হাকালুকি হাওরে কৃষকের চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ধান

Hakaluki 2বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :
কারবালার মাতম চলছে হাকালুকি তীরবর্তী কৃষকদের ঘরে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চৈত্র মাসে অকাল বন্যায় এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনার ধান। ইতোমধ্যে অর্ধেক ধান তলিয়ে গেছে। শতভাগ ফসল হারানোর শঙ্কায় কৃষকেরা কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন।
সংশিষ্ট উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওর তীরের জুড়ী উপজেলাতে ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলাতে ৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর ও বড়লেখা উপজেলাতে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ এই দুই উপজেলায় কমপক্ষে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। গত তিন-চার দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে উজানের পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরে পানি বাড়ছে দ্রুত।
সরেজমিনে ৬ এপ্রিল বুধবার কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ও জয়চন্ডী ইউনিয়নে এবং জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, হাওরে অর্ধেকেরও বেশি এলাকার বোরো ধান তলিয়ে গেছে। বাকিটাও হারানোর আশঙ্কায় কৃষকেরা অপেক্ষাকৃত উচু জমির কাচা ও আধাপাকা বোরো ধান কাটছেন। অনেকে কাটা ধান আঁটি বেঁধে এনে শুকনো স্থানে স্তুপ করে রাখছেন।
হাওর তীরের জায়ফরনগর গ্রামের শফিক মিয়া বললেন, ‘১০ কিয়ারে (বিঘা) ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের লাগিয়েছি। খুব ভালা ফসল হইছে। এখনো আধাপাকা রইছে। হাওরে পানি বাড়িয়া ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তাই, তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছি। একই গ্রামের খায়রুল ইসলাম হাওরের ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ছয় বিঘা তলিয়ে গেছে। খায়রুল বলেন, ‘কষ্টের ফসল তো রক্ষা করতে হবে। নিজেই ধান কাটতে নামছি। চাটেরা গ্রামের আকমল আলী বলেন, আকাশের অবস্থা ভালা না। ধান কাটা ছাড়া উপায় নাই।
এলাকাবাসী জানায়, কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল, বরমচাল, ভাটেরা, ও জয়চন্ডী ইউনিয়ন এবং বড়লেখা উপজেলার সুজানগর, তালিমপুর, বর্ণি ও দাসেরবাজার ইউনিয়নে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকায়ও পানিতে তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান প্রাণপন চেষ্টা করে কাটার চেষ্টা করছেন।
কুলাউড়ার কৃষি কর্মকর্তা এম এম শাহনেয়াজ, জুড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার ও বড়লেখার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কুতুব উদ্দিন জানান, হাওরে পানি দ্রুত। বৃষ্টি না থামলে শতভাগ ফসল হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাত থামলেও শতভাগ ক্ষতি না হলেও তলিয়ে যাওয়া ধানের ক্ষতি হবে।