বড় বোন পালিয়ে যাওয়ার প্রতিশোধ -জৈন্তাপুরে পাত্র সম্প্রদায়ের কিশোরীকে জোর করে বিয়ে
স্টাফ রিপোর্টার :: জৈন্তাপুরে পাত্র সম্প্রদায়ের অসহায় পরিবারের এক নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে করেছেন এক যুবক। বড় বোন পালিয়ে যাওয়ার জের ধরে ১৩ বছর বয়সের ছোট বোন ববিতাকে জোর করে বিয়ে করেছে ৩৫ ঊর্ধ্ব মলিন পাত্র। যে বয়সে গ্রামের সমবয়সিদের সাথে খেলা করার কথা ববিতার, সেই বয়সেই জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করলেন মলিন পাত্র। ছেলে পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরোদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের জরেন পাত্রের ২য় কন্যা মমতা পাত্রের সঙ্গে গত সোমবার ঠাকুরেরমাটি গ্রামের ধনাই পাত্রের পুত্র মলিন পাত্রের মঙ্গলাচরণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে মমতা পাত্র প্রেমিকের হাত ধরে অজানার উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি জমান। এতে বর পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে মমতার মা-বাবাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে চাপ সৃষ্টি করে। তারা বলেন, টাকা দিতে না পারলে ছোট মেয়ে ববিতাকে ঐ বরের সাথে বিয়ে দিতে হবে। এতে অসহায় মা-বাবা উপায়ন্তর না দেখে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন। সোমবার শেষরাতে মলিন পাত্র ববিতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক অপহরণ করে নগরীর বালুচরস্থ দুর্গামন্দিরে নিয়ে আসে। এখানে রাতের আঁধারে মেয়ে নিয়ে বিবাহ করতে আসায় স্থানীয়দের মধ্যে নানা কৌতূহল দেখা দেয়।
খবর পেয়ে শাহপরাণ থানাপুলিশ মলিন পাত্র ও ববিতাকে বাল্যবিয়ের অভিযোগে মন্দির এলাকা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু শাহপরাণ থানাপুলিশ পরে দুজনকে চিকগনাগুল ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা অনীতা পাত্র ও ইউপি সদস্য আব্দুল মোছব্বিরের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরেরমাটি গ্রামে মলিন পাত্রের বাড়িতে ইউপি সদস্যা অনীতা পাত্রের উপস্থিতিতে মলিন ও ববিতার বিবাহ সম্পন্ন হয় বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, মেয়েটি নাবালিকা নয় এবং উভয় পক্ষের লোকজন আসার পর তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো লিখিত রাখা হয়নি।
চিকগনাগুল ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা অনীতা পাত্রের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত কাল মঙ্গলবার মেয়েটির বিয়ে হয়েছে।
ইউপি সদস্য আব্দুল মোছব্বির জানান মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক নয়, শাহপরাণ থানায় ওসির কাছে মেয়েটি বলেছে তার বয়স ১৮ বছর। তবে এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তখন ওসি আমাদের বলেন, আপনারা আপদ নিয়ে বিদায় হোন। কোনো জিম্মানামা ছাড়াই দুজনকে শাহপরাণ থানাপুলিশ ছেড়ে দিয়েছে ।
এ ব্যাপারে চিকগনাগুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকারিয়া আহমদ গতকাল রাত সোয়া নয়টায় জানান, আমি মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য ঠাকুরে মাটি গ্রামে পৌঁছেছি।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিজ-এর সিলেট শাখার প্রতিনিধি রাকেশ রায় এ ব্যাপারে জানান, দুর্গাবাড়িতে মেয়েটির বিয়ে হয়নি। পুলিশ বিয়ে ভেঙে দিয়ে তাদের থানায় নিয়ে যায়। পরে মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানিয়েছেন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সিলেট জেলার সভাপতি রীনা কর্মকার জানান, মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করে তার
মা-বাবার হাতে তুলে দিতে হবে এবং তার বয়স পরিপূর্ণ হয়েছে কি না তা সঠিক যাচাইবাছাই করে স্পষ্ট করতে হবে।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খালেদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। মেয়েটি যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তবে তাঁর হেফাজতে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছি।
রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নাবালিকা মেয়েটি উদ্ধার হওয়ার খবর বলে পাওয়া যায়নি।