সিলেটে দুই জা’র দ্বন্দ্ব ঘর ছেড়ে আদালতে
ডেস্ক রিপোর্টঃ একজনের নাম শিউলী নূর। অন্যজন শিল্পী বেগম। সম্পর্কে তারা জা। দুই জা’র দ্বন্দ্ব নিয়ে তোলপাড় এখন সিলেটের খাসদবির এলাকা। দুই জনের পাল্টাপাল্টি মামলায় আসামি তারা দুজন। শিউলী নূরের স্বামী নিমার আলী সৌদি প্রবাসী। আর শিল্পী বেগমের স্বামী আব্বাস আলী শিউলী নূরের মামলার আসামি হয়ে কারান্তরীণ। ঘটনা গত ৬ই এপ্রিলের। ঘটনাস্থল সিলেট নগরীর খাসদবির বন্ধন এফ-২০নং বাসা। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শিউলী নূর, শিল্পী বেগম ও তাদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আর এই সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে এগিয়ে যান স্থানীয় এলাকাবাসী। মারা যাওয়া শিপার আলীর জমি নিমার আলীর স্ত্রী ও লোকজন দখলে নিতে চাইলে এই সংঘর্ষ বাধে। মৃত শিপার আলীর সম্পত্তি রক্ষার্থে এগিয়ে গিয়েছিলেন শিল্পী বেগম। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন অনুধাবন করার পর বিরোধপূর্ণ ঘরের চাবি তাদের হাতে নিয়ে নেন এবং বিষয়টি সালিশে মীমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসীর ওই ভূমিকায় খুশি হননি শিউলী নূর। তিনি এলাকার সালিশ বিচার ডিঙ্গিয়ে সিলেটের বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। ৭ই এপ্রিল সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় নিমার আলীর স্ত্রী শিউলী নূরের দায়ের করা মামলার আসামি করা হয়েছে দেবর আব্বাস আলী, জা শিল্পী বেগম, ননদ রোসনা বেগম, পারভিন বেগম, নাজমা বেগম, ননদের স্বামী মনসুর বক্সসহ ৭ জনকে। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন আসামিরা তার ছেলেদের ওপর হামলা করে। পরে তার ওপরও হামলা চালানো হয়। এ মামলায় গত ১২ই এপ্রিল আদালতে হাজিরা দিতে যান আব্বাস আলী, তার স্ত্রী শিল্পী বেগমসহ ৭ জন। এর মধ্যে আদালত আব্বাস আলীর জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। আর অপর আসামিদের জামিনে মুক্তি দেন। এদিকে, শিউলী নূরের মামলার পর এলাকাবাসীর অনুমতি নিয়েই কারাবন্দি আব্বাসের স্ত্রী শিল্পী বেগম এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে শিউলী নূর, তার ছেলে জাকারিয়া, কিবরিয়া, রুবেল, সোহেল আহমদ, কুলসুমা বেগম, তয়জুন্নেছাকে। মামলার প্রেক্ষিতে আসামিরা গত বুধবার আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এদিকে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের ও জামিনের পর শিউলী নূর এলাকার সালিশকারীদের চাপ প্রয়োগ করেন চাবি দেয়ার জন্য। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকায় এবং বিরোধ সংঘর্ষ এড়াতে তারা চাবি দেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন শিউলী নূর ও তার লোকজন। তারা পঞ্চায়েত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুককে পুলিশ দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে। ওদিকে চাবি না পেয়ে শনিবার সিলেটের বিমানবন্দর থানায় পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য হুমায়ুন আহমদ মাসুক আহমদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। আর থানায় সাধারণ ডায়েরির ঘটনায় আরও ক্ষেপেছে এলাকাবাসী। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে এলাকাবাসী আজ-কালের মধ্যে বৈঠকে বসবে বলে জানিয়েছেন তারা। পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য হুমায়ুন আহমদ মাসুক জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত কমিটি সংঘর্ষকালীন সময়ে ঘটনাস্থলে যায়। যে ঘর নিয়ে বিরোধ সেই ঘরের চাবি শান্তি রক্ষার্থে এলাকাবাসী নিয়ে এসেছেন। এরপর চাবি তার কাছে দেয়া হয়। তিনি বলেন, পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত ছাড়া চাবি কারও কাছে দেয়া সমুচিত হবে না। এ বিষয়টি জানানোর পর তারা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি দায়ের করে। আর এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ রয়েছেন। মামলার বাদী শিল্পী বেগম জানিয়েছেন, সংঘর্ষকালে নিজ ছেলের ভুল টার্গেটে মা শিউলী আহত হয়। আর পরবর্তীতে শিউলী নূর আহত হওয়ার মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় তার স্বামী কারাগারে রয়েছে। এলাকাবাসীর কথা তারা শুনছে না। এদিকে, ননদ রোসনা বেগম, পারভিন বেগম, নাজমা বেগম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নিমর আলী ও তার স্ত্রী শিউলী মৃত ভাইয়ের জমি আত্মসাতের চেষ্টা চালায়। এ খবর পেয়ে তারা গিয়ে দেখেন সংঘর্ষ হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে মামলায় ভাইয়ের স্ত্রী শিউলী তাদের তিন বোনকেও আসামি করে। স্বামীর ঘরে থেকেও তারা আদালতে যেতে হয়েছে। জামিন নিতে হয়েছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। তারা বলেন, তারা তিন বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ভাই ও ভাবী। এখন মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এসবের প্রতিবাদ করায় তারা এখন আসামি। (মানবজমিন)