পাঠানটুলায় দুলাভাইয়ের হাতে শ্যালক খুন : নেপথ্যে ঘাতক এনামের বহুগামিতা!
সিলেটে খুনের ঘটনায় আলটিমেটাম ঃ এনামের বহুগামিতা পছন্দ করতেন না স্ত্রী নাজনিন
ডেস্ক রিপোর্টঃ ঘাতক এনামের ভালোবাসার টানে লন্ডন থেকে দেশে এসেছিলেন নাজনিন। সুখের সংসার গড়তে পিতামাতাকে না বলেই এনামের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। কিন্তু বেপরোয়া এনামের কর্মকাণ্ড যখন ধীরে-ধীরে তার কাছে প্রকাশ হতে থাকে তখন তাদের সংসার জীবনে নেমে আসে অশান্তি। পারিবারিক নানা অসঙ্গিতে দেখা দেয় বিরোধ। আর এ বিরোধকে কেন্দ্র করে এনামের হাতেই খুন হলেন নাজনিনের ছোট ভাই আনোয়ার। লন্ডন থেকে আসা নাজনিন ছিলেন এনামের তৃতীয় স্ত্রী। এর আগে এনাম দুবার বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় করেন প্রথম বিয়ে। ওয়ালিমার দিন এনামকে ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। এরপর এনাম বিয়ে করে নগরীর খাসদবির এলাকায়। ওই স্ত্রীর ঘরে এনামের এক সন্তানও রয়েছে। এনামের বহুগামিতার সেই অধ্যায় জানতেন না নাজনিন। না জেনেই দেশে থাকাকালে এনামের সঙ্গে প্রেম করেছিলেন। এরপর মায়ের সঙ্গে নাজনিন চলে যান লন্ডনে। নাজনিন সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকার পল্লবী ৪৩নং বাসার বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে। তাদের মূল বাড়ি ছাতক উপজেলায়। আর এনামুল কবির ওরফে এনাম আহমদ ৩৯ পল্লবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। এনাম ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কখনো কোনো পদ-পদবিতে ছিল না। ছাত্রদল পরিচয় দিয়ে তিনি সহযোগীদের নিয়ে নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতো। এলাকায় এনামের বহুল পরিচিতি। এনাম সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের গাড়িতে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি ছিল। এনামসহ কয়েকজন কয়েক বছর আগে নগরীর সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় কামরানের গাড়িতে হামলা করে। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, এনাম ও নাজনিনের প্রেম শুরু হয় নাজনিন দেশে থাকাকালেই। বিষয়টি জানতো না নাজনিনের পরিবার। প্রায় ৭ বছর আগে মায়ের সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান নাজনিন। লন্ডনে বৈধ হতে তিনি এসাইলাম চান। এনামের সঙ্গেও তার যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় নাজনিন লন্ডনে থাকাকালেই চলে যায় এনামের নানার বাসায়। সেখান থেকে প্রায় ৪ বছর পূর্বে এনামের নানা-নানীর সঙ্গে চলে আসে সিলেটে। এরপর সে পিতামাতাকে না জানিয়েই এনামকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। নাজনিনের বিয়ে মেনে নেয়নি পরিবার। কিন্তু একপর্যায়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ কমে। নাজনিন পিতার বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা করতো। এরই মধ্যে নাজনিন জানতে পারেন এনাম আগেও দুটি বিয়ে করেছে। তার সন্তান রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এনামের সঙ্গে নাজনিনের বিরোধ বাধে। এর বিরোধের অবসান ঘটাতে এনাম একপর্যায়ে ডিভোর্স দেয় আগের স্ত্রীকে। নাজনিনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এনাম ছিল বখাটে। সে এলাকার ক্যাডারদের নিয়ে তার বাসায় আড্ডা জমাতো। বাসায় আড্ডা না করতে নাজনিন নিষেধ দেয়। কিন্তু এনাম তোয়াক্কা করতো না। বহু নারীর সঙ্গেও এনামের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে এনাম বারবার বিয়ে করার হুমকিও দিতে থাকে। সম্প্রতি পারিবারিক বিরোধের কারণে নাজনিনের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন এনাম। আর এ নির্যাতন সইতে না পেরে নাজনিন পিতার বাড়ি না গিয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যান। এ নিয়ে বহুবার হয়েছে বিচার সালিশ। বারবার এনাম নির্যাতন করবে না বলে স্ত্রী নাজনিনকে বাসায় নেয়। কিন্তু কথা দিয়েও সে কথা রাখেনি। সর্বশেষ গেল সপ্তাহে একরাতে এনাম তার স্ত্রী নাজনিনকে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এ নির্যাতনের কথা শুনে নাজনিনের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বোনের বাসায় যায়। বোনকে মারধর করতে দেখে আনোয়ারও দুলাভাই এনামের ওপর চড়াও হয়। আনোয়ার এনামকে ওই দিন মারধর করে বোন নাজনিনকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। এ ঘটনার পর থেকে শ্যালক আনোয়ারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এনাম। গেল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ওই বিরোধের জের ধরে আনোয়ারকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এনাম। এদিকে আনোয়ার খুনের ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দেয় এলাকায়। খুনের ঘটনার দিন রাত পৌনে চারটায় স্থানীয়রা ঘাতক এনামের বাসা ঘেরাও করে। এ সময় তারা আনোয়ারের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। পুলিশ ওই দিন এনামের পিতামাতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু খুনের ঘটনার চার দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি এনাম। এ নিয়ে ক্ষোভ বেড়েছে এলাকায়। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন মানবজমিনকে জানান, এনামকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাকে খুব শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার করা এনামের স্বজনদের কাছ থেকে তার অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি। খুনের পর থেকে সে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছে না।
সিলেটে আলটিমেটাম: এদিকে পলাতক ঘাতক এনামের গ্রেপ্তার দাবিতে গতকাল বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা বলেন, এনাম চিহ্নিত সন্ত্রাসী। খুনের ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও তাকে গ্রেপ্তার না করা দুঃখজনক। এ সময় তারা খুনি এনামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। বলেন, এই সময়ের মধ্যে এনামকে গ্রেপ্তার না করলে তারা স্মারকলিপিসহ থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন। দক্ষিণ ছাতক উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মুহিবুল আলম। সায়েম আহমদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, সাদিকুর রহমান সাদিক, মুজিবুর রহমান জামদার, আব্দুল রশিদ হিমেল, মাহবুব চৌধুরী, আবু তাহের, জাহেদ আহমদ জাহেদ, লুৎফুর রহমান ও জুবায়ের আহমদ। (মানবজমিন)