মেয়রবিহীন সিসিকে রিকশাভাড়ার তালিকা টানানো হয়নি পাঁচ মাসেও
নুরুল হক শিপু :: সোমবার দুপুর ২টা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দুই যুবক দাঁড়িয়ে আছেন জেল রোডের অনুরাগ হোটেলের সামনে। তাদের পাশে দু’জন বৃদ্ধ লোক দাঁড়ানো। চার জনই রিকশার অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ একটি রিকশার দেখা মিলল। দুই যুবকের একজন এগিয়ে গিয়ে রিকশা চালককে ডাকলেন। ‘ও রিকশা যাইবায়নি’। চালক রিকশা থামিয়ে যুবকরা কোথায় নামবেন জানতে চাইলেন। যুবকরা চালককে বললেন, ‘জিন্দাবাজার পয়েন্টো যাইতাম’। চালক সাথে সাথে বললেন, ২০ টাকা ভাড়া লাগবে। ২০ টাকা চাইতেই উভয়ের মধ্যে বাঁধল বিপত্তি। একপর্যায়ে কথাকাটাকাটি, গালাগালি। এরপরই হাতাহাতি।
এমন ঘটনা শুধু যে সোমবার দুপুরে ঘটেছে তা নয়; সিলেট নগরে সচরাচরই দেখা যায় এমন দৃশ্য। রিকশার যাত্রী আর চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই হাতাহাতি বাগ্বিতন্ডা আর কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে অনেক লেখালেখির পর রিকশাভাড়ার তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রিকশাভাড়ার তালিকা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করেন। কিন্তু সে সময় ওই কমিটি তালিকা তৈরি করেনি। ২০০৮ সালে কামরান দ্বিতীয়দফা মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রিকশাভাড়ার তালিকা তৈরি করতে পুনরায় কমিটি গঠন করেন। এই কমিটিও ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।
আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালে সিসিকের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রিকশাভাড়ার তালিকা তৈরি করতে আবারও কমিটি গঠন করা হয়। অবশেষে সিসিক কর্তৃপক্ষ নগরের রিকশাভাড়ার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে গেল বছরের অক্টোবর মাসে। তালিকাটি নগরের ৫১ টি মোড়ে টানানোর কথা ছিল। কিন্তু তালিকা করেই দায়িত্ব শেষ যেন সিসিক কর্তৃপক্ষের। রিকশাভাড়ার তালিকা চালক ও যাত্রীদের জানানো হয়নি। অজ্ঞাত কারণে কোনো মোড়েই এখনো টানানো হয়নি রিকশাভাড়ার তালিকা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, আমারা বাজারের চাহিদা বিবেচনা করেই রিকশাভাড়ার তালিকা করেছি। তালিকা টানানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নগরীর কোনো পয়েন্টেই তালিকা টানানো না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জানব কেন লাগানো হলো না।
সিসিক সূত্র জানায়, রিকশাভাড়া নির্ধারণী কমিটি নগরীতে প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা, প্রতি ঘণ্টা ৫০ টাকা হারে নির্ধারণ করে। তবে ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সিসিকের রিকশা ভাড়ার তালিকায় প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা ও প্রতি ঘণ্টা ৩০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৭৩ সালে বাবরুল হোসেন বাবুল সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন রিকশাভাড়ার তালিকা করা হয়। ওই সময় তালিকা পৌরশহরের বিভিন্ন পয়েন্টে টানানো হয়। সে তালিকায় সর্বনি¤œ ভাড়া ছিল ৫০ পয়সা। আর গত বছরের অক্টোবর মাসে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের ৫১টি পয়েন্টে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানানোর