আবেগের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ

GALLARY20160306120917ক্রীড়া প্রতিবেদক :: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ফেসবুকে প্রবেশ করলেই যেন চোখটা জুড়িয়ে যায়। ফেসবুক কিপটে হিসেবে যারা পরিচিত, অথ্যাৎ যারা প্রতিনিয়তই ফেসবুক খোলেন; কিন্তু কারও কোন পোস্ট কিংবা ছবিতে লাইক দেয়ার কষ্টটুকু করতে চান না, তারাও যেন আজ হয়ে উঠেছেন সবচেয়ে বড় লাইকার। জীবনে ফেসবুকে কারও প্রোফাইল পিকচার দেখলেই কেউ কোন কিছু চিন্তা না করে, কার প্রোফাইল পিকচার তাও না দেখে, লাইক দিয়ে বসছেন। যেন লাইকের বন্যা।

একটা কারণেই এই অসম্ভবটা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের কোন এক প্রোগ্রামার বানিয়েছে একটি অ্যাপস। যেখানে ক্লিক করলেই প্রোফাইল পিকচারে যোগ হয়ে যাচ্ছে বিসিবির লোগো এবং বাংলাদেশ। বাংলাদেশি হিসেবে এমন একটি প্রোফাইল পিকচার দেখার পর কার না লাইক দিতে ইচ্ছে করবে!

বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেট আবেগ এখন আর রাস্তায় নেমে দেখার প্রয়োজন হচ্ছে না। ফেসবুকে প্রবেশ করলেই দেখা যাচ্ছে। আবেগের জোয়ারে কেমন ভেসে যেতে পারি আমরা সেটার প্রমাণ দিতে সম্ভবত আর কিছু প্রমাণের বাকি থাকলো না। কোন কোন ফেসবুক ইউজার তো মজা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার নভোজিৎ সিং সিধু এবং পাকিস্তানের রমিজ রাজার ছবির ওপরেই অ্যাপসটার প্রয়োগ ঘটিয়ে দিয়েছেন। যাতে মনে হচ্ছে, তারাও আজ বাংলাদেশের সমর্থক।

আর দুই ঘণ্টাও বাকি নেই। এরপরই শুরু হয়ে যাবে মাশরাফি-ধোনিদের লড়াই। এশিয়া কাপের ফাইনাল, সুতরাং, ঢাকা যেন উত্তেজনায় ফুটছে সকাল থেকেই। ফাইনালে জয়ের মুকুট শেষ পর্যন্ত কার মাথায় উঠবে এই নিয়ে একাকার হয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ। মাশরাফিদের সাফল্য কামনায় প্রার্থণার হাতও উঠছে দেশজুড়ে। সবচেয়ে বড় কথা, আরেকটি এশিয়া কাপের ফাইনালে শিরোপা লড়াইয়ে নামার আগে যেন আবেগে ভেসে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আবেগটা তৈরী হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই। হিসাবটা ছিল, পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই ফাইনাল নিশ্চিত। সুতরাং, মাশরাফিদের সামনে এটা ছিল সেমিফাইনাল। ওই ম্যাচেই আবেগের দেয়াল ভেঙে সারা দেশের মানুষ বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল। চার বছর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২ রানে হেরে যে কান্না কাঁদতে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে, তার প্রতিশোধ তুলে নেয়ার উল্লাসটা যেন বাঁধই ভেঙেছিল ওইদিন।

এবার বিশ্ব ক্রিকেটের মোড়ল হিসেবে পরিচিত ভারতের মুখোমুখি। মাশরাফিরা যদি শিরোপা জিততে পারে, তবে পরাশক্তিবধের ষোলকলা পূর্ণ হবে, একই সঙ্গে গত দেড় বছর ধরে চলা বাংলাদেশের ক্রিকটে সাফল্যও যেন একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে যাবে। সুতরাং, ভারতের বিপক্ষে মাঠে খেলবে ১১ বাঘ, পেছনে থাকবে পুরো বাংলাদেশ।

মাঠের বাইরের ক্রিকেট যুদ্ধের চিত্রটা অনেক বেশি আবেগপূর্ণ ও উত্তেজনাময়। মাঠের ভিতরে মাশরাফিরা ভারত বধ করবেন, না কি ভারত মাশরাফিদের- এ আলোচনার অন্ত নেই। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আজকের খেলা নিয়ে অনবরত বাকযুদ্ধ ঘটে চলেছে দু’দেশের মধ্যে। ফাইনালে ওঠার পর থেকেই তেতে রয়েছেন মাশরাফি-তামিমরা।

যেভাবে এশিয়া কাপ থেকে পাকিস্তান এবং শ্রীলংকাকে একেবারে মাঠের বাইরে ছুড়ে ফেলে দিল, তা প্রশংসনীয়। যদিও এই আসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য আবেগের জোয়ারে ভাসতে চান না মাশরাফিরা। বরং অনেক বেশি কুল থেকে মাঠের ভিতরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। কারণ প্রতিপক্ষ যে ভারত! বাঘেরা জানাচ্ছেন, সচেতন, সাবধান ঠিকই, কিন্তু ভয় নয়, বুক চিতিয়েই ধোনিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন তারা। ধোনির তিন অস্ত্রকে (বুমরা, নেহরা, অশ্বিন) সামলানোর জন্য ইতিমধ্যেই কৌশল তৈরি করে ফেলেছে টাইগাররা।

সঙ্গে সারা ঢাকা জুড়ে এখন একটাই স্লোগান- পাকিস্তান গেছে, শ্রীলঙ্কা গেছে, এবার ভারতের পালা। ২০১২-র এশিয়া কাপে এই শের-ই-বাংলা স্টে়ডিয়ামেই ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আজ তার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে বাঘেরা, নাকি এবার সেই হারের বদলা নেবে ভারত! জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুক্ষণ!