মোগলাবাজারে বাসররাতে নববধূর আকুতি : আমাকে নষ্ট করবেন না
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাসর রাতেই বরের কাছে নববধূর আকুতি, আমাকে নষ্ট করবেন না। আমি আমার প্রেমিকের। তাকে আমার সবকিছু সঁপে দিয়েছি। কিন্তু পিতার চাপে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। স্ত্রীর এমন আকুতি শুনে মাথায় বাজ পড়ে আলম হোসেনের। সংসারে শান্তির জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করে বিয়ে করেছিলেন মসজিদের ইমামের মেয়েকে। দিশেহারা হয়ে পরদিন খবর দেয়া হয় কনের পিতাকে। সমাজকে ডেকে তুলে দেয় পিতার কাছে। কিন্তু ৫ দিন পর আলমের বিরুদ্ধে ওই কনে করেন নারী নির্যাতন মামলা। হতবাক হয়ে যান সবাই।
কনে আফরোজা বেগম জেসমিন। বয়স ১৯ বছর। পিতা মাওলানা নজরুল ইসলাম। বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রূপচেং গ্রামে। আর বর আলম হোসেন। বয়স ৩০। পিতা নাজিমউদ্দিন ইরান। বাড়ি সিলেট শহরতলির মোগলাবাজারের তিরাশিগাঁওয়ে। আলম হোসেন পেশায় একজন সিএনজিচালক। তিনি বছরের বেশির ভাগ সময় কাটান তাবলিগের ‘চিল্লায়’। এ কারণে আলমের ইচ্ছা বিয়ে করবেন ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক। ধর্মপ্রাণ মেয়ে বিয়ে করবেন তিনি। পাশের গ্রামের তাবলিক জামাতের সাথী নজরুল ইসলাম কনে দেখেন। কনের পিতা নজরুল ইসলাম মসজিদের ইমাম। মোগলাবাজারের একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তাবলিগ জামাতের কর্মী নজরুল ইসলাম বর আলমের কাছে জেসমিনের বিয়ের প্রস্তাব দেন। আর এই প্রস্তাবের সূত্র ধরে কনে দেখা হয়, বিয়ের কথাবার্তা হয়। এরপর ৬৫ হাজার টাকার কাবিনে বিয়েও ঠিক হয়। উভয় পরিবারের সম্মতিতে ৭ই মার্চ বিয়ে হয়। বিয়ের দিনই ইসলামী বিধান মতে আলম হোসেন নগদ কাবিন দিয়ে বিয়ে করেন। এরপর নববধূ জেসমিনকে জৈন্তাপুর থেকে নিয়ে আসেন নিজ বাড়ি মোগলাবাজারের তিরাশিগাঁও গ্রামে। বাসর রাতে ঘটে বিপত্তি। আলম যখন স্ত্রীর কাছে যান তখনই বাদ সাধলেন জেসমিন। জেসমিন বলে বলেন, ‘আমি অন্যের। ওর সঙ্গে মেলামেশা করেছি।’ এসব কথা নিজের মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন আলম। ওই রাতে আলমকে জেসমিন জানায়, তার চাচাতো ভাই ছয়ফুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের কারণে তাদের মধ্যে মেলামেশা হয়েছে। এখন পিতা নজরুল ইসলামের চাপাচাপিতে বিয়ে করেছে। তার ইজ্জত নষ্ট না করার জন্য বর আলমকে অনুরোধ জানায় জেসমিন। এ কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান আলম। খবর দেন শ্বশুর নজরুল ইসলামকে। ডেকে আনা হয় বিয়ের উকিল নজরুল ইসলাম ও বিয়ের মাওলানা সাঈদ আহমদকে। ১০ই মার্চ এ নিয়ে বৈঠক হয় বর আলমের বাড়িতে। ওই বৈঠকে আলম সবকিছু খুলে বলেন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান। এ অবস্থায় স্থানীয় মেম্বার আবদুল মতিনসহ সালিশ-ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার জন্য ২৫শে মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই সময় পিতা মাওলানা নজরুল ইসলামের সঙ্গে মেয়েকে জৈন্তাপুরের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বরের বাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার ৫ দিন পর ১৫ই মার্চ জেসমিনকে ভর্তি করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে। এক দিন ভর্তি থাকার পর ১৬ই মার্চ জেসমিন বাদী হয়ে আলমের বিরুদ্ধে মোগলাবাজার থানায় এজাহার দাখিল করে। ওই এজাহারে জেসমিন জানায়, বিয়ের রাতেই সিএনজি ক্রয় বাবদ ৪ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আর এ টাকার জন্য সে তাকে নির্যাতন করে। ৯ই মার্চ রাতে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এদিকে, এজাহার দাখিলের পর সিলেটের মোগলাবাজার থানা পুলিশ ১৯শে মার্চ মামলা রেকর্ড করে। আর এ মামলা রেকর্ড নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, পিতার বাড়িতে যাওয়ার দিনই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ৫ দিন পর হাসপাতালে নির্যাতিত হয়ে ভর্তি হওয়া রহস্যজনক। আর স্বামীর বাড়িতে কেউ জেসমিনকে নির্যাতন করেনি। এদিকে, এ মামলায় ক্ষেপেছেন স্থানীয়রা। তারা ১৭ই এপ্রিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে স্থানীয় মেম্বার আবদুল মতিনসহ অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী স্বাক্ষর করেন। তারা পুলিশ কমিশনারকে জানান, স্থানীয় মেম্বার আবদুল মতিন, প্রবীণ মুরব্বি শামসুল ইসলাম কাসেম, মো. কুনু মিয়া, ফরহাদ হোসেন ও শায়েস্তা মিয়া এলাকার মুরব্বিদের মধ্যস্ততায় মেয়েকে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় সবাই দেখেছেন মেয়েকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কিন্তু এখন যৌতুক ও নির্যাতন মামলা করে হেনস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা পুলিশ কমিশনারের কাছে এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। (মানবজমিন)