রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ তারাপুর চা-বাগান থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার :: সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেছেন, রাগীব আলী কর্তৃক সরকারের থেকে ক্ষতিপূরণ বাবত ৩০,৭৬,১৮৯.২০ টাকা উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত। এই আদেশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে আইনানুগ সেবায়েতের অনুপস্থিতে উক্ত দেবীর নামে নির্ধারিত একাউন্টে উত্তোলিত টাকা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। একই সঙ্গে তারাপুর চা বাগান থেকে রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দেন আদালত। চা-বাগানে আবাসিক প্রকল্প এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে সম্পত্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, এ বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ ১৭টি (সতের) নির্দেশ দিয়ে রায় প্রদান করেছেন।
সুত্র জানিয়েছে, রাগীব আলীর পুত্র আব্দুল হাইয়ের দায়েরকৃত এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চার বিচারক যথাক্রমে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ১২ জানুয়ারী ও ১৯ জানুয়ারী শুনানী শেষে ১৯ জানুয়ারী বহুল আলোচিত এ রিটের রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বলা হয়েছে, তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে কোনভাবে সেবায়েত বা সেবায়েতের মনোয়নীত ব্যক্তি কর্তৃক স্থানান্তরিত হতে পারবে না। অভিযুক্ত সেবায়েত কর্তৃক ৯৯ বছরের জন্য তারাপুর চা বাগানকে স্থানান্তর বা লীজ প্রদান করা সম্পূর্ণ ভাবে আইন বিরুদ্ধ। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক (ট্রাস্টের) দেবীর মূর্তি প্রথম স্থাপিত জায়গায় স্থাপিত হবে। যদি তা ইতিমধ্যে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। রিট আবেদনকারী আব্দুল হাই ও রাগীব আলীকে তারাপুর চা বাগানের খালি জায়গায় দেবী মোতায়েনের কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করতে আদেশে বলা হয়।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, তারাপুর চা বাগানে নির্মিত সব অবকাঠামো ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে অপসারণ করে সে জায়গায় চা বাগান করার আদেশ দেওয়া হয়। রিট আবেদনকারীরা যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তখন পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নিয়ে অপসারণ করবেন। এ বাবতে ব্যয়িত অর্থ জেলা প্রশাসক রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন।
আপিল বিভাগের ওই রায়ে সেবায়েতের অনুপস্থিতিতে সিলেট শহরের ১০ (দশ) জন নেতৃস্থানীয় সেবায়েত বা পুরোহিতের পরামর্শক্রমে সেবায়েত নিয়োগ দানের জন্য বলা হয়েছে। রিট আবেদনের ১০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত চা রপ্তানী বাবত আয়ের ৫ কোটি টাকা সেবায়েতের কাছে ফেরত দানের নির্দেশ দেয়া হয়।
আপিল বিভাগ উপরোক্ত রায়ে সিলেটের জেলা প্রশাসককেও কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জেলা প্রশাসক আপিল বিভাগে প্রদত্ত রায়ের আদেশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবেন। রিট আবেদনকারীরা যদি এ আদেশ না মানে সে ক্ষেত্রে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। উপযুক্ত জায়গায় মেডিকেল কলেজটিকে স্থানান্তর করবেন। রিট আবেদনকারীদের সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করবেন এবং মেডিকেল কলেজের জন্য সাময়িক লীজ নেয়ার জন্য অর্থ প্রয়োজনে এই সব জব্দকৃত একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। রিট আবেদনকারীরা যদি চা বাগান পুন:নির্মাণে ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক একটি কমিটি গঠন করে এ কাজটি সম্পন্ন করবেন। এ বাবতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে আদায় করবেন। একই সাথে কোতোয়ালী থানার ১১৭ নং মামলাটি চালু করার জন্য নির্দেশ করা হয়।