অবশেষে অনলাইন নীতিমালা চুড়ান্ত করা হল

Bangladesh-Online-News-Ruleসুরমা টাইমস ডেস্কঃ দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশনের বিধান রেখে চুড়ান্ত হলো অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা। এরই মধ্য দিয়ে সফল হলো বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ্যাসোসিয়েশন (বনপা)’র নীতি গত আন্দোলন । ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল জাতীয় গণমাধ্যম অনলাইন নীতিমালা জাতীয় কমিটির সদস্যগণ।
গত ১৬ মার্চ সোমবার জাতীয় গণমাধ্যম অনলাইন নীতিমালা জাতীয় কমিটির শেষ সভা বাংলাদেশ সচিবালয়ের পিআইডি’র ভিআইপি কনফারেন্স কক্ষে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রণালয়ের প্রধান তথ্য অফিসার তছির আহম্মেদ। সভায় উপস্থিত থেকে অনলাইন নীতিমালার উপর মতামত দিয়ে চুড়ান্ত করণে বক্তব্য রাখেন প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার, বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ্যাসোসিয়েশন (বনপা)’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন, আইএনবি’র সম্পাদক ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ, ভি-নিউজের সম্পাদক জয়ন্ত আচার্য, বিটিআরসির এ্যাসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর জাকির হোসাইন খান,উপ-সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হুসেন প্রমুখ।
কমিটির সদস্যগণ প্রণীত অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার বিভিন্ন ধারা ও উপ-ধারার উপর পর্যায়ক্রমে আলোচনা করেন এবং প্রণীত নীতিমালা সংশোধন ও সংযোজন করে সুপারিশ প্রদান করে তা চুড়ান্ত করেন।
নীতিমালার ৬ ১.৩.৯ ধারায় বলা হয়েছে অশ্লীলতা রোধে অশ্লীল লেখা বা ছবি বা কার্টুন প্রকাশ করলে অথবা সন্ত্রাস কিন্বা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিলে ওই পোর্টাল মালিকের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
০৭. ৫.১.১০ ধারায় বলা হয়েছে ধর্ষণ, ব্যভিচার, নারী ও শিশুর উপর অপরাধমুলক আক্রমণ, নারী ও শিশুদের নিয়ে অবৈধ ব্যবসা, উত্যক্তকরণ, পতিতাবৃত্তি এবং দালালী, বা অশোভন দেহভঙ্গী, দৈহিক মেলা মেশার দৃশ্য সংযোজন এমন তথ্যও উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালার ব্যাপারে কমিটির অন্যতম সদস্য প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, অনলাইন নীতিমালা যুগপোযোগী করা হয়েছে। আমরা সুন্দর একটি নীতিমালা উপহার দিতে পেরেছি। সমালোচকদের সমালোচনা আমাদের অনেক উপকার করেছে। নীতিমালাতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
জাতীয় কমিটির সদস্য বনপা’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন তাঁর বক্তব্যে বলেন ১২ পৃষ্ঠার এই নীতিমালায় বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশনসহ অনলাইন পত্রিকার প্রকাশনার বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি বিজ্ঞাপন ও এ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাওয়াসহ নানান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে অনলাইন মিডিয়ার সম্পাদক সাংবাদিকরা। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা সহায়ক ভুমিকা পালন করবে ।
অন্যতম সদস্য ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ বলেন, নীতিমালা চুড়ান্ত করতে উপ-কমিটি ও জাতীয় কমিটির সদস্যরা যে শ্রম ও মেধা দিয়েছে তাতে সকল সদস্য এ দেশে অনলাইন মিডিয়ার ক্ষেত্রে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা (খসড়া) নীতিমালা-২০১২ ঘোষণা করার পর “বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ্যাসোসিশেন (বনপা)র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন সর্বপ্রথম ওই নীতিমালার বিরোধীতা করে আন্দোলনে ডাক দেন ।
এরই প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর সোমবার বিকেল ৩ টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘‘ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল মিডিয়ার ভূমিকা’’ শীর্ষক কর্মশালা ও মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান । অনুষ্ঠানে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিজয় সফ্টওয়ারের জনক, আনন্দ বাংলা সংবাদ (আবাস)’র চেয়ারম্যান, ও বনপা’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার । উভয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করনে বনপা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শামসুল আলম স্বপন। সার্বিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, কর্মশালার আহ্বায়ক বনপা’র সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হেলাল ।
