সুনামগঞ্জে ২৮ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার!

8ডেস্ক রিপোর্ট :: সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের পাশে মিছাখালী নদীতে রাবার ড্যামের (সেতুসহ) নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আঙ্গারুলি হাওরের সাত হাজার হেক্টর জমি সেচসুবিধার আওতায় আসবে।

এলাকাবাসী জানায়, ৩ মার্চ সেতুর ১১ মিটার দীর্ঘ একটি স্প্যানের ঢালাই দেওয়া শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে তা ধসে পড়ে। এতে ছয়জন শ্রমিক আহত হন। এই পরিস্থিতিতে কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করে। স্থানীয় লোকজন প্রকল্প পরিচালকের কাছেও কাজের অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেন। একই বিষয়ে ৭ মার্চ উপজেলা সদরে মানববন্ধন শেষে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে বলা হয়, শুরু থেকেই বাঁধ নির্মাণকাজে নিম্নমানের বালু, পাথর, রড, সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীতীরে যেসব ব্লক বসানো হয়েছে, সেগুলোও নিম্নমানের।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্র জানায়, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বিএডিসি মিছাখালী নদীতে ২২০ মিটার দীর্ঘ রাবার ড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাবার ব্যাগ ও শিপ পাইল বাদে বাকি সরঞ্জাম কিনতে ২১ কোটি ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৯ টাকায় ঢাকার মেসার্স কেবিআই-এমএমকে জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগামী মে মাসে এ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের দুটি পাটাতনের ঢালাইয়ের কাজ এখনো বাকি। ঢালাই দেওয়ার সময় যে পাটাতনটি ভেঙে পড়েছিল, সেটিতে রড বিছানোর কাজ হচ্ছে। নিচে এবং নদীর দুই তীরে ব্লক বসানো হচ্ছে, মাটি ফেলা হচ্ছে। সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ হয়নি। রেলিংয়ের কাজও হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সাত্তার, মরম আলী ও লুৎফুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর দাবির মুখে কিছু ব্লক বদলানো হয়েছে। কাজ যদি ভালোই হতো, তাহলে ব্লক বদলানো হলো কেন? ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় বিএডিসি তাঁদের কিছু করতে পারছে না। উল্টো প্রতিবাদ করতে গিয়ে এলাকার কিছু লোকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মালিক আবুল কালাম বলেন, স্প্যান ধসে পড়ার কারণ হলো নড়বড়ে বাঁশ ও সাটারিংয়ে ব্যবহার। এলাকাবাসী না বুঝেই অভিযোগ করছে। এখানে নানাজন নানাভাবে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। একজনকে সুবিধা দিলে আরেকজন অখুশি হয়। এ কারণেই এত অভিযোগ।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ফারুক হোসেন ও সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবু আহমেদ মাহমুদুল হাসান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। কাজী ফারুক হোসেন আরও বলেন, গত বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে কিছু ব্লক ভেঙে গিয়েছিল। এ কারণে ব্লক পরিবর্তন করা হয়েছে।