‘আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জাতীয় বীর, এ যুগের তিতুমীর’
মুহাম্মদ নূরে আলম বরষণ লন্ডন থেকেঃ দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দীত্বের তিনবছর উপলক্ষে লন্ডনে এক প্রতিবাদ সভায় বিশিষ্টজনরা বলেছেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জাতীয় বীর, এ যুগের তিতুমীর। দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী বীরের প্রয়োজন। অকুতোভয় আপসহীন এই সম্পাদক মজলুম মানুষদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এজন্যই অগণতান্ত্রিক সরকার ভীত হয়ে তাকে কারাবন্দী রেখেছে। মিথ্যা মামলায় আটকে রাখার প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মজলুম এই সম্পাদকের মুক্তি দাবি করেন বক্তারা।
গতকাল বুধবার বিকেলে ইস্ট লন্ডনে অবস্থিত লন্ডন স্কুল অব কমার্স এন্ড আইটি’র অডিটোরিয়ামে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে’ এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। বৃটেন প্রবাসী বাংলাদেশী বিশিষ্ট আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিকরা সভায় বক্তৃতা করেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কে এম এ মালিকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, পেশাজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, বিশিষ্ট রাজনৈতিক গবেষক ড. কামরুল হাসান, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, নারীনেত্রী ফেরদৌস রহমান, দৈনিক আমার দেশ-এর কারানির্যাতিত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকে’র সভাপতি ব্যারিস্টার আবুল মনসুর শাজাহান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার আশরাফুল আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আলী আকবর, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন, রাজনীতিক আবদুল জলিল খান, নাজমুল হাসান জাহিদ, সাংবাদিক আতিউল্লাহ ফারুক, সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর, সাংবাদিক নূরে আলম বরষণ, সাংবাদিক আশিক মাহমুদ, সাংবাদিক জাহিদ গাজী, মানবাধিকার কর্মী ফরিদুল ইসলাম, এম সাঈদ বাকী, গবেষক শাহজালাল, সাবেক ছাত্রনেতা মো. হাসিবুল হাসান, জামাল উদ্দিন, গরীব হোসেন কান্না, শরিফুল ইসলাম, শরফরাজ আহমেদ শরফু প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দৈনিক আমার দেশ-এর সাংবাদিক এম মাহাবুবুর রহমান।
প্রতিবাদ সভায় ইউকে বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক বলেন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের কাছে জাতীয় মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন এই মজলুম জননেতাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের আরো কঠোর লড়াই গড়ে তুলতে হবে। এজন্য ইউরোপজুড়ে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। শেখ হাসিনার আসন্ন লন্ডন সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বৃটেনের মাটিতে পা রাখতে হলে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে আসতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে গণতন্ত্রের পূন্যভূমিতে শেখ হাসিনার পদার্পণ রুখে দেবে প্রবাসীরা।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে’র আহ্বায়ক ড. কেএমএ মালিক বলেন, শুধু শেখ পরিবার নয়, মাহমুদুর রহমান বাকশালী শক্তির দুর্নীতি ও অপশাসনের মুখোশ উম্মোচন করেছেন। আধিপত্যবাদীদের চক্রান্তের খবর আগেই ফাঁস করেছেন সাহসী এই বীর। চক্রান্তের হাত থেকে রক্ষার জন্য জাতিকে সজাগ করেছেন। এজন্যই আজ তাকে কারাভোগ করতে হচ্ছে। তিনি এ যুগের তীতুমির হয়ে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটি সুপরিকল্পিত সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া বাংলাদেশে অশুভ ও অগণতান্তিক শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি। এলক্ষ্যে গণমুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি নেতৃত্বকে নতুন পরিকল্পনা তৈরী করার পরামর্শ দেন এই শিক্ষাবিদ।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে’র যুগ্ম আহ্বায়ক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ বলেন, মাহমুদুর রহমান একটি আদর্শের নাম, একটি লড়াইয়ের নাম। বাংলাদেশ ও মাহমুদুর রহমান পরিপূরক হয়ে গেছে। দেশ-বিদেশে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবিতে আন্দোলন চলছে, একটি কার্যকর লড়াই গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে’র সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ বলেন, গত তিন বছর ধরে পত্রিকা বন্ধ রয়েছে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারাবন্দী। চার শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারি বেকারত্বের ঘানি টানছেন। সম্প্রতি ৭২ মামলায় জামিন পেলেও নতুনভাবে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে কারাবন্দী রাখা হয়েছে। দিনদিন অসুস্থ পড়ছেন সত্যনিষ্ঠ আপসহীন এই সম্পাদক। তাকে মুক্ত করতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক গবেষক ও বুদ্ধিজীবী ড. কামরুল হাসান বলেন, আমার দেশ এবং তার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অপরাধ কী? অপরাধ হলো সাহস করে সত্য লেখা এবং সত্য কথা বলা। সরকারের দূর্নীতি, লুটপাট, গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করাসহ অপশাসনের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনই অপরাধ। আর এ কারণে ৩ বছর হলো আমার দেশ বন্ধ এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অন্ধকার কারাগারে নির্যাতন সহ্য করছেন। তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করতে একটি আদর্শিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, গত বছর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারাভোগের দুই বছর উপলক্ষে লন্ডনে একটি সভায় অনেক শুভাকাঙ্খী প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি আদালতের কাছে জামিন চাচ্ছেন না কেন? এবছর আমরা এর সঠিক জবাব পেলাম। আদালতের কাছে বিচার না পেয়েই তিনি অনাস্থা দেখিয়েছিলেন। সহকর্মী, পরিবার ও শুভাকাঙ্খীদের অনুরোধে তিনি পুনরায় আদালতের কাছে জামিন চেয়েছেন। ৬৮ মামলায় জামিনও পেয়েছেন। কিন্তু এরপরই নতুনভাবে ৬৯, ৭০, ৭১ ও ৭২তম মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আদালতের দলকানা অবস্থানের পর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্লজ্জ আচরণ আপনারা দেখতে পেয়েছেন।
সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান বলেন, মাহমুদুর রহমান সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে কখনো দ্বিধা করেননি। এজন্যই তাকে কারাবন্দী রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগে যখন ৬৮ মামলায় জামিন পেলেন, এরপর তাঁর বিরুদ্ধে নতুনভাবে গাড়ি পোড়ানো মামলা দেয়া হলো। বিষয়টা এমন – ‘তুমি জামিন চাইলে কেন, এই অপরাধে তোমাকে এখন রিমান্ডে নেয়া হবে।’ ফের জামিন পেলে আবারো রিমান্ডে যেতে হবে!!! এমন বর্বর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর অকুতোভয় সম্পাদক এখন কারাপ্রকোষ্ঠের অন্ধকারে সময় পার করছেন।