সিদ্ধান্ত হয়। মেয়রবিহীন সিসিকে রিকশাভাড়ার তালিকা প্রকাশের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও সেটি দীর্ঘ পাঁচ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, তালিকা করার পর আমরা দরপত্র আহ্বান করি। এরপর মিটিংয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদনও দেওয়া হয়। দরপত্র অনুযায়ী ৪টি প্রতিষ্ঠান রিকশাভাড়ার তালিকার নমুনা সিসিকে জমা দেয়। আমরা যাচাই-বাচাই করে যে প্রতিষ্ঠানটি অল্পখরচে ভালো নমুনা দিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে এ সংক্রন্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এক মাসের ভেতরে রিকশাভাড়ার তালিকা নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে টানানো হবে।
পাঁচ মাস আগে সিসিকের করা তালিকা অনুযায়ী নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিলগড় ৩০ টাকা, শিবগঞ্জ ২০ টাকা, মিরাবাজার ১০ টাকা, যতরপুর ১৫ টাকা, শাহজালাল উপশহর (ব্লক-এ, আই, এফ, জি, এইচ ও জে) ৩০ টাকা, উপশহর (ব্লক-বি, সি, ডি ও ই) ২০ টাকা, শাহজালাল ব্রিজ ২০ টাকা, নতুন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমা বাস টর্মিনাল ৩৫ টাকা, কিন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনাল ২০ টাকা, শাহজালাল ব্রিজ হয়ে রেল স্টেশন ৩৫ টাকা, কিন ব্রিজ হয়ে রেল স্টেশন ২০ টাকা, কিন ব্রিজ হয়ে বাবনা পয়েন্ট ২০ টাকা, কিন ব্রিজ হয়ে টেকনিক্যাল ৩০ টাকা, শাহজালাল ব্রিজ হয়ে কদমতলী ৩০ টাকা, কিন ব্রিজ হয়ে কদমতলী ৩০ টাকা, লাউয়াই ৪০ টাকা, বিসিক শিল্পনগরী ৪০ টাকা, খোজারখোলা ৩০ টাকা, বরইকান্দি ৩৫ টাকা, গোপশহর মকন দোকান ৪০ টাকা, ঝেরঝেরি পাড়া ১৫ টাকা, দর্জিবন ১৫ টাকা, শাহী ঈদগাহ ২০ টাকা, সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস ৩৫ টাকা, শিবগঞ্জ সোনারপাড়া ২০ টাকা, বালুচর ৩৫ টাকা, কাজীটুলা ১৫ টাকা, ইলেকট্রিক সাপ্লাই ২০ টাকা, উত্তর কাজীটুলা ২০ টাকা, গোয়াইটুলা ২৫ টাকা, আম্বরখানা ১৫ টাকা, লেচুবাগান ২০ টাকা, চৌকিদেখি ৩০ টাকা, লাক্কাতুরা ৩০ টাকা, হাউজিং এস্টেট ২০ টাকা, বাদামবাগিচা ৩০ টাকা, মাছিমপুর ১৫ টাকা, দর্শন দেউড়ি ১৫ টাকা, রাজারগলি ১৫ টাকা, শাহজালাল দরগাহ গেইট ১০ টাকা, মিরের ময়দান ১০ টাকা, সুবিদবাজার ১৫ টাকা, গোয়াবাড়ি ৩০ টাকা, আখালিয়া বিডিআর ক্যাম্প গেইট ও শাবি ক্যাম্পাস গেইট ৩৫ টাকা, বাগবাড়ি ২০ টাকা, এতিম স্কুল ২০ টাকা, কানিশাইল খেয়াঘাট ৩০ টাকা, নবাব রোড (শেখঘাট পিচের মুখ, কলাপাড়া ডহর) ২০ টাকা, ঘাসিটুলা বেতের বাজার ২৫ টাকা, শেখঘাট ১০ টাকা, ভাঙ্গাটিকর ১৫ টাকা, ভাতালিয়া ১৫ টাকা, রিকাবিবাজার ১৫ টাকা, ওসমানী মেডিকেল ২০ টাকা, দাড়িয়াপাড়া ১০ টাকা, মির্জাজাঙ্গাল ১০ টাকা, জল্লারপার ১০ টাকা, পশ্চিম কাজিরবাজার ১০ টাকা, ছড়ারপার ১৫ টাকা, কুমারপাড়া পয়েন্ট ১৫ টাকা, কুমারপাড়া (ঝর্নারপার) ২০ টাকা, কুমারগাঁও বাস টার্মিনাল ৪০ টাকা, মিরাবাজার আগপাড়া ১৫ টাকা, সোবহানিঘাট ১০ টাকা, চালিবন্দর ১০ টাকা, তোপখানা ১০ টাকা, আম্বরখানা কলবাখানী ২০ টাকা, কিন ব্রিজ হয়ে ভার্থখলা ২০ টাকা, পীর মহল্লা ২৫ টাকা, মেন্দিবাগ ২৫ টাকা, সাদাটিকর ৩০ টাকা, কুশিঘাট ৩৫ টাকা, শাপলাবাগ ৩৫ টাকা, টুলটিকর ৪০ টাকা এবং মিরাপাড়া ৩৫ টাকা রিকশাভাড়া নির্ধারণ করা হয়।