সিলেট রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক-আইনজীবী সহকারীদের রশি টানাটানি

 2ডেস্ক রির্পোট :: সিলেট রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখা নিয়ে দলিল লেখক ও আইনজীবী সহকারীদের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। ইতোপূর্বে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। চলছে একে অন্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ চালাচালি। গতকাল সোমবারও দুপক্ষ আলাদা-আলাদাভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন, একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। মূলত, তাদের এই বিরোধ রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সিলেট সদর রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিনি দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন দলিল রেজিস্ট্রি করাতে। নিয়ম হচ্ছে, এখানে একটি নির্ধারিত ফি দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করা। কিন্তু এখানে একটি দলিল সিন্ডিকেট আছে। অভিযোগ রয়েছে, এরা ফি’র বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে দলিল লেখা থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রি করার ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন। প্রচলিত আছে, এখানে নাকি লিস্ট ধরে নিচু থেকে উপরে সবাই ঘুষ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, রেজিস্ট্রি অফিসে একটি হেবা দলিল ফি মাত্র ৮ শ টাকা। কিন্তু সেখানে এই ঘুষ চক্র শতকরা হারে টাকা নিচ্ছে, যা নিয়মবহির্ভূত। শুধু তাই-ই নয়, বর্তমানে দুদক অফিসে জাল দলিল ও জাল পাওয়ারের মামলা বাড়ছে। এই দলিল জালিয়াতিতেও এখানকার একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে।
চলমান বিরোধ সম্পর্কে জানা গেল, সম্প্রতি ভুক্তভোগী মানুষজন দলিল লেখকদের কাছে যেতে অনাগ্রহ করে থাকেন। কেননা, সেখানে বাড়তি টাকা গুনতে হয়, সঙ্গে দিনের পর দিন দলিলের কাজের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। তাই এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে অনেকেই সরাসরি আইনজীবী সহকারীদের দিয়ে দলিল লেখা, রেজিস্ট্রির কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এতে টাকা কম লাগায় দিন দিন দলিল লেখার সিন্ডিকেট থেকে মানুষ বাড়িয়ে আসছে। ফলে দলিল লেখকরা আইনজীবী সহকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সংঘর্ষ বাঁধে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তারা মুখোমুখি অবস্থানে আছেন।
আইনজীবী সহকারীদের অভিযোগ, সিলেট রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক মুহিবুর রহমান জিলু, মইন উদ্দিন সায়েকরা মিলে একটি সিন্ডিকেট করেছেন। তারা মানুষকে জিম্মি করে ঘুষ-দুর্নীতি করে থাকেন। আইনজীবী সহকারীরা নির্দিষ্ট ফি’র বাইরে কোনো টাকা নেন না। মানুষকে হয়রানি না করেই তার কাজ করে দেন। দলিল লেখকেরা রেজিস্ট্রি অফিসের ওপরের স্তর থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েই ম্যানেজ করে কাজ করেন। তাই রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি থামছেই না।
আবার দলিল লেখকদের অভিযোগ, আইনজীবী সহকারীরা আইনজীবীদের সঙ্গে থাকবেন। তারা রেজিস্ট্রি অফিসে আসবেন না। কারণ, দলিল লেখকদের লাইসেন্স আছে, তাদের তা নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন আফাজ বলেন,‘ ওরা (দলিল লেখক) মানুষকে জিম্মি করে টাকা নেন। সামান্য টাকায় কাজ করে দিই। এতে তাদের মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। আর রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়ার অনুমতি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আমরা নিয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে  সিলেট সদর দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান সায়েক বলেন,‘ দলিল সংক্রান্ত কাজের জন্য আমরা লাইসেন্সপ্রাপ্ত। কিন্তু অতীতেও আইনজীবী সহকারীরা এখানে এসে আমাদের কাজটি করতে গিয়ে মামলামোকদ্দমায় জড়িয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো বিরোধ চলে আসছে। আমরা চাই আইনজীবী সহকারীরা আদালত পর্যন্ত থাকবেন, রেজিস্ট্রি অফিসে আসবেন না।’