অর্থ মন্ত্রণালয়ে বদলি আতঙ্ক!
ডেস্ক রিপোর্ট :: রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। সংবাদমাধ্যমের মতে, গভর্নরের পদত্যাগে এ ঘটনাটি যত না অনুঘটক ছিল, এর চেয়ে বেশি ছিল গভর্নরের প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের চেপে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
দীর্ঘদিন ধরে গভর্নরের সঙ্গে খুবই নাজুক সম্পর্ক ছিল অর্থমন্ত্রীর। রিজার্ভ চুরির ঘটনা তার ক্ষোভ প্রশমনের সুযোগ করে দেয় অর্থমন্ত্রীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও অর্থমন্ত্রীর সম্পর্ক ভালো নয়। তাদের বিরুদ্ধে নিজের অসন্তোষের কথা ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে জানিয়েছেন তিনি।
ফলে বেশ কয়েক দিন ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলছে বদলি আতঙ্ক। মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগের শীর্ষ পদে এ আতঙ্ক বেশি। বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) শীর্ষ পদের ক্ষেত্রে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসছে বলে সেখানে গুঞ্জন চলছে। সরিয়ে দেয়া হতে পারে এনবিআরের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব নজিবুর রহমানকে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। একটি জাতীয় দৈনিকে অর্থমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন না। তিনি শুধু বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান।
সূত্র আরও জানায়, রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের তৎপরতা নিয়েও সন্তুষ্ট নন অর্থমন্ত্রী। এ বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা তিনি ঘনিষ্ঠজনদের কাছে ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। এ সময় এনবিআরের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকার কথা। কিন্তু অনেক দিন ধরে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ নেই বলে সূত্র জানায়।
গূত্রমতে, এনবিআরের চেয়ারম্যান পদে শিগগিরই পরিবর্তন আসতে পারে। এ পদেও জন্য একজন দক্ষ আমলা খোঁজা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইআরডির কর্মতৎপরতা নিয়েও অর্থমন্ত্রী তেমন একটা খুশি নন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান। ইআরডির বর্তমান সচিব পদে রয়েছেন মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। চীনের নেতৃত্বাধীন অবকাঠামো-সংক্রান্ত বিনিয়োগ ব্যাংক (আইআইবি) প্রতিষ্ঠার সময় এ সংস্থায় ইআরডি তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ইআরডিকে প্রকাশ্যে অভিযুক্ত করেন।
রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরে যেতে হয়। ওএসডি করা হয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমকে, যাকে অর্থমন্ত্রী ‘নির্দোষ’ ঘোষণা করেছিলেন। তাকে ওএসডি করা হয় অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়াই। তার জায়গায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য ইউনুসুর রহমানকে নতুন ব্যাংকিং সচিব করার বিষয়টিও অর্থমন্ত্রী আগে থেকে জানতেন না বলে গুঞ্জন আছে।
সূত্র জানায়, ড. আতিউরকে সরে যেতে গ্রিন সিগনাল দেয়া ছাড়া সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কোনো উপায় ছিল না। আবার তাকে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আচরণ ভালোভাবে নেয়া হয়নি। ফলে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রীকে এড়িয়ে নেয়া হয়েছে।
আসছে জুনে বসছে বাজেট অধিবেশন। জুনের প্রথম সপ্তাহে সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট প্রণয়নে এনবিআর ও ইআরডির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এই দুই সংস্থার প্রধানের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্ক বাজেটের কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। এই বিষয়টি নিয়েও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রী চাইছেন তার কাজের সুবিধার্থে অতিসত্বর এই দুই সংস্থার দুই শীর্ষ পদে রদবদল হোক।