ্ঠের উঞ্চতা বৃদ্ধির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও বিশ্বশান্তি বজায় রাখাতেও চুক্তিটি অন্যন্য ভূমিকা রাখবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, এটি বিশ্বের মাইল ফলক অঙ্গীকার। কেননা এটি সবার জন্য ইতিবাচক। বিশ্বের ১৯৬টি দেশ এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে পরিবেশকে বাঁচাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানীকে বিদায় জানাতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধরিত্রিকে রক্ষায় যে কোনো কার্যকর উদ্যোগের পাশে থাকবে।
প্যারিস সম্মেলনে অংশ নেওয়া পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছে জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে ধরিত্রী সুরক্ষা হচ্ছে না তা বিশ্বনেতাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের ঐতিহাসিক চুক্তির বাস্তবায়ন হলে ধরিত্রী বাঁচবে, সূচনা হবে নতুন এক যুগের।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জানান, চুক্তিটির বাস্তবায়নের আরো পাঁচ বছর সময় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে চুক্তির অ¯পষ্ট বিষয়গুলো আলোচনার সুযোগ পাবে বিশ্ববাসী।