সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ, শনাক্ত হতে পারে নাজিমের খুনি
ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে বুধবার (০৫ এপ্রিল) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বৈকালীন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিমউদ্দিন সামাদকে প্রথমে কুপিয়ে ও পরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়া গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা।
এর ঠিক দু’শ গজ দূরেই একটি সিসি ক্যামেরার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। খুনিদের শনাক্ত করতে পুলিশ সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার এ ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে তারা।
বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর আমরা পুরো এলাকায় কোথায় কোথায় সিসি ক্যামেরা আছে, তার সন্ধান চালিয়েছি। অবশেষে ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দু’শ গজ দূরেই একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সিসি ক্যামেরার সন্ধান পেয়েছি।
তিনি জানান, শুক্রবার ওই ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হবে। আশা করা হচ্ছে, ওই ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে হয়ত খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। কারণ, খুনের ধরন দেখে মনে হয়েছে, খুনিরা হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই নাজিমউদ্দিনকে অনুসরণ করেছিল। সবশেষ, সুযোগ বুঝে তিন রাস্তার মাথায় নাজিমউদ্দিনকে হত্যা করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হত্যাকাণ্ডের স্থানটি (৩৬ হৃষিকেশ দাশ রোড, একরামপুর মোড়, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর) সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সুবর্ণা টেইলার্সের সামনে এখনো রক্ত পড়ে রয়েছে। বন্ধ রয়েছে, আশেপাশের বেশ কয়েকটি দোকানও। এলাকাবাসীর মধ্যেও কাজ করছে চাপা আতঙ্ক।
খুনিরা কেন ওই স্থানটিই বেছে নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সূত্রাপুর থানার ওসি (তদন্ত) সমীর চন্দ্র সূত্রধর বলেন, যেখানে নাজিমউদ্দিন সামাদকে খুন করা হয়েছে, সেই একরামপুর মোড়েই এসে মিশেছে সদরঘাট যাওয়ার একটি রাস্তা। অন্য আরেকটি রাস্তা গেছে সূত্রাপুর থানার দিকে। খুনিরা সহজেই পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনরাস্তার মোড়টিকে বেছে নিয়েছে বলে আমরা ধারণা ধারণা করছি।
এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রজনী চৌধুরী রোডের যে বাসায় নাজিমউদ্দিন ভাড়া থাকতেন, সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকাতেও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২৯/গ নম্বর বাড়িরর ৬ষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে মেস করে থাকতেন নাজিমউদ্দিন। দেখা গেল, টেবিলে সাজানো রয়েছে আইন বিভাগের কিছু বই। একটি তোশক ও একটি ব্রিফকেস।
সূত্রাপুর থানার এসআই অনাথ মিত্র ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ব্রিফকেসটি খুললে দেখা যায়, তাতে একটি ডিজিটাল পাসপোর্ট, কিছু সার্টিফিকেট, একটি ডায়েরি, একটি সাদা শার্ট ও দুটি প্যান্ট রয়েছে। এক প্যাকেট ওয়ানটাইম রেজারও। তবে তার কক্ষে কোনো কম্পিউটার তো দূরের কথা, ফ্যান পর্যন্ত নেই।
নাজিমউদ্দিনের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার সময় কথা হয়, বাড়িওয়ালা মহিউদ্দিন ও ওই বাড়ির দারোয়ান আব্দুল কাদেরের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাজিমউদ্দিন মাত্র দুইমাস আগে ওখানে ভাড়া নিয়েছেন। রোজ সকাল ১০টার মধ্যে তিনি বের হয়ে যেতেন। ফিরতেন রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে। তার সঙ্গে তেমন কোনো বন্ধুবান্ধবও দেখা করতে আসতেন না। এমনকি তার প্রতিবেশীরাও কখনো দেখেননি নাজিমউদ্দিনকে।
নাজিমউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে কথা হলে লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নুরুল আমিন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমস্যা হয়েছে যে, ওই এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তে একটু সময় লাগছে। তবে খবর পেয়েছি, একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। শুক্রবার ওই ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে খুনিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে, নাজিমউদ্দিনের মরদেহ বুঝে নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ড থেকে আসেন চাচাতো ভাই বদরুল হক। তবে তিনি মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পরে অবশ্য তিনি বলেন, আমি আসলে মামলা করতে আসিনি। ভাইকে দাফন করে ইংল্যান্ড ফিরে যাবো। সম্ভব হলে আমাকে নাজিমের মরদেহটি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন!
বৃহস্পতিবার রাতে নাজিমউদ্দিন হত্যায় পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫/৬ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় এ মামলা (নম্বর- ০২)।
অনলাইনে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন নাজিমউদ্দিন। সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীও ছিলেন তিনি। হেফাজতের আন্দোলনের সময় ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ যে তালিকা কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে নাজিমেরও নাম ছিল।
নাজিমউদ্দিন হত্যার পর বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেই সঙ্গে সারাদেশেও বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, মূলত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকে ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে নাজিমউদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়েছে। এতে করে তনু হত্যার প্রতিবাদে দেশে যে আন্দোলন তুমুল আকার ধারণ করেছে, সেটিকে দৃষ্টির আড়াল করতেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।-সূত্র: বাংলামেইল