এমসি কলেজে সংঘর্ষ : ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Fahad Ahmed
ছবিঃ ফাহাদ আহমেদ

ডেস্ক রিপোর্ট :: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা রুবেল বাদী হয়ে সোমবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন। শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, এ ঘটনায় আটক তাজউদ্দিন ও সাফায়েত হোসেন পুলক নামের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে মঙ্গলবার দুুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার দুুপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শাহীন নামের এক কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ৯৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বলে জানান শাহপরান থানার ওসি নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে আওয়ামী লীগ নেতা সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ গ্রুপের সমর্থক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী অংশের কর্মীরা। সোমবার এই গ্রুপের নেতা সোলায়মান আহমদ চৌধুরী, ছয়েফ আহমদ, গোলাম রহমান সাজনের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে ঢুকে রায়হানের অনুসারীরা। এদিকে আগে থেকেই ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থান করছিল আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা সঞ্জয় চৌধুরী, কামরুল ইসলাম, দেলোয়ার ও টিটু চৌধুরীর অনুসারীরা। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা হাতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় আজাদ অনুসারীরা। কিছু সময় পর দুপুর দেড়টার দিকে আবারো দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে । এ সময় দু’পক্ষই বন্দুক ও শর্টগান ব্যবহার করে বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান। তারা একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। কলেজের ভেতরের বিভিন্ন স্থান থেকে রঞ্জিত গ্রুপের অনুসারীরা আজাদ গ্রুপকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি ছুঁড়ে। একইভাবে টিলাগড় পয়েন্ট, গোপালটিলাসহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে কলেজের ভেতর থাকা রঞ্জিত গ্রুপের অবস্থানে ইটপাটকেল ও গুলি ছুঁড়ে আজাদ অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে টিলাগড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সিলেট তামাবিল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কলেজের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ছুটতে থাকেন।
দুপুর ২টার কিছু পর শাহপরান থানা পুলিশ ফোর্স বাড়িয়ে কলেজের ভেতর অবস্থানে থাকা রঞ্জিত গ্রুপের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়। আজাদ  অনুসারীদের টিলাগড় পয়েন্ট থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা রতন, শাহিন এবং ওমর গুলিবিদ্ধ হলে তাদের ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া দায়ের কোপে আহত হয়েছেন আরও দুজন।
অন্যদিকে, উভয় গ্রুপের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। আজাদ অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী দাবি করেন, বিকাশ নামের তাদের এক কর্মী ক্যম্পাসে গেলে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু ছিনতাইকারী তাকে মারধর করে। এরপর তার সহপাঠীরা গিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এ সময় তাদের গ্রুপের ওমর নামের এক কর্মী গুরুতর আহত হয়।
রঞ্জিত সরকার অনুসারী এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চৌধুরী দাবি করেন, ৭ মার্চের মত একটি ঐতিহাসিক দিনে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসী তাদের উপর হামলা চালায়। তাদের নিক্ষিপ্ত গুলিতে শাহীন ও রতন গুলিবিদ্ধ হয়। শাহীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া রতনের শরীরে দু’দফা অপারেশন করা হয়েছে। সঞ্জয় বলেন, যারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে তারা ছাত্রলীগ হতে পারে না।