কর্মশালায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের মতের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেবে না। বনপা’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন সহ-সারা বাংলাদেশের নিউজ পোর্টাল মালিকদের অনুরোধে তথ্যমন্ত্রী অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা (খসড়া) নীতিমালা-২০১২ বাতিল ঘোষণা করেন। ওই কর্মশালায় তিনি জাতীয় গণমাধ্যম অনলাইন নীতিমালা জাতীয় কমিটি গঠনেরও ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বনপা’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ সাহা, সহ-সভাপতি রাজু আহম্মেদ দিপু (ঢাকা), সহ-সভাপতি অধ্যাপক আক্তার চৌধুরী (কক্সবাজার) , সহ-সভাপতি কবি মুহিত চৌধুরী ( সিলেট),সহ-সাধারন সম্পাদক বিজয় ঘোষ ( রাজশাহী ), সেলিম ভান্ডারী ( বাঘমারা,রাজশাহী), শিমুল বিশ্বাস ( খুলনা ), আলী কদর পলাশ ( ঢাকা), সোহেল রেজা ( ময়মনসিংহ ), তারেকউজ্জামান খান ( ঢাকা ) প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সরাসরি রেডিও ব্রডকাষ্ট করেন বনপা’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিডি২৪লাইভ এর এডিটর ইন চীফ আমিরুল ইসলাম আসাদ।
তথ্যমন্ত্রী ২০১২সালের ৫ নভেম্বর ১৪ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় গণমাধ্যম অনলাইন নীতিমালা জাতীয় কমিটি গঠন করেন। এর সদস্য করা হয় তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহম্মেদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান,বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ্ আলমগীর,বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির পরিচালক প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার, বাংলা নিউজ ২৪ ডটকমের এডিটর ইন চীফ, আলমগীর হোসেন,প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপক বিডিনিউজ ২৪ ডটকম, বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ্যাসোসিয়েশন (বনপা)’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন,সভাপতি বিডিবিএল এ,এক,এম,ফাহিম মাসরুর, পিটিবি নিউজ ডটকমের সম্পাদক আশীষ কুমার দে, আইএনবি’র প্রধান সম্পাদক ব্যারিষ্টার জাকির আহম্মেদ, ভিনিউজ বিডিটকমের সম্পাদক জয়ন্ত আচার্য, বিএফইউজের সহ-সভাপতি ড.উৎপল কুমার সরকার,আইসিটি জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতিকে।
১৪ সদস্যের মধ্যে বাংলা নিউজ ২৪ ডটকমের এডিটর ইন চীফ, আলমগীর হোসেন কোন দিনই মিটিং-এ উপস্থিত হননি। উপরন্তু তিনি সময়ে সময়ে নিউজ পোর্টাল মালিকদের সার্থ-পরিপন্থি বিষয় তুলে ধরে পত্র পাঠিয়ে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি অপ-প্রয়াস চালিয়েছেন।
এ দিকে তথ্যমন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির পরিচালক মোস্তাফা জব্বারকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যে বিশিষ্ট অনলাইন গণমাধ্যম সহায়ক খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন উপ-কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি ৬টি সভার পর অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা খসড়া চুড়ান্ত করে তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়।
এ দিকে অনলাইন গণমাধ্যম সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ণের কাজ চলা কালীন সময় জামায়াত-বিএনপি-পন্থী মিডিয়াগুলো সরকার বিরোধী উস্কানীমুলক রিপোর্ট প্রকাশ অব্যাহত রাখে। মিথ্যা ইস্যু নিয়ে সরকারকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে হীন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করে চক্রটি। এ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা উপ-কমিটির পধান প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার এবং বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টালএসোসিয়েশন-(বনপা)’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন ও বনপা’র সকল সদস্য।
গত ৭ জানুয়রি বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৫ আহ্বায়ক মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের উপ-কমিটি কর্তৃক প্রণীত জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম খসড়া নীতিমালা- ২০১৫ উপস্থাপন করা হয়।
পরদিন জামায়তাপন্থী কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ার খবরে বলা হয়, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১২ শীর্ষক এই খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশের জন্য লাইসেন্স নেয়ার সময় ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে এককালীন ৫ লাখ টাকা (আবার কোন কোন মিডিয়ায় বলা হয় ২ লাখ) তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। প্রতিবছর ৫০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে। লাইসেন্স নবায়ন ফি পুনর্র্নিধারণের সুযোগ থাকবে সরকারের। অথচ এ সম্পর্কিত কোন আলোচনাই ওই সভায় হয়নি বলে দাবি করেন প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার ও বনপা’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন। তারা বলেন, অনলাইন মিডিয়ার রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারকে কোন টাকা-পয়সা দিতে হবে না বলে অনুমোদিত খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্ত ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে।